Posts

Showing posts from 2023

গরু প্রোটিন কোথা থেকে পায়?

Image
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী , গরু তৃণভোজী প্রাণী — অর্থাৎ , এটি ঘাস-খড় খেয়ে জীবনধারণ করে। নিরামিষভোজীদের অনেকে মনে করেন , যদি গরু শুধুমাত্র উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে পারে , তাহলে মানুষও কেন শুধুমাত্র উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করে শক্তিশালী শরীর গঠন করতে পারবে না ? তাঁদের মতে , মানুষ প্রকৃতপক্ষে নিরামিষভোজী প্রাণী । কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে — একটি ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের গরু পর্যাপ্ত প্রোটিন কোথা থেকে পায় ? শুধুমাত্র ঘাস ও খড় থেকেই কি গরুর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় ? প্রোটিন গঠনের জন্য শরীরকে বাইশটি অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রয়োজন হয় , যার মধ্যে নয়টি শরীর নিজে তৈরি করতে পারে না। এগুলোকে বলা হয় ‘অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড’ , যা আমাদের খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। প্রাণিজ প্রোটিনে এসব অ্যামিনো অ্যাসিড সম্পূর্ণভাবে উপস্থিত থাকলেও , উদ্ভিদজাত প্রোটিনে তা অসম্পূর্ণ থাকে। তাই শুধু উদ্ভিদজাত খাবার থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংগ্রহ করা বেশ ‘চ্যালেঞ্জিং’ । গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ঘাস ও খড়ে তেমন প্রোটিন বা উচ্চমানের পুষ্টিগুণ থাকে না। এগুলোর প্রধান উপাদান হল সেলুলোজ , যা এক ধরনের কার্বোহাইড্...

স্বপ্ন, বাস্তবতা ও অবচেতন মন

Image
মানুষের মন প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত — সচেতন মন এবং অবচেতন মন। সচেতন মন আমাদের জাগ্রত অবস্থায় পরিচালিত করে , যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব নেয়। অন্যদিকে , অবচেতন মন কাজ করে অন্তরালে , আমাদের অনুভূতি , স্মৃতি ও স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুমের সময় যখন সচেতন মন নিষ্ক্রিয় হয় , তখন অবচেতন মন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আমাদের মানসিক প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে , মানুষের মানসিক শক্তির মাত্র ৫-১০ শতাংশ সচেতন মনের অধীন , আর বাকি ৯০-৯৫ শতাংশ অবচেতন মন দ্বারা পরিচালিত । স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মনে করেন , আমাদের মস্তিষ্কই বাস্তবতা গঠন করে। যেহেতু মনের প্রকৃতি দ্বিবিধ , তাই বাস্তবতাও দুই রকম — সচেতন মনের বাস্তবতা এবং অবচেতন মনের বাস্তবতা। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমরা যে জগৎ প্রত্যক্ষ করি , সেটাই সচেতন মনের বাস্তবতা। একে আমরা প্রকৃত বাস্তবতা বলে ধরে নিই। কিন্তু ঘুমের মধ্যে অবচেতন মন যে অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে , তাকেও এক ধরনের বাস্তবতা বলা যায় , যা স্বপ্নবাস্তবতা নামে পরিচিত। শিল্প , সাহিত্য ও মনস্তত্ত্বে একে পরাবাস্তব ( surreal) বলা হয় , কারণ এটি যুক্তির সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে গিয়ে গভীর অন্...

জিশু খ্রিস্টের আত্মবলিদান

Image
‘ গুড ফ্রাইডে’ বা ‘পবিত্র শুক্রবার’ হল সেই দিন , যখন জিশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ৩৩ খ্রিস্টাব্দে , সম্ভবত ৩ এপ্রিল , শুক্রবার এই ঘটনা ঘটে । এর আগের দিন , বৃহস্পতিবার ছিল ইহুদিদের বার্ষিক ‘পাসওভার’ বা ‘নিস্তার-পার্বণ’ , যা পাপ থেকে মুক্তির প্রতীক হিসেবে পালিত হত। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী , আদমের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে নিস্পাপ প্রাণের বলি দেওয়া আবশ্যক ছিল । এই উপলক্ষে , জিশু তাঁর বারোজন শিষ্যের সঙ্গে এক শেষ নৈশভোজে মিলিত হন , যা আজ ‘ দ্য লাস্ট সাপার’ নামে পরিচিত। সেখানে রুটি ও মদ ভোজনের অংশ ছিল। তিনি শিষ্যদের রুটি দিয়ে বললেন , ‘ এটি আমার দেহ , তোমরা গ্রহণ করো। ’ এরপর মদের পেয়ালা দিয়ে বললেন , ‘ এটি আমার রক্ত , যা তোমাদের জন্য প্রবাহিত হবে। ’ এর মাধ্যমে তিনি তাঁর আসন্ন আত্মবলিদানের প্রতীকী ব্যাখ্যা দেন । প্রাচীন ইজরায়েলে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য নরবলি প্রচলিত ছিল , এমনকী নিজ সন্তান বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অব্রাহাম যখন ঈশ্বরের আদেশে তাঁর পুত্র ইসহাককে বলি দিতে প্রস্তুত হন , তখন ঈশ্বর নরবলির পরিবর্তে পশুবলির নির্দেশ দেন। পরে পাপমোচনের জন্য পশুবলি প্রথা প্রচলিত হয় , য...

অকারণ সুখ : অন্তরের পরিপূর্ণতা

Image
সুখ — মনের এমন এক অবস্থা , যা সবাই কামনা করে। সুস্থতা , স্বাচ্ছন্দ্য , আনন্দ , ভালবাসা ও তৃপ্তির মতো ইতিবাচক অনুভূতিগুলোর সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষ নানাভাবে সুখ অনুভব করতে পারে — লক্ষ্য অর্জন , ইচ্ছাপূরণ , সুসংবাদ পাওয়া কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো ইত্যাদি তার কিছু সাধারণ মাধ্যম। তবে , কিছু সময় কোনও বাহ্যিক কারণ ছাড়াই মানুষ সুখের অভিজ্ঞতা লাভ করে , যা অকারণ-সুখ নামে পরিচিত । সাধারণভাবে , মানুষ মনে করে — ' আমি সুখী হব , যদি যা চাই তা পাই এবং যা চাই না তা এড়িয়ে চলতে পারি। ’ এ ধরনের সুখ নির্ভরশীল ও শর্তযুক্ত , যা আসলে এক মরীচিকা। কারণ , আকাঙ্ক্ষার কোনও শেষ নেই ; একটির পর আরেকটি চাওয়া সামনে এসে দাঁড়ায় , ফলে সুখ অধরা থেকে যায়। পক্ষান্তরে , অকারণ-সুখ নিঃশর্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত , যা মানুষের অন্তর্নিহিত স্বাভাবিক অবস্থা । আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক বিনিময়ে আমরা জিজ্ঞেস করি — ‘ কেমন আছেন ? ’ যদি কেউ উত্তর দেয় , ‘ ভাল আছি ’ , সাধারণত আমরা আর জানতে চাই না — কেন ভাল আছেন ? সুখ ও সুস্থতা আমাদের স্বাভাবিক অবস্থা বলেই এ প্রশ্ন অবান্তর মনে হয়। কিন্তু কেউ যদি বলে , ‘ ভাল নেই ’ , তখন তার ...

ময়ূরের সৌন্দর্য ও বিবর্তনের রহস্য

Image
জীবজগতে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রাণীদের মধ্যে ময়ূর অন্যতম। ময়ূর যখন তার বিচিত্রবর্ণের পাখা মেলে ধরে , তখন তা এক অপার বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। ময়ূরের সৌন্দর্যের মূল রহস্য তার জমকালো বহুবর্ণা লেজ বা পুচ্ছ। তবে এই পুচ্ছ তার দেহের তুলনায় অত্যন্ত ভারী , যা সম্ভবত তাকে উড়তে বাধা দেয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় টুনটুনি পাখি ময়ূরের ভারী লেজ নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেছিল: ‘ রে ময়ূর , তোকে দেখে করুণায় মোর জল আসে চোখে। … আমি দেখো লঘুভারে ফিরি দিনরাত , তোমার পশ্চাতে পুচ্ছ বিষম উৎপাত । ’ তবে ময়ূর পাল্টা যুক্তি দেয় যে , ভার থাকলেই তা উৎপাত হয় না , বরং গৌরবের প্রতীকও হতে পারে । ডারউইনের দৃষ্টিভঙ্গি ও যৌন নির্বাচন তত্ত্ব বিবর্তন তত্ত্বের প্রবক্তা চার্লস ডারউইন ময়ূরের পুচ্ছ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। তিনি ময়ূরপুচ্ছ এতটাই অপছন্দ করতেন যে , এক বন্ধুকে চিঠিতে লিখেছিলেন , ‘ যখনই ময়ূরপুচ্ছের পালকের দিকে তাকাই , আমার বমি-বমি ভাব হয়। ’ তার বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে , প্রাণীর প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের উপযোগিতা থাকা উচিত। কিন্তু ময়ূরের পুচ্ছ দেখে তিনি বিভ্রান্ত হন , কারণ এটি কোনওভাবেই টিকে থাকার লড়াইয়ে সুবিধা দেয় না , বর...

বাক্-দেবী সরস্বতী

Image
মানুষই একমাত্র প্রাণী যে কথা বলতে পারে । পশু-পাখিরাও কথা বলে বটে , কিন্তু তাদের কথা অন্যরকম । তারা মানুষের মতো ধ্বনি এবং শব্দের স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারে না । তারা কয়েকটি ধ্বনি ( বর্ণ) দিয়ে শব্দ এবং কয়েকটি শব্দ দিয়ে অর্থজ্ঞাপক বাক্য তৈরি করতেও পারে না । মানুষ কথা বলতে সক্ষম হয়েছে তার বাগযন্ত্রের কারণে । মানুষের বাক্-যন্ত্র বিশেষ একটি প্রত্যঙ্গ নয় , অনেকগুলো প্রত্যঙ্গের সমাহার । এর মধ্যে রয়েছে ফুসফুস , স্বরতন্ত্রী (ভোকাল কর্ডস) , ধ্বনিদ্বার (ভোকাল ফোল্ডস) , মুখ , ঠোঁট , জিহ্বা , দাঁত , নাক । এতগুলো প্রত্যঙ্গ সাহায্য করে বলেই মানুষ কথা বলতে পারে । অতএব, কথা বলা মোটেও সহজ কাজ নয় — বহু প্রত্যঙ্গের সমন্বিত কর্মের ফল । উল্লেখ্য, মানুষকে কথা বলতে সাহায্য করাই এই সমস্ত প্রত্যঙ্গের এক মাত্র কাজ নয় , আরও বহুবিধ কাজ তাদের করতে হয় । প্রশ্ন এই — মানুষের এই বাক্-সক্ষমতা কি প্রকৃতির দান ? মানুষ কি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জন করেছে এই সক্ষমতা ? বিবর্তনবাদীরা বলবেন — হ্যাঁ । কিন্তু আর একদল বিজ্ঞানী আছেন যারা মনে করেন , শুধু প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এতো জটিল ও উন্নত সক্ষমতা অর্জন কর...

হৃদয়-দর্পনে দেখা

Image
মানুষ নিজের মুখ নিজের চোখে দেখতে পারে না । আয়নায় মুখাবয়বের যে প্রতিকৃতি সে দেখে তা আসলে প্রতিবিম্ব । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘হোয়াট ইউ আর ইউ ডু নট সি, হোয়াট ইউ সি ইজ ইওর শ্যাডো’ (স্ট্রে বার্ডস) । অর্থাৎ, আমরা যা, তা আমরা দেখতে পারি না, যা দেখি তা আসলে ছায়া । আমরা কেউ-ই নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারি না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা অন্য কোথাও প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয় । তাই নিজের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিফলক । প্রতিফলক হতে পারে দর্পণ বা আয়না যা আলো প্রতিফলিত করে । কিন্তু দর্পণে আমরা কী দেখি? আসলে যা, তা, না কি যা হতে চাই, তা । আয়নায় নিজেকে দেখা কি ত্রুটিপূর্ণ নয়? ইকো অ্যান্ড নার্সিসাস (খন্ডিত)/জন ওয়াটারহাউস আয়না আবিস্কারের আগে মানুষ দিঘির শান্ত জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে বিস্মিত হত । চৈতন্যচরিতামৃতে আছে, পুস্করিণীর পরিস্কার জলে নিজেকে প্রতিফলিত দেখে কৃষ্ণ বিস্মিত হয়ে বলছেন — অপরিকলিতপূর্বঃ কশ্চমৎকারকারী …, আমি এতো সুন্দর! আমার এই আশ্চর্য মধুরতা আমি আগে তো কখনও দেখিনি । সত্যি বলতে কী, আমার মনে এখন এই মাধুর্য আস্বাদন করার লোভ হচ্ছে । কিন্তু প্রতিবিম্বকে তো আস্বাদন কর...