মাটির প্রদীপ
মাটির প্রদীপ আমাদের সংস্কৃতিতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পূজার্চনা , মঙ্গলকামনা , কিংবা শ্রদ্ধা জানাতে মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রদীপের মাটির অংশটি পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব করে , আর শিখাটি দেবলোকের। গ্রীক পুরাণের প্রমিথিউস দেবলোক থেকে আগুন চুরি করে মর্তের মানুষকে উপহার দিয়েছিলেন , এই আগুন দেবলোকের ধন। আগুনের শিখা সবসময় ঊর্ধ্বাভিমুখী , এক দিব্যসত্তার প্রতীক। মাটির প্রদীপ রবীন্দ্রনাথের গানে আছে — ‘আমার এই দেহখানি তুলে ধরো , তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো’। মাটির প্রদীপ মানবদেহের প্রতীক ; বৃষ্টির জল আর মাটি দিয়ে তৈরি হয় মানুষের দেহ , আর দেবলোকের আগুনে প্রাণের প্রদীপ জ্বেলে মানুষ পৃথিবীতে আসে। মানুষের দেহ এই পৃথিবীর , কিন্তু প্রাণের শিখাটি দেবলোকের। এই পার্থিব দেহ ও ঐশী শিখার সম্মিলনে মানুষ সৃষ্টি হয়। প্রতিটি মানুষ যেন এক-একটি মাটির প্রদীপ — নশ্বর কাদামাটির আধারে অবিনশ্বর আগুনের চৈতন্যশিখা। এই চৈতন্যশিখাকে কেউ বলেন চৈতন্য , কেউ বলেন আত্মা , বাউল সাধকরা বলেন ‘অধর মানুষ’। জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষের দেহে প্রদীপ্ত প্রাণের একই চৈতন্যশিখা