Posts

Showing posts from 2024

হিন্দুত্ব বনাম হিন্দুইজম: ধর্ম নাকি জীবনদর্শন?

হিন্দু কি একটি মতবাদ ? হিন্দু শব্দের প্রকৃত ব্যাখ্যা কী ? হিন্দু ও হিন্দুইজম কি সমার্থক ? সম্প্রতি , এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধান করা হয়েছে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড হিন্দু কংগ্রেস’-এর বার্ষিক সম্মেলনে। ২৪-২৬ নভেম্বর , ২০২৩-এ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে ৬১টি দেশ থেকে ২ , ০০০-এরও বেশি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব , সংগঠন ও প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন । এই বিশ্ব হিন্দু সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা গৃহীত হয় , যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘হিন্দুইজম’ ( Hinduism) শব্দকে বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং এর পরিবর্তে ‘হিন্দুত্ব’ ( Hindutva) ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়। এখন থেকে , ‘ হিন্দুত্ব’ হবে বিশ্বের ১০০টি দেশে বসবাসরত ১২০ কোটির বেশি মানুষের জীবনদর্শনের প্রতীক , যা সকলের সংস্থান ও সহাবস্থানকে সুনিশ্চিত করে । হিন্দুত্ব: জীবনদর্শন নাকি মতবাদ ? ‘ হিন্দুত্ব’ নতুন কোনও ধারণা নয়। যখন থেকে হিন্দু জাতির উৎপত্তি , তখন থেকেই ‘হিন্দুত্ব’ বিদ্যমান। এটি হিন্দুদের বৈশিষ্ট্যগত ভাব , যেমন মানুষের মনুষ্যত্ব , দেবতার দেবত্ব। এটি ‘হিন্দুনেস’ ( Hinduness) নামে পরিচিত হতে পারে , তবে ‘হিন্দুইজম’ কখনওই নয় । ‘ হিন...

ওপেনহাইমার: এক বিস্ময়কর প্রতিভার দ্বন্দ্ব

Image
রবার্ট ওপেনহাইমার ছিলেন এক অসামান্য প্রতিভাধর বিজ্ঞানী। তাঁর অবদান কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ হলেও , তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন পরমাণু বোমা তৈরির নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকার ম্যানহাটন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বেই তৈরি পরমাণু বোমা ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত হয় । জ্ঞানসাধনা ও বহুমুখী কৌতূহল ওপেনহাইমার ছিলেন বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী। বিজ্ঞানের পাশাপাশি দর্শন , সাহিত্য ও আধ্যাত্মিকতায়ও ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। কার্ল মার্কস , সিগমন্ড ফ্রয়েড , ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা — এসব বিষয়েও তাঁর গভীর অধ্যয়ন ছিল। তিনি সংস্কৃত ভাষা শিখে মূল ভাষায় ভগবদগীতা পড়েছিলেন। তাঁর জীবনদর্শনের গঠনে ভগবদগীতা ও শার্ল বোদলেয়ারের ‘দ্য ফ্লাওয়ারস অফ ইভিল’ বই দুটি বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল । বিজ্ঞানী , কবি ও দার্শনিক ওপেনহাইমার সম্পর্কে বলা হয় , তিনি ছিলেন একজন ‘ scientist who writes like a poet, and speaks like a prophet’ । সূক্ষ্ম সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। তিনি বোদলেয়ারের কবিতা ফরাসি ভাষায় এবং ভগবদগীত...

দুই পাখি: মানবজীবনের দ্বৈত রূপ

Image
মানুষ চিরকাল পাখি দেখে মুগ্ধ হয়েছে। পাখিরা শূন্যে আকাশের উঁচুতে উড়ে বেড়ায় , যেখানে নীচের পঙ্কিলতা তাদের স্পর্শ করতে পারে না। আকাশে পাখিদের এই অবাধ বিচরণ দেখে মানুষ আধ্যাত্মিক জগতের ধারণা পেয়েছে। মনে হয়েছে , পাখি যেন কোনও আধ্যাত্মিক সত্তার দূত বা প্রতিনিধি। বাংলার সংস্কৃতিতে এক বিমূর্ত পাখির কল্পনা রয়েছে , যাকে লালন সাঁই বলেছেন ‘অচিন পাখি’। এই অচিন পাখি পরিচয়হীন। মানুষের দেহসংশ্লিষ্ট পরিচয় — ধর্ম , জাত , বর্ণ , লিঙ্গ , কুল , নাম ইত্যাদির সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। তাই একে চেনার কোনও উপায় নেই। এই পাখি মানুষের চৈতন্য বা আত্মার প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় ‘দুই পাখি’র কথা বলেছেন — খাঁচার পাখি এবং বনের পাখি। খাঁচার পাখি দেহধারী ; তার বাস দেহরূপ খাঁচায়। আর বনের পাখি বাস করে অসীম আকাশে। খাঁচার পাখি সংসারের শৃঙ্খলে বাঁধা , আর বনের পাখি সংসারের বন্ধনমুক্ত। উপনিষদেও দুই পাখির উল্লেখ আছে — ‘দুটি পাখি পরস্পর যুক্ত ও সখ্যভাবাপন্ন হয়ে এক বৃক্ষ আশ্রয় করে আছে। তাদের মধ্যে একটি স্বাদু ফল ভক্ষণ করে , আর অন্যটি ভোজন না করে শুধু দেখে।’ এখানে জীবাত্মা ও পরমাত্মার তুলনা করা হয়েছে। জীবাত্ম...