Posts

দুই পাখি

Image
মানুষ চিরকাল পাখি দেখে মুগ্ধ হয়েছে । পাখিরা কেমন শূন্যে আকাশের উচুঁতে উড়ে বেড়ায় । এতো উঁচুতে পাখিদের চলাফেরা যে, নীচের পঙ্কিলতা তাদের স্পর্শ করে না । পার্থিব জগতের ঊর্ধ্বে যে আধ্যাত্মিক জগৎ আছে সে সম্পর্কে জানতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছে পাখিদের আকাশে ওড়া দেখে । মানুষের মনে হয়েছে, পাখি কোনও আধ্যাত্মিক সত্তার দূত বা প্রতিনিধি ।     আমাদের সংস্কৃতিতে এক বিমূর্ত পাখির কল্পনা করা হয়েছে, যে-পাখি মানুষের মূর্তমান দেহে চৈতন্যময় সত্তা (আত্মা) হিসেবে ব্যাপ্ত থাকে । এই বিমূর্ত পাখিকে লালন সাঁই বলেছেন ‘অচিন পাখি’ । অচিন, কারণ এই পাখি পরিচয়হীন । মানুষের দেহসংশ্লিষ্ট পরিচয় যেমন ধর্ম, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ, কুল, নাম ইত্যাদি পরিচয়ে পরিচিত নয় এই পাখি (আত্মা) । তাই তাকে চেনার কোনও উপায় থাকে না । রবীন্দ্রনাথ ‘দুই পাখি’র কথা বলেছেন । খাঁচার পাখি ও বনের পাখি । খাঁচার পাখি দেহধারী, দেহরূপ খাঁচায় তার বাস । আর বনের পাখির নিবাস অসীম আকাশ । খাঁচার পাখি সংসার-শিকলে বাঁধা, আর বনের পাখি সংসার-বন্ধন মুক্ত । উপনিষদেও আছে দুই পাখির কথা — ‘দুটি পাখি পরস্পর যুক্ত ও সখ্যভাবাপন্ন হয়ে এক বৃক্ষ আশ্রয় করে আছে । তা

গরু প্রোটিন কোথায় পায়

Image
স্কুলে শিখেছি, গরু তৃণভোজী প্রাণী । অর্থাৎ গরু ঘাস-খড় খেয়ে জীবন ধারণ করে । নিরামিষবাদের প্রবক্তারা বলেন, গরু যদি ঘাস-খড় খেয়ে এতো দুধ-মাংস উৎপাদন করতে পারে, তাহলে মানুষ কেন শুধু শাকসবজি খেয়ে শরীর গঠন ও রক্ষণ করতে পারবে না । তাঁদের মতে মানুষ মূলত নিরামিষভোজী প্রাণী । কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, একটি পাঁচশো কিলোগ্রাম ওজনের গরুর প্রোটিনের উৎস কী ? ঘাস আর খড়কুটো থেকেই কি গরু আহরণ করে পর্যাপ্ত প্রোটিন? আমরা জানি , শরীরে প্রোটিন উৎপাদন করতে লাগে বাইশ রকমের অ্যামিনো অ্যাসিড । এদের মধ্যে নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড শরীর তৈরি করতে পারে না । এগুলিকে বলা হয় ‘অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড’ । শরীর এগুলি পেয়ে থাকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থেকে । প্রাণিজ প্রোটিনে সবগুলি অ্যামিনো অ্যাসিড-ই বর্তমান থাকে । কিন্তু উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে নয়টি অপরিহার্য অ্যামিনো এসিডের সবগুলি থাকে না , কিছু কম থাকে । সুতরাং উদ্ভিদজাত খাদ্য থেকে এগুলির চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করা সম্ভব নয় ।      উল্লেখ্য , গরুকে খাবার হিসেবে যে ঘাস , খড় দেওয়া হয় তা মোটেও প্রোটিনসমৃদ্ধ নয় । প্রকৃতপক্ষে , এই সব খাবারের মধ্যে তেমন পুষ্টিকর উপাদান থাকে না । অ

স্বপ্ন ও বাস্তব

Image
মানুষের মন হয় দুই রকমের — সচেতন মন এবং অবচেতন মন । আমরা যখন জেগে থাকি তখন সচেতন মন কর্তৃত্ব করে । অবচেতন মনও কাজ করে , তবে আড়ালে থেকে — নেপথ্যে । আর রাতের বেলায় যখন ঘুমিয়ে পড়ি , তখন সমস্ত কার্যভার সচেতন মন থেকে অবচেতন মনের হাতে চলে যায় । আমাদের মানসিক শক্তির মাত্র ৫-১০ শতাংশ সচেতন মন আর বাকি ৯৫-৯০ শতাংশ অবচেতন মন । স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের মস্তিস্ক ও মন রচনা করে আমাদের ‘বাস্তবতা’ । সুতরাং আমাদের মন যখন দুই রকমের, আমাদের বাস্তবতাও দুই রকমের । সচেতন মনের বাস্তবতা এবং অবচেতন মনের বাস্তবতা । জাগ্রত অবস্থায় ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যে জগৎ আমরা প্রত্যক্ষ করি তাকে বলা হয় সচেতন মনের বাস্তবতা । মনে করা হয় এটাই প্রকৃত বাস্তবতা । আর ঘুমের মধ্যে অবচেতন মন কর্তৃক যা প্রত্যক্ষবৎ অনুভূত হয় তাকে বলা হয় অবচেতন মনের বাস্তবতা বা স্বপ্নবাস্তবতা । শিল্পকলা ও সাহিত্যের পরিভাষায় অবচেতন মনের বাস্তবতার নাম surreal বা পরাবাস্তব । মনে করা হয় অবচেতন মনের বাস্তবতাই সুপার রিয়েল । কারণ মনের সিংহভাগই অবচেতন মন । পরাবাস্তবতায় থাকে স্বপ্নে-দেখা বিচিত্র দৃশ্যাবলি — সমস্ত যুক্তিতর্ক ও বিধিনিয়মের গন্ডি অস্ব

জিশু খ্রিস্টের আত্মবলিদান

Image
‘ গুড ফ্রাইডে ’ বা ‘ পবিত্র শুক্রবার ’ জিশু খ্রিস্টের মৃত্যুদিন । ৩৩ খ্রিস্টাব্দে , সম্ভবত ৩ এপ্রিল, শুক্রবার জিশু মৃত্যুবরণ করেন । এর আগের দিন , বৃহস্পতিবার ছিল ইহুদিদের বার্ষিক ‘ পাসওভার ’ বা ‘ নিস্তার-পার্বণ ’ । পাপ থেকে নিস্তার পাওয়ার আশায় এই দিন প্রাণ বলি দেওয়া হত । ঈশ্বরের নির্দেশ ছিল, তাঁর অবাধ্য হয়ে আদম যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্তের জন্য নিস্পাপ প্রাণ বলি দিতে হবে । ‘নিস্তার-পার্বণ’ উদযাপন করতে জিশু বারোজন শিষ্যের সঙ্গে এক সান্ধ্যভোজে মিলিত হয়েছিলেন । সেখানে ভোজনের জন্য ছিল রুটি ও মদ । একটি রুটি তিনি প্রত্যেক শিষ্যকে একটু একটু করে দিলেন । এবং মদও একটু একটু করে দিলেন । বললেন , এই যে রুটি দিলাম , এই রুটি হচ্ছে আমার শরীরের মাংস । এটা যদি খাও , আমার মাংস খাওয়া হবে । আর এই যে মদ দিলাম , এটা হচ্ছে আমার শরীরের রক্ত । মদটা যদি খাও , আমার রক্ত খাওয়া হবে । এখানে জিশু রুটি ও মদের প্রতীকে আত্মবলিদানের ইঙ্গিত দিলেন কি ? প্রাচীন ইজরায়েলের ইহুদিদের মধ্যে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য নরবলি প্রথার প্রচলন ছিল । এমনকী নিজের প্রিয় সন্তানকেও বলি দেওয়া হত । ঈশ্বর একবার অব্রাহামের বিশ্বাস পরী

অকারণ সুখ

Image
সুখ মনের এমন এক অবস্থা যা সবাই পেতে চায় । সুখের সঙ্গে সুস্থতা , স্বাচ্ছন্দ্য , আনন্দ , ভালবাসা , তৃপ্তি , এবং অন্যান্য ইতিবাচক অনুভূতি সম্পর্কিত । তা ছাড়া, বিভিন্ন ইতিবাচক অভিজ্ঞতা, যেমন লক্ষ্য-অর্জন, ইচ্ছা-পূরণ, সু-সংবাদ পাওয়া, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ সুখী হতে পারে । তৎসত্ত্বেও, একেবারে কোনও কারণ ছাড়াও মানুষ সুখের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে । এই ধরণের সুখকে বলা হয় অকারণ-সুখ । সুখ সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা — আমি সুখী হব যদি যা চাই তা পাই , এবং যা চাই না তা না পাই । এই ধরণের সুখের পিছনে শর্ত থাকে, কারণ থাকে । তাই এটাকে বলা যায় সকারণ-সুখ । এই সুখ এক ধরণের মরীচিকা । কারণ , চাওয়ার শেষ নেই । একটি চাওয়া পূরণ হওয়া মাত্র আর একটি চাওয়া সামনে এসে দাঁড়ায় । সুখের দেখা আর মেলে না , বা সুখ স্থায়ী হয় না । পক্ষান্তরে , অকারণ সুখ নিঃশর্ত, স্বতঃস্ফূর্ত । তাই সদাই পরিপূর্ণ । প্রাত্যহিক জীবনে পরিচিতজনের সঙ্গে সামাজিক কুশল বিনিময়ের সময় আমরা জিজ্ঞেস করি — কেমন আছেন? উত্তর যদি হয় ‘ ভাল ’, আমরা কিন্তু আর জানতে চাই না — কেন ভাল আছেন? একই ভাবে কেউ যদি বলে , আমি সুস্থ আ

ডারউইন ও ময়ূরপুচ্ছ

Image
জীবজগতে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রাণী বোধ হয় ময়ূর । ময়ূর যখন তার বিচিত্রবর্ণের পাখা মেলে ধরে তখন রুদ্ধশ্বাস বিস্ময়ে না তাকিয়ে পারা যায় না । ময়ূরের সৌন্দর্যের মূল রহস্য তার জমকালো বহুবর্ণা লেজ বা পুচ্ছ । তবে ময়ূরপুচ্ছ সুন্দর হলেও তার দেহের তুলনায় অত্যন্ত ভারী । সম্ভবত গুরুভার লেজের কারণেই ময়ূর পাখি হলেও উড়তে পারে না । লঘুভার টুনটুনি পাখি ময়ূর সম্পর্কে কী বলে তা দেখে নেওয়া যাক রবীন্দ্রনাথের এই কবিতায় — টুনটুনি কহিলেন , ‘ রে ময়ূর , তোকে দেখে করুণায় মোর জল আসে চোখে । ’ ময়ূর কহিল , ‘ বটে! কেন , কহ শুনি , ওগো মহাশয় পক্ষী , ওগো টুনটুনি । ’ টুনটুনি কহে , ‘ এ যে দেখিতে বেআড়া , দেহ তব যত বড়ো পুচ্ছ তারো বাড়া । আমি দেখো লঘুভারে ফিরি দিনরাত , তোমার পশ্চাতে পুচ্ছ বিষম উৎপাত । ’ ময়ূর কহিল , ‘ শোক করিয়ো না মিছে — জেনো ভাই , ভার থাকে গৌরবের পিছে । ’ (ভার < কণিকা) টুনটুনি পাখির মতে, গুরুভার পুচ্ছ ময়ূরের জন্য বিষম উৎপাত বিশেষ । শুধু টুনটুনি পাখি নয়, ময়ূরের পুচ্ছ ভীষণ অপছন্দ করতেন বিবর্তন তত্ত্বের প্রবক্তা চার্লস ডারউইন । তিনি ময়ূরপুচ্ছ এতটাই অপছন্দ করতেন যে, এক বন্ধুকে লেখা চি