অন্ধকার ও ইন্দ্রিয় অনুভূতি
মানুষ তার চার পাশের জগৎ সম্পর্কে
জানতে পারে যে দেহযন্ত্রের সাহায্যে তার নাম ইন্দ্রিয়। পাঁচটি
ইন্দ্রিয় রয়েছে মানুষের শরীরে : চক্ষু (দর্শনেন্দ্রিয়),
ত্বক (স্পর্শেন্দ্রিয়), কর্ণ (শ্রবণেন্দ্রিয়), জিহ্বা (রসনেন্দ্রিয়) ও নাসা (ঘ্রাণেন্দ্রিয়)। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের
প্রধান কাজ আমাদের দেহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে দর্শনেন্দ্রিয়, আর সবচেয়ে দুর্বল সম্ভবত
ঘ্রাণেন্দ্রিয়। তবে এরা একে অপরের সম্পূরক। একটি ইন্দ্রিয় দুর্বল
হলে অন্য ইন্দ্রিয় আরও জোরালো হয়ে উঠে। এই কারণেই দৃষ্টিশক্তিহীন
মানুষের অন্য ইন্দ্রিয়গুলি প্রখর থাকে।
রাতের অন্ধকারে যখন আমাদের ভিজ্যুয়াল
সেন্স বা দর্শনেন্দ্রিয় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, তখন অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলো সাময়িকভাবে আরও
প্রবল হয়ে উঠে। স্পর্শ-, ঘ্রাণ-, বিশেষত শ্রবণ-অনুভূতি
অনেক বেড়ে যায়।
অন্ধকারে শব্দ ও নৈঃশব্দ্য উভয়েরই অ্যামপ্লিফিকেশন বা বিবর্ধন ঘটে। তাই রাতের বেলায় আকাশ, নক্ষত্র, বৃক্ষ, ঝর্ণা, নদী, সমুদ্র মুখর হয়ে
উঠে। মহাকাশের ‘নৈঃশব্দ্য-সংগীত’ শোনা যায় কেবল রাতের অন্ধকারেই।
অন্ধকারে রসনেন্দ্রিয় ও ঘ্রাণেন্দ্রিয়
শক্তিশালী হয়ে উঠে। তখন খাদ্যদ্রব্যের রুচিকর স্বাদ ও স্বাদু গন্ধ বেড়ে যায়। আর সে কারণেই
অস্পষ্ট আলোয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয় রেস্তঁরায়। মানুষের
ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের এই বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনায় রেখেই যেন সুগন্ধি সাদা ফুল রাতে
ফোটে।
অন্ধকার মানুষের স্পর্শানুভূতি বাড়িয়ে
দেয়। অন্য কারও উষ্ণ ত্বকের মসৃণ তটরেখা বরাবর আলতোভাবে ছুঁয়ে হাত চালনা
করলে যে রোমাঞ্চ অনুভূত হয় তা বিস্ময়করভাবে বেড়ে যায় রাতের অন্ধকারে। আর সে কারণেই রতিক্রিয়ার সময় ব্লাইন্ডফোল্ড দিয়ে চোখ বেঁধে রাখার কথা
বলা হয়।
রাত্রি যেন এক স্পর্শসুখের দেশ যেখানে কেবলই স্পর্শের আধিপত্য। যেখানে মনে হয়, অন্ধকারকে স্পর্শ করা যায়। আধাঁরের গায়ে গায়ে পরশ বুলিয়ে সারা রাত তারা ফোটানো যায়। যেন অন্ধকারের নগ্ন বুক বুকে টেনে নিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা যায়। ▣