অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

অমাবস্যা হল কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি, যখন চাঁদ সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। মনে হতে পারে, চাঁদ যেন হারিয়ে গেছে, কিন্তু আসলে সে সূর্যের তীব্র আলোয় আড়াল হয়ে থাকে। সূর্যের আলোর বিপুলতা চাঁদের উপস্থিতিকে মুছে দেয়, ফলে আমরা তাকে দেখতে পাই না

অমাবস্যার দিনে সূর্য ও চাঁদ একইসঙ্গে উদিত হয় এবং অস্ত যায়। তারা সারাদিন পাশাপাশি থেকে আকাশে পরিভ্রমণ করলেও সূর্যের উজ্জ্বল দীপ্তিতে চাঁদ অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে। রাতেও তাদের অবস্থান কাছাকাছি থাকে, তবে তখনও চাঁদের গায়ে সূর্যের আলো পড়লেও তা আমাদের চোখে ধরা দেয় না, কারণ তখন তারা দুজনেই দিগন্তের ওপারে অস্ত যায়

এই দিনে সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী একই সরল রেখায় অবস্থান করে, যেখানে চাঁদ সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চলে আসে। এটি এক মহাজাগতিক সংযোগ, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সিজিজি’ (syzygy) বা কক্ষপথের যুগল নামে পরিচিত। এসময় চাঁদ ও সূর্য যেন পরস্পরের সান্নিধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকে, এক অদ্ভুত মহাজাগতিক সামঞ্জস্যে

এটি এক মহাজাগতিক প্রেমের রূপক, যেখানে সূর্য তার কিরণ চাঁদের ওপর বর্ষণ করে, আর চাঁদ সেই আলো প্রতিফলিত করে সূর্যের প্রতি তার নিবেদন জানায়। বাংলা ভাষায় অমাবস্যাকে বলা হয় ‘সূর্যেন্দু-সংগম’, অর্থাৎ সূর্য ও চাঁদের মিলন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘conjunction’ বলা হয়, যা তাদের মহাজাগতিক সংযুক্তির প্রতীক

পূর্ণিমার চিত্র একেবারে বিপরীত। সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন চাঁদের উদয় ঘটে। তারা একসঙ্গে আকাশে বিচরণ করে না। সারারাত চাঁদ তার পূর্ণ রূপে আলোকিত থাকে, কারণ তখন পৃথিবী চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থান করে, আর চাঁদ সূর্য থেকে দূরে সরে যায়। এই দূরত্বই যেন তাদের বিরহের চিহ্ন

অতএব, অমাবস্যা চন্দ্র-সূর্যের মহাজাগতিক মিলনের তিথি আর পূর্ণিমা তাদের বিরহের কালবেলা আর পূর্ণিমার চাঁদ যেন বিরহের অনলে ঝলসানো হৃদয় 


writer of the blog


অসীম দে
গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা 

Popular posts from this blog

শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়

সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশ — সৃষ্টিতত্ত্বের মূলভাব

তেলের সামাজিক মাহাত্ম্য

ঈশ্বর, প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

রাসলীলা মাহাত্ম্য

আঁধারের রূপ ও বিপন্নতা

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

হৃদয়-দর্পনে দেখা

সূর্য উপাসনা