Posts

রাজনৈতিক আকাঙক্ষার বিশ্লেষণ

Image
মানুষ অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে — তা হল সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা , যা কখনও সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয় না। এই আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে সারা জীবন অস্থির রাখে এবং এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগায় । মানুষের আকাঙ্ক্ষার ধরন নানাবিধ , তবে সব আকাঙ্ক্ষাই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশিষ্ট ইংরেজ চিন্তাবিদ , দার্শনিক ও প্রবন্ধকার বার্ট্রান্ড রাসেল ১৯৫০ সালের নোবেল বক্তৃতায় চারটি আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করেন , যেগুলো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই আকাঙ্ক্ষাগুলো হল — অর্জনলিপ্সা , প্রতিদ্বন্দ্বিতা , অহমিকা এবং ক্ষমতাপ্রীতি । অর্জনলিপ্সা: অর্জনলিপ্সা হল সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জনের ইচ্ছা। এটি মৌলিক চাহিদা পূরণ থেকে শুরু হয়ে ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। একটি অর্জন হলে আরেকটি চাই — এভাবেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে চলে। তবে অর্জনের এই আকাঙ্ক্ষা কখনও সম্পূর্ণ তৃপ্ত হয় না , বরং নতুন নতুন লক্ষ্য তৈরি করে । প্রতিদ্বন্দ্বিতা: প্রতিদ্বন্দ্বিতার আকাঙ্ক্ষা অনেক সময় অর্জনলিপ্সার চেয়েও ক্ষতিকারক হতে পারে। বিশ্বের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে , প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে , ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে , ...

স্বর্গ নরক

Image
মানুষের চিরকালের জিজ্ঞাসা — মৃত্যুর পরে আমার কী হবে ? জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার বলেছেন , ‘ মৃত্যুর পরে তুমি তা-ই হবে যা ছিলে তোমার জন্মের আগে ’ । জন্মের আগে যদি প্রকৃতির অংশ হয়ে থাকি তাহলে মৃত্যুর পরে তা-ই  হব । কারণ আমাদের দেহের সমস্ত নির্মাণ সামগ্রী আসে প্রকৃতি থেকে এবং মৃত্যুর পরে তা প্রকৃতিতে ফেরত যায় । আমাদের দেহ পৃথিবীর দান । তাই পৃথিবীতে ফেরত যায় । কিন্তু আমাদের চৈতন্য বা আত্মা স্বর্গলোকের ধন । সুতরাং মৃত্যুর পরে সকল আত্মা স্বর্গে ফেরত যাবে সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী শুধু পুণ্যবান আত্মাই স্বর্গে যাবে, যে-কোনও আত্মা নয় । যে-মুহূর্তে তুমি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে এবং তোমার আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে যাবে , তোমার শরীর মরে যাবে । আর তোমার আত্মা কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ কিংবা নরকে যাবে । এমনটাই ধর্মশাস্ত্রের  বিধান । লক্ষণীয়, বলা হচ্ছে — বিচার হবে কৃতকর্মের নিরিখে, ধর্মবিশ্বাসের নিরিখে নয় । স্বর্গ ও নরক আমার আত্মা কত দিন স্বর্গে কিংবা নরকে থাকবে ? বলা হয় , অনন্তকাল । অনন্তকাল স্বর্গবাস সম্ভব হতে পারে নিজেকে দেবতায় রুপান্তরিত করতে পারল...

গাছের পাতা ও অনিঃশেষ জীবন

Image
গাছ ও পাতার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গাছের শাখা-প্রশাখায় উদগত সবুজ পাতা গাছের অস্তিত্বের অপরিহার্য অংশ। পাতা গাছকে জীবনশক্তি জোগায় , তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং ছায়া ও স্নিগ্ধতা প্রদান করে। গাছ ও পাতার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য — গাছ পাতাকে জন্ম দেয় , আর পাতা গাছকে পূর্ণতা দেয়। এমনকি পাতা ঝরে গেলেও তাদের সম্পর্ক অটুট থাকে , কারণ ঝরে যাওয়া পাতা পরবর্তীতে গাছের জন্য সার হিসেবে কাজ করে । পাতার খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া পাতার প্রধান কাজ হল গাছের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা। ক্লোরফিল বা পত্রহরিৎ নামক সবুজ রঞ্জক পদার্থ সূর্যের আলো শোষণ করে এবং জল ও বাতাসের সাহায্যে খাদ্য প্রস্তুত করে। তবে প্রতিকূল পরিবেশ , বিশেষত শীতকালে , দিন ছোট হয়ে আসায় আলো কমে যায় , ফলে পাতার কার্যকারিতা হ্রাস পায়। তখন গাছ পাতার সবুজ রং অপসারণ করে , আর লুকিয়ে থাকা উজ্জ্বল রং প্রকাশ পায়। এই সময় গাছে শুরু হয় এক বর্ণিল উৎসব। তবে এই রঙের খেলা বেশিদিন স্থায়ী হয় না , কারণ অবশেষে পাতা ঝরে পড়ে । পাতার বাস্পমোচন ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ পাতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বাস্পমোচন। গাছ মাটি থেকে জল শোষণ করে এবং পাতার মাধ্যমে তা বাষ্প হিসেবে নির্গত ক...

বৃক্ষরোপণ: প্রকৃতির প্রতি এক মহৎ দায়িত্ব

Image
১৯১৩ সালের দিকে ফ্রান্সের প্রভেন্স অঞ্চলের এক নির্জন পর্বতের পার্শ্বদেশে বাস করতেন এক মেষপালক। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের অকাল মৃত্যুর পর তিনি সমতল ভূমির কৃষিজীবন ত্যাগ করে এই অনাথ , পরিত্যক্ত এলাকায় আশ্রয় নেন। একসময় এই অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত কাঠকয়লা বিক্রি করে , যার জন্য নির্বিচারে গাছ কাটা হতো। ফলে এলাকাটি হয়ে পড়ে বৃক্ষহীন , মাটি হয়ে ওঠে অনুর্বর ও শুষ্ক । একাকী এক মেষপালকের সবুজ বিপ্লব মেষপালক উপলব্ধি করলেন , মাটি হারাচ্ছে প্রাণশক্তি , কারণ সেখানে নেই বৃক্ষের আশ্রয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন , গাছ রোপণ করবেন। প্রতিদিন তিনি একশোটি ওক গাছের বীজ বপন করতেন — লোহার স্টিক দিয়ে মাটিতে ছিদ্র করে তাতে বীজ পুঁতে দিতেন। তিন বছরে একাই তিনি এক লক্ষ গাছ লাগালেন। সময়ের পরিক্রমায় তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল — সমগ্র অঞ্চল সবুজ বনানীতে পরিণত হল , আর অনুর্বর মাটি ফিরে পেল নতুন প্রাণ। এই বিস্ময়কর ঘটনা ফরাসি লেখক জন জিওনো তুলে ধরেছেন তাঁর ‘দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ’ গ্রন্থে । দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ বৃক্ষরোপণের তাৎপর্য এই গল্প আমাদের শেখায় , বৃক্ষের অভাবে জমি পরিণত হয় মরুভূমিতে , আর ...

মাটির দারিদ্র

Image
মাটি প্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং সমগ্র প্রাণীকুলের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মাটি ও প্রাণের অস্তিত্ব পরস্পর নির্ভরশীল। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জীবজন্তুর অস্তিত্ব মূলত মাটির উপর নির্ভর করে , আর মাটির উর্বরতা নির্ভর করে তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর। সুস্থ মাটি গাছপালার স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে , যা পরোক্ষভাবে জীবজন্তু এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে , অবশেষে তা পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে । ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের উর্বর মাটির পাতলা স্তরই জীবনের ধারক। কিন্তু অবিবেচনাপ্রসূত চাষাবাদের ফলে এই উর্বরতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। জাতিসংঘের ২০১৭ সালের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে নিবিড় চাষাবাদের কারণে প্রতি বছর ২৪ বিলিয়ন টন উর্বর মাটি বিলীন হচ্ছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে ৬০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত উপরিস্তরের মাটি (টপ সয়েল) অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়বে । মাটির উর্বরতা হ্রাসের কারণ মাটির উর্বরতা হ্রাসের অন্যতম কারণ হল মাটিতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কমে যাওয়া। এর পেছনে প্রধান কারণ শস্য কাটার পর উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ , যেমন খড় , শিকড় , পাতা ইত্যাদি মাটিতে না ফেরানো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিষয়ে বলেন , ‘ আমরা মাটি...

প্রাকৃতিক কৃষির দর্শন ও মাসানবু ফুকুওকার ভাবনা

Image
মানুষের ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল কৃষির আবিষ্কার। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল মানুষ প্রাথমিকভাবে বনের প্রাকৃতিক ফলমূল সংগ্রহ করে জীবনধারণ করলেও একসময় ধীরে ধীরে কৃষির দিকে অগ্রসর হয়। সেই শুরুটা ছিল একেবারেই স্বাভাবিক ও সহজ ; জমি চাষ না করেই শুধু বীজ ছিটিয়ে ফসল ফলানো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে কৃষিপদ্ধতিতে — অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক পরিবর্তন । প্রায় বারো হাজার বছর পেরিয়ে আসা কৃষি আজ শিল্পায়িত হয়েছে। জনসংখ্যার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি এবং খাদ্যের বাড়তি চাহিদা মেটাতে কৃষিতে প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ ঘটেছে। ব্যবহৃত হচ্ছে উচ্চফলনশীল বীজ , গভীর চাষের যন্ত্র , রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশক। আধুনিক কৃষি অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহে কার্যকর হলেও , এর পরিণতিতে বিপন্ন হচ্ছে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা , হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় শস্যের জাত , এবং প্রকৃতি দূষিত হয়ে পড়ছে । এই প্রতিকূল ও বিপজ্জনক কৃষি-পরিস্থিতির প্রতিবাদে দাঁড়ান জাপানি দার্শনিক ও কৃষিবিদ মাসানবু ফুকুওকা । তিনি ঘোষণা করেন , প্রকৃতিকে জয় করে নয় , বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে তুলেই টিকে থাকার পথ খুঁজে নিতে হবে। তাঁর এই ...