অলটেয়ার ও ভেগা: দুই নক্ষত্রের বিরহ-মিলন
এমন কোনও জায়গায় যদি আপনার বাস করার সৌভাগ্য হয়ে থাকে যেখানে রাতের আকাশ আলো-দূষণহীন নির্ভেজাল অন্ধকার, তাহলে সম্ভবত লক্ষ্য করে থাকবেন, আকাশের কিছু অংশ জুড়ে অনুজ্বল তারার একটি বন্ধনী পড়ে আছে। এটিই আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ — ব্রহ্মান্ডে আমাদের ঠিকানা। এই গ্যালাক্সি অন্তত ৪০০ বিলিয়ন তারকায় রেণুময়। পৃথিবী থেকে খালি চোখে এই তারাদের আলাদা করে শনাক্ত করা যায় না, তাই মনে হয় যেন আলোর নদী। বহুকাল আগে পূর্ব এশিয়ার মানুষ বিশ্বাস করত, রাতের আকাশে ঝুলে থাকা অস্পষ্ট তারার বন্ধনীটি আসলে স্বর্গের নদী। তাই অনেক ভাষায় এই গ্যালাক্সির নাম হয়েছে নদীর নামে। যেমন, চীনা ভাষায় এর নাম হয়েছে — রুপালি নদী, জাপানি ভাষায় — স্বর্গের নদী, ভারতীয় ভাষায় — আকাশগঙ্গা। রুপালি নদীর দুই কূলে রয়েছে দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্র — ভেগা (অভিজিৎ) ও অলটেয়ার (শ্রবণা)।
আকাশগঙ্গা/ভেগা/অলটেয়ার |
অভিসারে জানু ও নিওলাং |
সপ্তমী সন্ধ্যায়
উদযাপিত হয় মিলনের উৎসব। কিন্তু মিলনে থাকে বিচ্ছেদের আভাস, তাই মিলনের আনন্দ ক্ষণিকের। বিরহে থাকে মিলনের আকুতি, যা এক অদৃশ্য বন্ধনে দীর্ঘকাল
বেঁধে রাখে দুই হৃদয়কে। নক্ষত্রদ্বয় ‘ভেগা’ ও ‘অলটেয়ার’
শাশ্বত বিরহ-বেদনার প্রতীক হয়ে চিরভাস্বর রাতের আকাশে। আর আকাশগঙ্গা যেন এক
বিষাদসিন্ধু, বিষাদের অশ্রুজলে টলমলা। সেখানে বিরহের অন্তরালে সেতু
বাঁধে মিলনের চিরন্তন আকুতি।
এই গল্পের
সারমর্ম হল — দুই হৃদয় যদি হয় একত্রবদ্ধ, তাহলে দুই মানুষের দিনের-পর-দিন, রাতের-পর-রাত
একত্রে থাকা নিস্প্রয়োজন বইকি।