Posts

অন্তর মম বিকশিত করো

Image
ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ গাছের ছবি আঁকতে ভালবাসতেন । তিনি গাছ আঁকতেন এত উঁচু করে যে , গাছ আকাশের নক্ষত্রদের ছাড়িয়ে যেত । তাঁর ‘দ্য স্টারি নাইট ’ — এমনই একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম। তবে সমালোচকরা বলতেন — যতসব ফালতু কল্পনা , গাছ কি কখনও অত উঁচু হতে পারে! ভ্যান গগ হাসতেন , বলতেন — আমি জানি , আর আমি এও জানি যে , ‘ The trees are the longings of the earth to transcend the stars. I am painting the longing, not the trees ’ । ভ্যান গগ আসলে গাছ আঁকতেন না , আঁকতেন ‘লংগিং’ বা ‘আকাঙ্ক্ষা’ —  আকাশের নক্ষত্রদের অতিক্রম করে মহাকাশের ঐশী সত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে উন্নত চেতনায় সমৃদ্ধ নতুন মানুষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। ‘দ্য স্টারি নাইট ’/ ভ্যান গগ পৃথিবীতে মানুষ সর্বাধিক বিবর্তিত প্রাণী । সেই হিসাবে মানুষ হতে পারত আরও  একটু দয়ালু, সহিষ্ণু, অহিংস — আরও একটু মানবিক । তবে সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি । মানুষ আজও পারে তার চেতনার বিবর্তন ঘটাতে । দেহের বিবর্তন থেমে গেলেও অন্তরচেতনার বিবর্তন আজও সম্ভব । কারণ মানুষের রয়েছে স্মৃতি ও কল্পনাশক্তি । চেতনার বিবর্তন জিন বা বংশাণুর উপর নির্ভর করে না

আকাশ–ভাঙা বান — একটি জাদুবাস্তব অভিজ্ঞতা

Image
বহুদূরের নীল আকাশ সহস্র প্রয়াসে নদী হয়ে নেমে এল পৃথিবীতে । প্লাবিত হল পথপ্রান্তর, দেশদেশান্তর । আকাশ-নীল জলের উচ্ছ্বাসে আচ্ছন্ন হল ধরাতল । শিল্পীর কল্পনায় সৃষ্টি হল এক মনোমোহন জাদুবাস্তব দৃশ্য — আকাশ-ভাঙা বান । এমনই এক দৃশ্যের ছবি এঁকেছেন কানাডা’র চিত্রশিল্পী রবার্ট গঞ্জালভেস । সাধারণ কোনও দৃশ্যে রং-তুলি-কল্পনার জাদুপরশ লাগিয়ে অসাধারণ জাদুবাস্তবতা সৃষ্টিতে তিনি পারদর্শী । মানুষ চিরকাল অসম্ভবকে বিশ্বাস করতে চেয়েছে, আর চেয়েছে নিজেকে উন্মুক্ত রাখতে সকল সম্ভাবনায় । মানব মনের সেই আকাংখা ব্যক্ত হয়েছে এই চিত্রটিতে । হিয়ার কামস্ দ্য ফ্লাড মানুষের মন চিরকাল তার দৈনন্দিন বাস্তবতা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে । আর সেই লক্ষ্যে জীবনের সর্বত্র, বিশেষ করে শিল্পে সাহিত্যে নৃত্যে সংগীতে জাদুবাস্তবতা সৃষ্টিতে প্রয়াসী হয়েছে । জাদুবাস্তবতা মানে জাদুর মাধ্যমে এক টুকরো পাথরকে ফুলে রূপান্তরিত করা নয়, বা একটি সাধারণ ঘটনাকে অলৌকিক ঘটনায় পরিনত করা নয় । জাদুবাস্তবতা হল স্বপ্ন ও বাস্তবের ফিউশন, বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসি’র সংমিশ্রণ । যখন কোনও সাধারণ ঘটনায় মিশ্রিত হয় ঐন্দ্রজালিক উপা

কোন আলোয় দেখবো তারে

Image
মানুষের চোখ শুধু আলোকিত বস্তুই দেখতে সক্ষম । আলোকরশ্মি কোনও বস্তুর উপর প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লেই সেই বস্তু আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয় । কিন্তু সব আলোতেই চোখ দেখতে সক্ষম নয় । যে আলোয় মানুষ দেখতে সক্ষম তার নাম ‘ দৃশ্যমান আলো ’ , আর তা সমগ্র আলোর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র । সব ধরনের ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন’ অর্থাৎ তড়িৎচুম্বক বিকিরণকেই আলো বলা হয় । সমগ্র আলোর খুব ছোট একটা অংশ — ‘ দৃশ্যমান আলো ’ । ‘ দৃশ্যমান আলো ’ যখন স্বচ্ছ প্রিজমের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন তা লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, আশমানি ও বেগুনি এই সাতটি রঙের বর্ণালীরূপে বিচ্ছুরিত হয় । প্রত্যেকটি রঙের রয়েছে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য ; এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেগুনি রঙের (৪০০ নানোমিটার), আর সবচেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল রঙের (৭০০ নানোমিটার ) । দৃশ্যমান বর্ণালী মানুষের ‘দৃশ্যমান আলো’র সীমানা বেগুনি থেকে লাল , অর্থাৎ ৪০০ নানোমিটার থেকে ৭০০ নানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে আবদ্ধ । বেগুনি রঙের আলোর চেয়ে ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং লাল রঙের আলোর চেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ

কে বেশি সুন্দর? নারী না পুরুষ?

Image
প্রকৃতি প্রাণীজগতে বিপরীত লিঙ্গের সমাবেশ ঘটিয়েছে । সবাইকে নানা ভাবে সাজিয়ে সুন্দর করেছে — পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় করেছে । ময়ূরের বর্ণাঢ্য পেখম , কোকিলের মিষ্টি কুহুগান , জোনাকির মায়াবী আলো , সিংহের অভিজাত কেশর , হরিণের হিরন্ময় শিং , বন মোরগের উদ্ধত লাল ঝুঁটি — এ সবই হল পুরুষপ্রাণীর অলংকার । প্রকৃতিতে স্ত্রীপ্রাণীর কোনও অলংকার নেই । প্রকৃতিতে স্ত্রীপ্রাণী নিরাভরণ — নিরলংকার ।  এর মানে এই নয় যে, পুরুষেরা নারীজাতির চেয়ে অধিক সুন্দর । এর মানে হল, সুন্দর হওয়ার জন্য পুরুষের প্রয়োজন বাড়তি সাজসজ্জা , কিন্তু নারী সুন্দর বিনা আভরণে । নারী এমনি সুন্দর । নারী , নারী হওয়ার কারণেই সুন্দর । নারী/ রবীন্দ্রনাথ  সুন্দর হওয়ার জন্য নারীর কোনও অলংকারের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সুন্দর হওয়ার জন্য পুরুষের চাই পেখম , কেশর , শিং , ঝুঁটি , ইত্যাদি অলংকার । কিন্তু দুর্ভাগ্য পুরুষ মানুষের ; পেখম , কেশর , শিং , ঝুঁটি — এসব কিছুই তার নেই। তাই একসময় , বিশেষ করে শ্রীকৃষ্ণের যুগে, পুরুষমানুষ নানা রকমের অলংকার পরত । সেটাই ছিল যুক্তিসংগত। কিন্তু পরবর্তী কালে, চতুর পুরুষ অলংকারের