Posts

প্রশ্ন–উত্তর–প্রশ্ন

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ত্রুটি হল, এখানে যে বেশি জানে সে প্রশ্ন করে, আর যে কম জানে সে উত্তর দেয়। শিক্ষক প্রশ্ন করে আর ছাত্র উত্তর দেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের প্রশ্ন করতে শেখানো হয় না; শেখানো হয়, কি করে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে প্রশ্ন করার সহজাত ক্ষমতা নিয়ে, প্রশ্ন করার মধ্য দিয়েই সে পৃথিবীকে জানতে চায়। অজস্র প্রশ্ন দিয়ে পিতামাতাকে অতিষ্ঠ করে তুলে। পরবর্তীতে, ধীরে ধীরে যতই সে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে, ততই প্রশ্ন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। অবশেষে, যখন সে সাফল্যের সহিত পাঠ্যক্রম সমাপ্ত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তার আর কোনও প্রশ্ন থাকে না, যেন সব প্রশ্নের উত্তর সে ইতিমধ্যে জেনে গেছে। একটি প্রশ্নের উত্তর যে আরেকটি প্রশ্ন দিয়ে করা যায়, এবং প্রশ্নের উত্তরের উপরও যে প্রশ্ন করা যায়, সে কথাটা একদম শেখানো হয় না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কারণ, রাষ্ট্র ধর্ম সমাজ সর্বত্র মানুষ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। প্রকৃতি মানুষকে দিয়েছে প্রশ্ন করার ক্ষমতা সত্যকে জানার জন্য, আর সমাজ তা কেড়ে নিয়েছে কায়েমি বন্দোবস্ত নিরাপদ রাখা

দক্ষিণ দুয়ারী ঘর

প্রাচীন কাল থেকেই দক্ষিণ-দুয়ারী ঘর সমাদৃত হয়ে আসছে। প্রাচীন স্থাপত্যবিদ্যা ভারতীয় 'বাস্তুশাস্ত্র' এবং চীন দেশীয় ‘ফেং-শুই’-তে দক্ষিণ দুয়ারী ঘরের সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলার খনার বচনে বলা হয়েছে: ‘দক্ষিণ দুয়ারী ঘরের রাজা, পূব দুয়ারী তাহার প্রজা পশ্চিম দুয়ারীর মুখে ছাই, উত্তর দুয়ারীর খাজনা নাই।’ দক্ষিণ দুয়ারী ঘর সমাদৃত হওয়ার অন্যতম কারণ বোধ হয় দখিন-হাওয়া। দক্ষিণ সমুদ্রের সজল বাতাস অনায়াসে গৃহে প্রবেশ করে দেহমন সতেজ করবে সেটাই হয়ত সবার আকাংখা। কিন্তু জনাকীর্ণ ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে সবসময় দক্ষিণ দিকে দরজা রেখে গৃহ নির্মাণ করা নিশ্চয়ই দুরূহ ব্যাপার। তবে কেউ যদি ঘর বাঁধতে চায় ঠিক উত্তর মেরুতে তা হলে আর ভাবনার কিছু নেই। কারণ সেখানে ঘরের দরজা যে দিকেই হোক না কেন তা হবে দক্ষিণমুখী। উত্তর মেরুতে নির্মিত ঘর যদি হয় চার দেয়ালের, আর প্রত্যেক দেয়ালে থাকে একটি করে দরজা তা হলে চারটি দরজাই হবে দক্ষিণমুখী, এবং সবকটি দরজা দিয়েই বইবে দখিন হাওয়া — প্রাণসঞ্জীবনী দখিন হাওয়া।  ▣ ✍ অসীম দে গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা  

মাটির প্রদীপ

Image
মাটির প্রদীপ আমাদের সংস্কৃতিতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পূজার্চনা , মঙ্গলকামনা , কিংবা শ্রদ্ধা জানাতে মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রদীপের মাটির অংশটি পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব করে , আর শিখাটি দেবলোকের। গ্রীক পুরাণের প্রমিথিউস দেবলোক থেকে আগুন চুরি করে মর্তের মানুষকে উপহার দিয়েছিলেন , এই আগুন দেবলোকের ধন। আগুনের শিখা সবসময় ঊর্ধ্বাভিমুখী , এক দিব্যসত্তার প্রতীক। মাটির প্রদীপ রবীন্দ্রনাথের গানে আছে — ‘আমার এই দেহখানি তুলে ধরো , তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো’। মাটির প্রদীপ মানবদেহের প্রতীক ; বৃষ্টির জল আর মাটি দিয়ে তৈরি হয় মানুষের দেহ , আর দেবলোকের আগুনে প্রাণের প্রদীপ জ্বেলে মানুষ পৃথিবীতে আসে। মানুষের দেহ এই পৃথিবীর , কিন্তু প্রাণের শিখাটি দেবলোকের। এই পার্থিব দেহ ও ঐশী শিখার সম্মিলনে মানুষ সৃষ্টি হয়। প্রতিটি মানুষ যেন এক-একটি মাটির প্রদীপ — নশ্বর কাদামাটির আধারে অবিনশ্বর আগুনের চৈতন্যশিখা। এই চৈতন্যশিখাকে কেউ বলেন চৈতন্য , কেউ বলেন আত্মা , বাউল সাধকরা বলেন ‘অধর মানুষ’। জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষের দেহে প্রদীপ্ত প্রাণের একই চৈতন্যশিখা

গানের ভিতর দিয়ে

Image
এই বিশ্বজগৎ এক বিশাল বাদ্যযন্ত্র। এমনটিই মনে করতেন খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতকের গ্রীক গণিতবিদ , দার্শনিক ও সংগীততাত্ত্বিক পিথাগোরাস। আর এই বাদ্যযন্ত্র থেকে যে পবিত্র সংগীত সৃষ্টি হয় তাকে বলতেন ‘ মিউজিক অব দ্য স্ফেয়ার ’, বা মণ্ডলা-সংগীত। পিথাগোরাসের কল্পনায় এই বাদ্যযন্ত্র ছিল হার্পজাতীয় তারবাদ্য। যেখানে ‘ স্ট্রিং ’ বা তারে কম্পন তুলে সুর সৃষ্টি করা হত।    একই ধরণের কথা বলেন স্ট্রিং-তত্ত্বের অনুসারী পদার্থবিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি , এই বিশ্বজগৎ হচ্ছে কম্পমান তারের সিম্ফনি বা ঐকতান-সংগীত। স্ট্রিং-তত্ত্ব হচ্ছে বিশ্বজগৎ সৃষ্টির আধুনিকতম তত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূল ধারণা — বিশ্বজগতের সমস্ত বস্তু ও শক্তি এক ধরণের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ‘ স্ট্রিং ’ বা তার দিয়ে গঠিত। সামবেদ-এর সামবিধান ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে , সমস্ত জগৎ সাত সুরের সংগীত প্রবাহে বিধৃত। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব-বীণার কথা বলেছেন , যে বীণার ঝংকারে অনন্ত আকাশের সমস্ত নক্ষত্রলোক ঝংকৃত হয়ে অপূর্ব ‘ নৈঃশব্দ্য-সংগীত ’- এ গাঁথা পড়ছে। পারস্যের সুফি মরমী কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি বলতেন , আমরা এমন এক জায়গায় এসে পড়েছি যেখানে সবকিছুই সংগীত। আকাশ ভরে আছে সুরে সু

অমৃতের সন্তান

প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ উপনিষদে মানুষকে ‘ অমৃতের সন্তান ’ বলা হয়েছে । মনে করা হয়েছে মানুষ ঈশ্বরের সন্তান ; ঈশ্বরের অবয়ব ও গুণাবলী মানুষ পেয়েছে । তবে ঈশ্বরের অবয়ব কেমন , সে বিষয়ে চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা না থাকলেও মানুষ তাঁর ছবি এঁকেছে যুগে যুগে দেশে দেশে । প্রাচীন গ্রীক ও ভারতীয় পুরাণের ঈশ্বর - ঈশ্বরী , দেবদেবীরা দেখতে ঠিক মানুষের মতো । এমনকি নিরাকার ঈশ্বরকেও দেখা যায় মানুষের মতো কথা বলছেন , সিংহাসনে বসে বিচারকার্য সম্পন্ন করছেন , ঠিক মানুষের মতো । লালন ফকির বলেছেন — তাঁর ঈশ্বর আরশিনগরে বসত করে , যাকে পৃথক সত্তা হিসেবে একদিনও দেখতে পাননি । আরশির পটে যাঁকে দেখতে পান সে যে তাঁর নিজেরই প্রতিচ্ছবি , তাঁরই মতো দেখতে । বাইবেলে আছে — ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজের অবয়বে । অন্য দিকে , জার্মান দার্শনিক ও নৃতত্ববিদ লুদভিক ফুয়েরবাক তাঁর ‘ এসেন্স অফ ক্রিশ্চিয়ানিটি ’ গ্রন্থে লিখেছেন — ঈশ্বর নন , মানুষ সৃষ্টি করেছে ঈশ্বর তার নিজের অবয়বে । অর্থাৎ , একদিকে বলা হয়েছে — ঈশ্বর নিজের অবয়বে সৃষ্টি করেছেন মানুষ । অন্যদিকে বলা হয়েছে — ঈশ্বর নন , মানুষই সৃষ্টি করেছে ঈশ্বর নিজের অবয়বে । বক্তব

বিশ্বাসের শক্তি — রোগে ও আরোগ্যে

দুই হাজার বছর আগের কথা । এক নারী জনতার ভিড় ঠেলে যীশুর কাছে গিয়ে পৌঁছল । সে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিল । যীশুর বস্ত্র স্পর্শ করা মাত্র তার ব্যাধি দূর হয়ে গেল । যীশু তখন সেই নারীকে বললেন , এটা তার বিশ্বাস যা তাকে সুস্থ করেছে । মানুষ অনেক কিছু বিশ্বাস করে , কিন্তু বিশ্বাসের শক্তি সম্পর্কে সবসময় অবগত হয় না । বিশ্বাসের শক্তি অপরিসীম । বিশ্বাস মানুষকে ভেঙেচুরে নতুন করে সৃষ্টি করতে পারে । বিশ্বাসের কারণে মানুষ হতে পারে দরবেশ , অথবা হিংস্র অমানুষ । বিশ্বাস মানুষের শরীরতত্ত্বে আনতে পারে বিপুল পরিবর্তন । বিশ্বাসের কারণে মানুষ হতে পারে অসুস্থ , আবার বিশ্বাসের কারণেই হতে পারে তার রোগ নিরাময় । কেউ যদি প্রবলভাবে বিশ্বাস করে , কোনও কিছু তাকে অসুস্থ করতে পারে , তবে নিজের ভয় থেকেই সে অসুস্থ হতে পারে । আবার কোনও বিশ্বাস যদি সেই ভয় দূর করতে পারে , তাহলে সে আরোগ্য লাভ করতে পারে । এ - প্রসঙ্গে একটি গল্পের অবতারণা করছি । একজন মানুষ মুখ খোলা রেখে ঘুমোতেন । দীর্ঘ দিনের অভ্যেস , কোনওদিন সমস্যা হয়নি । একবার এক অতিথি এসে তাকে এই ভাবে ঘুমোতে দেখে বলল , আপনি যে মুখ খোলা রেখে ঘুমান তা কিন্ত