Posts

Showing posts with the label প্রেম

হৃদয়-দর্পনে দেখা

Image
মানুষ নিজের মুখ নিজের চোখে দেখতে পারে না । আয়নায় মুখাবয়বের যে প্রতিকৃতি সে দেখে তা আসলে প্রতিবিম্ব । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘হোয়াট ইউ আর ইউ ডু নট সি, হোয়াট ইউ সি ইজ ইওর শ্যাডো’ (স্ট্রে বার্ডস) । অর্থাৎ, আমরা যা, তা আমরা দেখতে পারি না, যা দেখি তা আসলে ছায়া । আমরা কেউ-ই নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারি না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা অন্য কোথাও প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয় । তাই নিজের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিফলক । প্রতিফলক হতে পারে দর্পণ বা আয়না যা আলো প্রতিফলিত করে । কিন্তু দর্পণে আমরা কী দেখি? আসলে যা, তা, না কি যা হতে চাই, তা । আয়নায় নিজেকে দেখা কি ত্রুটিপূর্ণ নয়? ইকো অ্যান্ড নার্সিসাস (খন্ডিত)/জন ওয়াটারহাউস আয়না আবিস্কারের আগে মানুষ দিঘির শান্ত জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে বিস্মিত হত । চৈতন্যচরিতামৃতে আছে, পুস্করিণীর পরিস্কার জলে নিজেকে প্রতিফলিত দেখে কৃষ্ণ বিস্মিত হয়ে বলছেন — অপরিকলিতপূর্বঃ কশ্চমৎকারকারী …, আমি এতো সুন্দর! আমার এই আশ্চর্য মধুরতা আমি আগে তো কখনও দেখিনি । সত্যি বলতে কী, আমার মনে এখন এই মাধুর্য আস্বাদন করার লোভ হচ্ছে । কিন্তু প্রতিবিম্বকে তো আস্বাদন কর

শূন্য করিয়া রাখ তোর বাঁশি

Image
‘আমার এ যে বাঁশের বাঁশি, মাঠের সুরে আমার সাধন’—বাঁশি সাধারণত বাঁশেরই হয়, কাঠের হয় না । ।   বাঁশি হতে হলে ভিতরটা ফাঁকা থাকতে হয় । বাঁশিতে আরও থাকতে হয় ছিদ্র যেখান দিয়ে সুর বেরিয়ে আসে । ছিদ্রবিহীন বাঁশি, বাঁশি নয় । বাঁশি ফুঁ দিয়ে বাজাবার যন্ত্রবিশেষ । বাঁশিতে থাকে ছয়টি ছিদ্র যা মানুষের দুই চোখ, দুই কান, এবং দুই নাকের প্রতিরূপ । এইসব ছিদ্রের ওপর খেলা করে নমনীয় আঙুল । আর থাকে একটি বড় ছিদ্র যা মুখের প্রতিরূপ । এই ছিদ্র স্পন্দিত হয় কম্পমান ঠোটের স্পর্শে । বাঁশিকে মনে করা হয় মানুষের প্রতীক । ইংরেজি ‘ গীতাঞ্জলি ’- তে রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয় এই কল্পনা দিয়ে যে , ঈশ্বর হলেন একজন বাঁশিবাদক , আর কবি নিজে তাঁর হাতের বাঁশি। এই বাঁশিবাদকের উদ্দেশে কবি র  অঞ্জলি   — You have made me endless, such is Your pleasure. This frail vessel You empty again and again, and fill it ever with fresh life. This little flute of a reed You have carried over hills and dales and have breathed through it melodies eternally new. আমারে তুমি অশেষ করেছ , এমনি লীলা তব – ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব

রঙে রঙে বোনা

Image
দৃষ্টিক্ষম মানুষের জন্য ঈশ্বরের সুন্দরতম উপহার হচ্ছে রং । জলে, স্থলে, আকাশে সর্বত্র রঙের প্রাচুর্য । চারপাশে যা-কিছু আমাদের চোখে পড়ে তা আসলে বিভিন্ন রঙের পোঁচ  মাত্র । রং সব কিছুকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে । রংবিহীন সৌন্দর্য যেন আমাদের নয়, অন্য কোনও জগতের । সেই আদিম কাল থেকেই মানুষ প্রকৃতির রঙের পরিবেষ্টনে প্রতিপালিত হয়ে আসছে । তাই মানুষের জীবনে রঙের প্রভাব অপরিসীম । রং এক ধরণের শক্তি যা মানুষের শরীর , মন , আবেগকে নানাভাবে প্রভাবিত করে । যেমন , লাল রং দেহে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে , হৃদস্পন্দন দ্রুততর করে । নীল রং লালের বিপরীত — দেহে প্রশান্তি আনে , মনে প্রেরণা সঞ্চার করে । পাশ্চাত্যের বহু দেশে ‘কালার থেরাপি’ ব্যবহার করা হয় দেহ-মনের রোগ নিরাময়ে । রঙের মাধ্যমে মানুষ তার মনোভাব প্রকাশ করতে পারে । অনেক সময়, যে-কথা বাক্য দিয়ে প্রকাশ করা যায় না, তা রং দিয়ে প্রকাশ করা যায় । চিত্রশিল্পীরা যেমনটা করে থাকেন তাঁদের চিত্রকর্মে । রং এক গভীর রহস্যজনক ভাষার নাম । রং মানুষের ‘নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন’ - এর ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে । এই ভাষায় কথা বলতে হলে রঙের অর্থ জানতে হয় । বলাবাহুল্য , র

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

Image
অমাবস্যা কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি । এই সময় চাঁদকে একেবারেই দেখা যায় না । মনে হয় চাঁদ আকাশে নেই । কিন্তু তা ঠিক নয় । চাঁদ সারাদিন আমাদের চোখের সামনেই থাকে, কিন্তু এক রহস্যময় আলোর পর্দার আড়ালে । তাই চাঁদকে আমরা দেখতে পাই না । অমাবস্যায় চাঁদ ও সূর্য একসঙ্গে উঠে এবং একই সঙ্গে ডুবে । অর্থাৎ সারা দিন তারা একসঙ্গে কাটায় এবং একসঙ্গে আমাদের আকাশ ভ্রমণ করে । কিন্তু সূর্যের চোখ ঝলসানো আলোয় চাঁদকে দেখা যায় না । রাতের বেলাতেও চাঁদ ও সূর্য এক সঙ্গে থাকে । এবং সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয় চাঁদের গায়ে । কিন্তু ততক্ষণে চাঁদ ও সূর্য উভয়ই ডুব দেয় দিগন্তের নীচে । তাই আমরা তাদের দেখতে পাই না । অমাবস্যায় সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী একই রেখা বরাবর সারিবদ্ধ হয় । চাঁদ চলে আসে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে । ঘটে তিন জ্যোতিষ্কের কক্ষপথের সংযোগ । এমন অবস্থায় চাঁদ ও সূর্য ঠিক যেন মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে । জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় এদের তখন বলা হয় ‘সিজিজি’ ( syzygy ), অর্থাৎ কক্ষপথের যুগল । কক্ষপথের যুগল পরস্পরের প্রতি প্রণয়াকাঙ্খা প্রকাশ করে । সূর্য তার কিরণ বর্ষণ করে চাঁদের গায়ে, আর চাঁদ প্রতিদান হিসাবে বিম্বিত আলো

অন্ধকার ও ইন্দ্রিয় অনুভূতি

মানুষ তার চার পাশের জগৎ সম্পর্কে জানতে পারে যে দেহযন্ত্রের সাহায্যে তার নাম ইন্দ্রিয় । পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে মানুষের শরীরে : চক্ষু (দর্শনেন্দ্রিয়), ত্বক (স্পর্শেন্দ্রিয়), কর্ণ (শ্রবণেন্দ্রিয়), জিহ্বা (রসনেন্দ্রিয়) ও নাসা (ঘ্রাণেন্দ্রিয়) । পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রধান কাজ আমাদের দেহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে দর্শনেন্দ্রিয়, আর সবচেয়ে দুর্বল সম্ভবত ঘ্রাণেন্দ্রিয় । তবে এরা একে অপরের সম্পূরক । একটি ইন্দ্রিয় দুর্বল হলে অন্য ইন্দ্রিয় আরও জোরালো হয়ে উঠে । এই কারণেই দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষের অন্য ইন্দ্রিয়গুলি প্রখর থাকে । রাতের অন্ধকারে যখন আমাদের ভিজ্যুয়াল সেন্স বা দর্শনেন্দ্রিয় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, তখন অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলো সাময়িকভাবে আরও প্রবল হয়ে উঠে । স্পর্শ-, ঘ্রাণ-, বিশেষত শ্রবণ-অনুভূতি অনেক বেড়ে যায় । অন্ধকারে শব্দ ও নৈঃশব্দ্য উভয়েরই অ্যা মপ্লিফিকেশন বা বিবর্ধন ঘটে । তাই রাতের বেলায় আকাশ, নক্ষত্র, বৃক্ষ, ঝর্ণা, নদী, সমুদ্র মুখর হয়ে উঠে । মহাকাশের ‘ নৈঃশব্দ্য - সংগীত ’ শোনা যায় কেবল রাতের অন্ধকারেই । অন্ধকারে রসনেন্দ্রিয় ও ঘ্রাণেন্দ্রিয় শক্তি