Posts

দৃষ্টিশক্তির সীমা ও পরম জ্যোতি

Image
মানুষের চোখ কেবল আলোকিত বস্তুই দেখতে সক্ষম। যখন আলোকরশ্মি কোনও বস্তুর ওপর প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পৌঁছায় , তখনই তা দৃশ্যমান হয়। তবে সব ধরনের আলো মানুষের দৃষ্টিসীমার মধ্যে পড়ে না। যে আলোয় আমরা দেখতে পারি , তাকে বলা হয় ‘দৃশ্যমান আলো’ , যা সমগ্র তড়িৎচুম্বক বিকিরণের ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র । দৃশ্যমান আলো যখন স্বচ্ছ প্রিজমের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় , তখন তা লাল , কমলা , হলুদ , সবুজ , নীল , আশমানি ও বেগুনি — এই সাতটি রঙে বিভক্ত হয়। প্রতিটি রঙের নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে: বেগুনি রঙের সর্বনিম্ন (৪০০ ন্যানোমিটার) এবং লাল রঙের সর্বোচ্চ (৭০০ ন্যানোমিটার)। এই পরিসরের বাইরের আলোয় — যেমন অতিবেগুনি রশ্মি বা অবলোহিত রশ্মি — মানুষ দেখতে পায় না। এটাই দৃষ্টিশক্তির সীমাবদ্ধতা । দৃশ্যমান বর্ণালী তবে কিছু কীটপতঙ্গ ও পাখি অতিবেগুনি আলোয় দেখতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ , প্রজাপতির দৃষ্টিসীমা মানুষের তুলনায় বিস্তৃত। ফুলের পাপড়িতে থাকা অতিবেগুনি আলোর কারুকার্য মানুষের দৃষ্টির বাইরে থাকলেও প্রজাপতির চোখে তা ধরা পড়ে । দৃষ্টিশক্তির এ-হেন সীমাবদ্ধতা নিয়ে মানুষের পক্ষে কি দেখা সম্ভব সেই পরম জ্যোতির্ময়কে যি...

কে বেশি সুন্দর? নারী না পুরুষ?

Image
প্রকৃতি প্রাণীজগতে বিপরীত লিঙ্গের সমাবেশ ঘটিয়েছে । সবাইকে নানা ভাবে সাজিয়ে সুন্দর করেছে — পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় করেছে । ময়ূরের বর্ণাঢ্য পেখম , কোকিলের মিষ্টি কুহুগান , জোনাকির মায়াবী আলো , সিংহের অভিজাত কেশর , হরিণের হিরন্ময় শিং , বন মোরগের উদ্ধত লাল ঝুঁটি — এ সবই হল পুরুষপ্রাণীর অলংকার । প্রকৃতিতে স্ত্রীপ্রাণীর কোনও অলংকার নেই । প্রকৃতিতে স্ত্রীপ্রাণী নিরাভরণ — নিরলংকার ।  এর মানে এই নয় যে, পুরুষেরা নারীজাতির চেয়ে অধিক সুন্দর । এর মানে হল, সুন্দর হওয়ার জন্য পুরুষের প্রয়োজন বাড়তি সাজসজ্জা , কিন্তু নারী সুন্দর বিনা আভরণে । নারী এমনি সুন্দর । নারী , নারী হওয়ার কারণেই সুন্দর । নারী/ রবীন্দ্রনাথ  সুন্দর হওয়ার জন্য নারীর কোনও অলংকারের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সুন্দর হওয়ার জন্য পুরুষের চাই পেখম , কেশর , শিং , ঝুঁটি , ইত্যাদি অলংকার । কিন্তু দুর্ভাগ্য পুরুষ মানুষের ; পেখম , কেশর , শিং , ঝুঁটি — এসব কিছুই তার নেই। তাই একসময় , বিশেষ করে শ্রীকৃষ্ণের যুগে, পুরুষমানুষ নানা রকমের অলংকার পরত । সেটাই ছিল যুক্তিসংগত। কিন্তু পরবর্তী কালে, চতুর পুরুষ...

অনুভব একটি ভাষার নাম

আদিতে ভাষা ছিল না পৃথিবীর বুকে মানুষের আনাগোনা আজ থেকে প্রায় দুই লক্ষ বছর আগে । তবে যে ভাষায় আজ আমরা কথা বলি — শব্দে , বাক্যে , ব্যাকরণে — তার আবির্ভাব তো মাত্র চল্লিশ হাজার বছরের ইতিহাস । তাহলে তার আগে মানুষ কী দিয়ে কথা বলত ? ভাষাহীন কি ছিল তার প্রেম ? তার ব্যথা ? তার প্রার্থনা ? না — তখনও মানুষ কথা বলত , তবে সে ভাষা ছিল না উচ্চারিত , ছিল না লিখিত — সে ছিল ‘অনুভব’ । একটি চাহনি , একটি আকুলতা , একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস — সেই ছিল তার শব্দ , তার বাক্য , তার নিঃশব্দ ব্যাকরণ । অনুভব: শব্দহীন এক ভাষা আজও মানুষ কথা বলে এই ভাষায় — প্রকৃতির সঙ্গে , ঈশ্বরের সঙ্গে , প্রেমিকের চোখে , সন্তানের অশ্রুজলে । যেখানে শব্দ নেই , সেখানে অনুভব বলে , যেখানে বাক্য নেই , সেখানে হৃদয় বোঝে । এই ভাষা উচ্চারিত নয় , রচিত নয় , তবু তার অভিঘাত — প্রবল , প্রতিধ্বনিময় । এ ভাষায় হৃদয় কথা বলে হৃদয়ের সঙ্গে , আত্মা সংলাপ করে পরমাত্মার সঙ্গে । দুই পথ: কমিউনিকেশন ও কমিউনিয়ন মানুষের ভাব আদান-প্রদানের দুই পথ — একটি বুদ্ধিবৃত্তিক: যুক্তিনির্ভর , শব্দনির্মিত , মস্তিষ্কনিয়ন্ত্রিত । এর নাম ‘কমিউনিকেশন’ । ...

শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের খেলা

সংগীত — সে তো শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের খেলা। তুমি রচ শব্দ , আমি রচি নৈঃশব্দ্য । তোমায় আমায় মিলে এমনি চিরকাল বহে সুরধারা। ✍ অসীম দে গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা