অবচেতন মন — প্রেক্ষিত সময়, স্মৃতি ও স্বপ্ন
এখন সময় কত — সম্ভবত
এই প্রশ্নটি সারা দিন আমাদের মনে সবচেয়ে বেশি বার জাগে। কারণ সময়সূচির শেকলে বাঁধা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের
প্রতিটি কর্ম। কিন্তু
সময় মানে কী? সাধারণভাবে আমরা সময় বলতে বুঝি ঘড়ির কাটার অবস্থান। কিন্তু ঘড়ি তো সময় মাপার যন্ত্র মাত্র। তা হলে সময় মানে কী? কোথায় তার অবস্থান? সময় সব সময়ই
কি এক রকম?
পঞ্চম শতকের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক
অগাস্টিন অফ হিপ্পো বলেছিলেন — ‘কেউ যদি
জানতে না চায় তাহলে আমি জানি সময় কি, কিন্তু কেউ জানতে চাইলে আমি বলতে পারব না।’ তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, ‘সময়’ ব্যক্তিগত অনুভূতি
বা অভিজ্ঞতার বিষয়। আমরা অনুভব
করতে পারি, কিন্তু ব্যাখ্যা করতে পারি না। তার
মানে সময় সাবজেক্টিভ, অর্থাৎ এর অস্তিত্ব মানুষের মনে।
১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রভাবশালী ফরাসি দার্শনিক হেনরি বার্গসোঁ
‘দ্বৈত সময়’ তত্ত্বের কথা বলেন। তিনি
বলেন, সময় দুই প্রকার — সাবজেক্টিভ বা মনোগত সময় যার অস্তিত্ব স্মৃতির
নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল, এবং অবজেক্টিভ বা বস্তুগত সময় যা ভাবনা বা
অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত নয় এবং পরিমাপযোগ্য।
মানুষের মনোজগত সচেতন ও অবচেতন স্তরে বিন্যস্ত। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মতে মস্তিস্কের কর্মকান্ডের
প্রায় ৯৫ শতাংশই নির্ভর করে অবচেতন মনের উপর। তাই বলা যেতেই পারে যে, মনোগত সময় আসলে অবচেতন মনেরই
সময়। আমাদের জাগরণের সময় সচেতন মন সজাগ থাকে, অন্তরালে সক্রিয়
থাকে অবচেতন মন।
আমাদের নিদ্রার সময় সচেতন মন সুপ্তিতে চলে যায়, আর তখন মস্তিস্কের সম্পূর্ণ
নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অবচেতন মনের কাছে।
দ্য পার্সিস্টেন্স অব মেমরি/দালি |
আমাদের সচেতন মন চিন্তাশীল, কিন্তু এর কোনও স্মৃতি
নেই। স্মৃতিরা সব থাকে মনের অবচেতন স্তরে। অবচেতন মন সমস্ত স্মৃতির সংরক্ষণাগার — শুধু এই জন্মের স্মৃতিই নয়, পূর্বজন্মেরও। আমাদের নিদ্রায় যখন সবকিছু অবচেতন মনের ইচ্ছায় চলে,
যখন থাকে না সচেতন মনের শাসন, তখন আমাদের মস্তিস্ক স্বাধীন মুক্ত মনে স্মৃতিকণা দিয়ে
স্বপ্ন রচনায় মগ্ন হয়।
✍অসীম দে
গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা