Posts

বাউল ভাব — এক অন্তর্গত ঈশ্বরের আরাধনা

Image
আমরা যখন সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে কোন ও প্রার্থনা বা অর্ঘ্য নিবেদন করি, তখন মনের অজান্তেই আমাদের দৃষ্টি উপর দিকে চলে যায় । যেন, আমাদের মাথার উপরে যে আকাশ, সেখানেই তিনি থাকেন । কিন্তু পৃথিবীর সবদিকেই তো আকাশ, এবং ঘুর্ণায়মান পৃথিবী থেকে দেখা সেই আকাশের অবস্থান পরিবর্তিত যাচ্ছে প্রতি মুহুর্তে । এমন অবস্থায়, আকাশের কোন ও নির্দিষ্ট দিকে তাঁর অবস্থান নিরুপন করা কি সম্ভব? তাহলে কোন দিকে নিবেদন করব তাঁর প্রতি আমাদের ভক্তি-অর্ঘ্য, কোথায় জনাব আমাদের প্রার্থনা, কোথায়ই বা তাঁর নিবাস? সৃষ্টিকর্তা কোথায় থাকেন, সে সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে । সেই গল্পে আছে : সৃষ্টির প্রথম যুগে ঈশ্বর মানুষের বেশেই মানুষের সমাজে বাস করতেন , আর মানুষের ভক্তি-ভালবাসায় সিক্ত হয়ে দিন কাটাতেন । কিন্তু এক সময় কিছু সমস্যা দেখা দিল । সমস্যা দেখা দিল মানুষের বহুবিধ দাবি পূরণ করতে গিয়ে । দাবির যেন শেষ নেই ; এটা পাওয়া হল তো ওটা চাই , ওটা পাওয়া হল তো ঐটা চাই। প্রতিদিন অজস্র সহস্র প্রার্থনা । কিন্তু তাতেও সমস্যা ছিল না , কারণ তিনি তো সর্বশক্তিমান । সমস্যা দেখা দিল অন্যত্র । ধরুন, একজন কৃষক প্রার্থনা করল , ‘ হে

অলটেয়ার ও ভেগা: দুই নক্ষত্রের বিরহ-মিলন

Image
এমন কোনও জায়গায় যদি আপনার বাস করার সৌভাগ্য হয়ে থাকে যেখানে রাতের আকাশ আলো-দূষণহীন নির্ভেজাল অন্ধকার, তাহলে সম্ভবত লক্ষ্য করে থাকবেন, আকাশের কিছু অংশ জুড়ে অনুজ্বল তারার একটি বন্ধনী পড়ে আছে । এটিই আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ — ব্রহ্মান্ডে আমাদের ঠিকানা । এই গ্যালাক্সি অন্তত ৪০০ বিলিয়ন তারকায় রেণুময় । পৃথিবী থেকে খালি চোখে এই তারাদের আলাদা করে শনাক্ত করা যায় না, তাই মনে হয় যেন আলোর নদী । বহুকাল আগে পূর্ব এশিয়ার মানুষ বিশ্বাস করত, রাতের আকাশে ঝুলে থাকা অস্পষ্ট তারার বন্ধনীটি আসলে স্বর্গের নদী । তাই অনেক ভাষায় এই গ্যালাক্সির নাম হয়েছে নদীর নামে । যেমন, চীনা ভাষায় এর নাম হয়েছে — রুপালি নদী, জাপানি ভাষায় — স্বর্গের নদী, ভারতীয় ভাষায় — আকাশগঙ্গা । রুপালি নদীর দুই কূলে রয়েছে দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্র — ভেগা (অভিজিৎ) ও অলটেয়ার (শ্রবণা) । আকাশগঙ্গা / ভেগা / অলটেয়ার প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেকার এক চীনা লোককাহিনি মোতাবেক নক্ষত্র ‘ভেগা’ হল এক বয়ন-কন্যার প্রতীক, আর নক্ষত্র ‘অলটেয়ার’ — এক রাখাল বালকের প্রতীক । বয়ন-কন্যার নাম জানু, সে বস্ত্র বুননের কাজ করত । আর রা

ডপ্লার ইফেক্ট — কেন আঁধার বিছানো রাতের আকাশ

Image
ওলন্দাজ চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যান গগ-এর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য স্টারি নাইট’-এ রাতের আকাশ বেশ উজ্জ্বল দেখালেও বাস্তবে তা ঠিক নয়। রাতের আকাশ প্রকৃতপক্ষেই কালো — আঁধার বিছানো। অথচ রাতের আকাশে জ্বলছে লক্ষ কোটি নক্ষত্র। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে রয়েছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন নক্ষত্র, আর গোটা মহাবিশ্বে রয়েছে সম্ভবত ১০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি। নক্ষত্র নামের এত সূর্য জ্বলছে আকাশে, তবু কেন আলোঝলমলে নয় রাতের আকাশ? সম্প্রসারমান ব্রহ্মান্ড প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর আগে এক খেয়ালি বিস্ফোরণের মধ্যে জন্ম হয়েছিল মহাবিশ্বের । বিস্ফোরণের পর ফুলে উঠতে থাকল মহাবিশ্ব , ঠিক যেমন করে হওয়া ঢুকিয়ে ফুলিয়ে তোলা হয় বেলুন । মহাবিশ্বের এই ফুলে উঠা অর্থাৎ সম্প্রসারিত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে আজও । এর ফলে মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো তাদের সব নক্ষত্র নিয়ে বিপুল বেগে দূরে সরে যাচ্ছে পরস্পর থেকে , এবং আমাদের থেকে । গ্যালাক্সি তথা নক্ষত্রপুঞ্জের এই দূরে সরে যাওয়ার কারণেই রাতের আকাশ অন্ধকার দেখায় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা । পদার্থবিদ্যার যে সূত্রটি দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা হয় তার নাম ‘ ডপ্লার ইফেক্ট ’ । মনে করুন , ঝুম

অবচেতন মন — প্রেক্ষিত সময়, স্মৃতি ও স্বপ্ন

Image
এখন সময় কত — সম্ভবত এই প্রশ্নটি সারা দিন আমাদের মনে সবচেয়ে বেশি বার জাগে । কারণ সময়সূচির শেকলে বাঁধা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি কর্ম । কিন্তু সময় মানে কী? সাধারণভাবে আমরা সময় বলতে বুঝি ঘড়ির কাটার অবস্থান । কিন্তু ঘড়ি তো সময় মাপার যন্ত্র মাত্র । তা হলে সময় মানে কী? কোথায় তার অবস্থান? সময় সব সময়ই কি এক রকম? পঞ্চম শতকের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক অগাস্টিন অফ হিপ্পো বলেছিলেন —  ‘কেউ যদি জানতে না চায় তাহলে আমি জানি সময় কি, কিন্তু কেউ জানতে চাইলে আমি বলতে পারব না । ’ তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, ‘সময়’ ব্যক্তিগত অনুভূতি বা অভিজ্ঞতার বিষয় । আমরা অনুভব করতে পারি, কিন্তু ব্যাখ্যা করতে পারি না । তার মানে সময় সাবজেক্টিভ, অর্থাৎ এর অস্তিত্ব মানুষের মনে । ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রভাবশালী ফরাসি দার্শনিক হেনরি বার্গসোঁ ‘দ্বৈত সময়’ তত্ত্বের কথা বলেন । তিনি বলেন, সময় দুই প্রকার — সাবজেক্টিভ বা মনোগত সময় যার অস্তিত্ব স্মৃতির নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল, এবং অবজেক্টিভ বা বস্তুগত সময় যা ভাবনা বা অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত নয় এবং পরিমাপযোগ্য । মানুষের মনোজগত সচেতন ও অবচেতন স্ত