গরু প্রোটিন কোথায় পায়

স্কুলে শিখেছি, গরু তৃণভোজী প্রাণীঅর্থাৎ গরু ঘাস-খড় খেয়ে জীবন ধারণ করেনিরামিষবাদের প্রবক্তারা বলেন, গরু যদি ঘাস-খড় খেয়ে এতো দুধ-মাংস উৎপাদন করতে পারে, তাহলে মানুষ কেন শুধু শাকসবজি খেয়ে শরীর গঠন ও রক্ষণ করতে পারবে না তাঁদের মতে মানুষ মূলত নিরামিষভোজী প্রাণী

cow

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, একটি পাঁচশো কিলোগ্রাম ওজনের গরুর প্রোটিনের উৎস কী? ঘাস আর খড়কুটো থেকেই কি গরু আহরণ করে পর্যাপ্ত প্রোটিন? আমরা জানি, শরীরে প্রোটিন উৎপাদন করতে লাগে বাইশ রকমের অ্যামিনো অ্যাসিড এদের মধ্যে নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড শরীর তৈরি করতে পারে না এগুলিকে বলা হয় ‘অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড’ শরীর এগুলি পেয়ে থাকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থেকে প্রাণিজ প্রোটিনে সবগুলি অ্যামিনো অ্যাসিড-ই বর্তমান থাকে কিন্তু উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে নয়টি অপরিহার্য অ্যামিনো এসিডের সবগুলি থাকে না, কিছু কম থাকে সুতরাং উদ্ভিদজাত খাদ্য থেকে এগুলির চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করা সম্ভব নয়    

উল্লেখ্য, গরুকে খাবার হিসেবে যে ঘাস, খড় দেওয়া হয় তা মোটেও প্রোটিনসমৃদ্ধ নয়প্রকৃতপক্ষে, এই সব খাবারের মধ্যে তেমন পুষ্টিকর উপাদান থাকে নাঅধিকাংশ ক্যালরি তালাবন্ধ থাকে সেলুলোজ অণুতে সেলুলোজ হচ্ছে এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা দিয়ে তৈরি হয় উদ্ভিদদেহের প্রধান আঁশ আমরা শাকসবজির সেলুলোজ অংশ হজম করতে পারি নাসেলুলোজ গলাতে যে ডাইজেস্টিভ এনজাইম দরকার তা আমাদের নেই কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীরই নেইগরুরও নেই

তাহলে গরু কীভাবে সেলুলোজ হজম করে? কীভাবেই বা পায় ক্যালরি ও প্রোটিন? গরু যদিও নিজে সেলুলোজ হজম করতে পারে না, তবে গরুর পাকস্থলীতে বাস করে লক্ষ কোটি ব্যাকটেরিয়া যারা গরুকে সেলুলোজ হজম করতে সাহায্য করেএই জীবাণুগুলি বাস করে পাকস্থলীর একটা বিশেষ অংশে যার নাম রুমেন বা প্রথম পাকস্থলী

রুমেন-এ প্রতি ঘন সেন্টিমিটার অঞ্চলে দেড়শ থেকে দুশ কোটি জীবাণু থাকেগরুর পাকস্থলীতে ঘাস-খড় এসে পৌঁছালেই এরা সেগুলিকে খেতে আরম্ভ করেখেয়ে মোটা হয়ে বংশ বৃদ্ধি করে হয়ে যায় অনেকগুণগরু জাবর কাটার সময় ব্যাকটেরিয়ার দলা খায়আর এই জীবাণুগুলিই হয় গরুর প্রোটিন তথা পুষ্টির প্রধান উৎস

এই কারণে গরুকে তৃণভোজী প্রাণী বলা ঠিক হবে না, আসলে এরা জীবাণুভোজী। 

Popular posts from this blog

শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়

সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশ — সৃষ্টিতত্ত্বের মূলভাব

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

তেল মাহাত্ম্য

ঈশ্বর, প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

রাসলীলা মাহাত্ম্য

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

সূর্য উপাসনা

হৃদয়-দর্পনে দেখা