Posts

Showing posts with the label প্রকৃতি

ওপেনহাইমার, পরমাণু শক্তির বন্ধনমুক্তি ও উভয়সংকট

Image
ওপেনহাইমার ছিলেন অসামান্য প্রতিভাধর বিজ্ঞানী । কর্মজীবন জুড়ে, তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন । তৎসত্ত্বেও, তিনি সব চেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন পরমাণু বোমা তৈরিতে তাঁর অবদানের জন্য । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার পরমাণু বোমা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন তিনি । তাঁর পরিচালনায় বানানো পরমাণু বোমা ফেলা হয় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে । ওপেনহাইমার ছিলেন অনেক বিষয়ে কৌতূহলী একজন মানুষ । পেশাগত বিষয়ের বাইরেও প্রচুর পড়াশোনা করতেন । কার্ল মার্কস, সিগমন্ড ফ্রয়েড, ইন্ডিয়ান স্পিরিচুয়ালিটি, ইত্যাদি নানা বিষয়ে বহু বই তিনি পড়েছেন । এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দুটি বই তাঁর জীবন-দর্শন গঠনে বিরাট অবদান রেখেছে । এর মধ্যে একটি হচ্ছে ভগবদগীতা, আর অন্যটি — ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার রচিত ‘দ্য ফ্লাওয়ারস অফ ইভিল’ (বুদ্ধদেব বসু অনূদিত ‘ক্লেদজ কুসুম’) । ওপেনহাইমার ছিলেন সূক্ষ্ম সৌন্দর্যের উপাসক এবং বহুবিদ্যাবিশারদ প্রতিভাবান ব্যক্তি । তিনি ফরাসি ভাষায় বোদলেয়ার এবং সংস্কৃত ভাষায় ভগবদগীতা পড়েছেন । তাঁর সম্পর্কে বলা হয় — a ‘scientist who writes like a poet, and s

ডারউইন ও ময়ূরপুচ্ছ

Image
জীবজগতে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রাণী বোধ হয় ময়ূর । ময়ূর যখন তার বিচিত্রবর্ণের পাখা মেলে ধরে তখন রুদ্ধশ্বাস বিস্ময়ে না তাকিয়ে পারা যায় না । ময়ূরের সৌন্দর্যের মূল রহস্য তার জমকালো বহুবর্ণা লেজ বা পুচ্ছ । তবে ময়ূরপুচ্ছ সুন্দর হলেও তার দেহের তুলনায় অত্যন্ত ভারী । সম্ভবত গুরুভার লেজের কারণেই ময়ূর পাখি হলেও উড়তে পারে না । লঘুভার টুনটুনি পাখি ময়ূর সম্পর্কে কী বলে তা দেখে নেওয়া যাক রবীন্দ্রনাথের এই কবিতায় — টুনটুনি কহিলেন , ‘ রে ময়ূর , তোকে দেখে করুণায় মোর জল আসে চোখে । ’ ময়ূর কহিল , ‘ বটে! কেন , কহ শুনি , ওগো মহাশয় পক্ষী , ওগো টুনটুনি । ’ টুনটুনি কহে , ‘ এ যে দেখিতে বেআড়া , দেহ তব যত বড়ো পুচ্ছ তারো বাড়া । আমি দেখো লঘুভারে ফিরি দিনরাত , তোমার পশ্চাতে পুচ্ছ বিষম উৎপাত । ’ ময়ূর কহিল , ‘ শোক করিয়ো না মিছে — জেনো ভাই , ভার থাকে গৌরবের পিছে । ’ (ভার < কণিকা) টুনটুনি পাখির মতে, গুরুভার পুচ্ছ ময়ূরের জন্য বিষম উৎপাত বিশেষ । শুধু টুনটুনি পাখি নয়, ময়ূরের পুচ্ছ ভীষণ অপছন্দ করতেন বিবর্তন তত্ত্বের প্রবক্তা চার্লস ডারউইন । তিনি ময়ূরপুচ্ছ এতটাই অপছন্দ করতেন যে, এক বন্ধুকে লেখা চি

গাছের পাতা ও অনিঃশেষ জীবন

Image
গাছের শাখা-প্রশাখা থেকে উদগত সবুজ পাতা গাছের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পাতা গাছের জৈবজীবনে শক্তি যোগায় । গাছের সৌন্দর্য, ছায়াময় স্নিগ্ধতা পাতার অবদান । গাছ পাতাকে জন্ম দেয়, আর পাতা গাছকে দেয় পূর্ণতা । গাছ ও পাতা এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে বাঁধা । এমনকী পাতা ঝরে গেলেও সে-সম্পর্ক বজায় থাকে । পাতার প্রধান কাজ গাছের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা । গাছের পাতায় থাকে সবুজ রঞ্জক পদার্থ ক্লোরফিল বা পত্রহরিৎ যা সূর্যের আলো শোষণ করে । শোষিত আলোকশক্তি ব্যবহার করে জল ও বাতাসের সংশ্লেষে খাদ্য উৎপাদিত হয় । খাদ্য উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও গাছের পাতা স্বল্পায়ু । পরিবেশে বৈরী হলে পাতাকে ঝরে পড়তে হয় । শীতঋতুতে দিন ছোট হয়ে আসে । স্বল্প আলোয় খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না । ফলে পাতার কাজ ফুরিয়ে যায় । তখন গাছ পাতায় সঞ্চিত সবুজ রং সরিয়ে নেয় । আর অমনি, এতদিন সবুজের আড়ালে থাকা অন্যান্য রং নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ পায় । দেখে মনে হয় যেন বড় বড় গাছের পাতায় রঙের উৎসব শুরু হয়েছে । কোনও গাছে লাল , কোনও গাছে হলদে , কোনও গাছে কমলা রঙের মেলা । তবে পত্ররাজির এই বর্ণাঢ্য

বৃক্ষরোপণ

Image
১৯১৩-এর দিকে ফ্রান্সের প্রভেন্স অঞ্চলে এক পর্বতের পার্শ্বদেশে বাস করতেন এক মেষপালক । একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পর তিনি সমতল ভূমির কৃষিজীবন ছেড়ে এই নির্জন পরিত্যক্ত এলাকায় এসে বাস করতে শুরু করেন । এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের মূল পেশা ছিল কাঠকয়লা বিক্রি করা । কাঠকয়লা মানে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি কয়লা । সে জন্য বন থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হত । কালক্রমে এলাকাটি বৃক্ষহীন হয়ে পড়ে । ফলে সেখানকার মাটি হয় অনুর্বর ঊষর আর নিসর্গচিত্র হয় বর্ণহীন । মেষপালক বুঝতে পারলেন, মাটি মরে যাচ্ছে গাছের অভাবে । তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বৃক্ষরোপণ করবেন । প্রতিদিন তিনি ওক গাছের একশোটি বীজ বপন করতে লাগলেন । লোহার স্টিক দিয়ে মাটিতে ছিদ্র করে তাতে বীজ পুঁতে রাখতেন । এই ভাবে তিন বছরে তিনি একা একশো হাজার গাছ লাগান । কালক্রমে তার স্বপ্ন ফলপ্রসূ হয় । সবুজ বনানীতে ছেয়ে যায় গোটা এলাকা, নবজীবন ফিরে পায় ঊষর মাটি । এই অসাধারণ গল্পটি লিখে রেখে গেছেন ফরাসি লেখক জন জিওনো ( Jean Giono ) তাঁর ‘দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ’ বইতে । দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ এই গল্পের সারমর্ম হচ্ছে — বৃক্ষহীনতায় জমি পরিণত হয় বালু