Posts

Showing posts with the label সংগীত

গানের ভিতর দিয়ে

Image
এই বিশ্বজগৎ এক বিশাল বাদ্যযন্ত্র। এমনটিই মনে করতেন খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতকের গ্রীক গণিতবিদ , দার্শনিক ও সংগীততাত্ত্বিক পিথাগোরাস। আর এই বাদ্যযন্ত্র থেকে যে পবিত্র সংগীত সৃষ্টি হয় তাকে বলতেন ‘ মিউজিক অব দ্য স্ফেয়ার ’, বা মণ্ডলা-সংগীত। পিথাগোরাসের কল্পনায় এই বাদ্যযন্ত্র ছিল হার্পজাতীয় তারবাদ্য। যেখানে ‘ স্ট্রিং ’ বা তারে কম্পন তুলে সুর সৃষ্টি করা হত।    একই ধরণের কথা বলেন স্ট্রিং-তত্ত্বের অনুসারী পদার্থবিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি , এই বিশ্বজগৎ হচ্ছে কম্পমান তারের সিম্ফনি বা ঐকতান-সংগীত। স্ট্রিং-তত্ত্ব হচ্ছে বিশ্বজগৎ সৃষ্টির আধুনিকতম তত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূল ধারণা — বিশ্বজগতের সমস্ত বস্তু ও শক্তি এক ধরণের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ‘ স্ট্রিং ’ বা তার দিয়ে গঠিত। সামবেদ-এর সামবিধান ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে , সমস্ত জগৎ সাত সুরের সংগীত প্রবাহে বিধৃত। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব-বীণার কথা বলেছেন , যে বীণার ঝংকারে অনন্ত আকাশের সমস্ত নক্ষত্রলোক ঝংকৃত হয়ে অপূর্ব ‘ নৈঃশব্দ্য-সংগীত ’- এ গাঁথা পড়ছে। পারস্যের সুফি মরমী কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি বলতেন , আমরা এমন এক জায়গায় এসে পড়েছি যেখানে সবকিছুই সংগীত। আকাশ ভরে আছে সুরে সু

নৈঃশব্দ্য সংগীত

মানুষ যে ভাষায় কথা বলে তা সংকীর্ণ অর্থের গন্ডিতে বাঁধা । এই ভাষা মানব মনের গভীরতর আবেগ - অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম নয় । ‘ ভালবাসি ’ শব্দটির কথাই ধরা যাক । আমরা ফুল ভালবাসি , প্রিয়জনকে ভালবাসি , ঈশ্বরকেও ভালবাসি । কিন্তু সব ভালবাসা কি একরকম হয় ? ভালবাসার মাত্রা প্রকাশ করতে আমরা ‘ বেশি ’, ‘ আরও বেশি ’, ‘ সবচেয়ে বেশি ’ ইত্যাদি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে থাকি । কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভালবাসা প্রকাশের ভাষা আমাদের শব্দভাণ্ডারে নেই । ভাষার এই সীমাবদ্ধতা কিছুটা অপসারিত হয় যখন ভাষার সঙ্গে যুক্ত হয় ছন্দ ও সুর ; সৃষ্টি হয় কবিতা ও গান । পৃথিবীতে ছন্দ - সুর প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল মহর্ষি বাল্মীকির বেদনায় বিদারিত অন্তরে । তখন তিনি বলেছিলেন , ‘ মানবের জীর্ণ বাক্যে মোর ছন্দ দিবে নব সুর , অর্থের বন্ধন হতে নিয়ে তারে যাবে কিছু দূর । ’ মানুষের ভাষা অর্থের বন্ধনে বাঁধা । ভাষাকে ধরাবাঁধা অর্থের বন্ধন হতে মুক্ত করে নতুনতর অর্থ প্রদানের উদ্দেশ্যেই ভাষার সঙ্গে যুক্ত হয় সুর । বাণী ও সুরের মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয় গান । বাণী ও সুরের ডানায় ভর করে মনের ভাব পায় আরও কিছুদূর উড়িবার আকাশ । তবে বাণী

আরোগ্য সংগীত

Image
বহুকাল আগেই মানুষ জেনেছিল সংগীতের নিরাময় ক্ষমতার কথা । প্রাচীন গ্রিক ও মিশরীয় চিকিৎসকরা বাঁশি বা তারের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে রোগীর চিকিৎসা করত । প্রাচীন ভারতে রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হতো কন্ঠধ্বনি — একই সুরে বাঁধা শব্দগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি বা ‘ চ্যান্টিং ’ । বাংলায় সাপে কাটা রোগীর বিষ নামানোর সময় ওঝা ব্যবহার করত ঢাকের বাদ্য ও ‍‍‌আদিরসাত্মক গান। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নিরাময়ে সংগীতের কার্যকারতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয় ফ্রান্স , আমেরিকা ও রাশিয়ায় । গবেষণায় দেখা যায় , সংগীত রক্তচাপ কমায় , হৃৎপিন্ডের কার্ডিয়াক আউটপুট বাড়ায় , পালস-রেট কমায় এবং সাধারণত দেহের ‘প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’-এর কাজে সহায়তা করে। বলা বাহুল্য , সংগীত যিনি করেন এবং যিনি শোনেন , উভয়েরই সুস্বাস্থ্য ও নিরাময়ে অবদান রাখতে পারে সংগীত। আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মিউজিক থেরাপি নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। যে সংগীত একদিন ছিল নিরাময়-কলা , তা আজ ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে নিরাময়-বিজ্ঞান। গড়ে উঠছে নতুন নতুন তত্ত্বভাবনা , আর সেগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে মিউজিক থেরাপির বিভিন্ন পদ্ধতি। কেউ মনে করছেন , শুধুই বাদ্যবাজনা অর্থাৎ যন

শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের খেলা

সংগীত — সে তো শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের খেলা। তুমি রচ শব্দ , আমি রচি নৈঃশব্দ্য । তোমায় আমায় মিলে এমনি চিরকাল বহে সুরধারা। ✍ অসীম দে গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা