অন্তর মম বিকশিত করো
‘দ্য স্টারি নাইট’/ভ্যান গগ |
চেতনার বিবর্তন জিন বা বংশাণুর উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে ব্যক্তির ইচ্ছা বা আকাঙ্খার উপর। মানুষের স্বাধীন আকাঙ্ক্ষা তার চেতনাকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে অথবা পথের ধূলায় নামিয়ে আনতে পারে। সবই নির্ভর করে ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের উপর।
চেতনা বিকাশের একটি
পথ হতে পারে, আপন অন্তরসত্তার মধ্যে মহাজগতের পরমসত্তার ঐশী স্বরূপকে ধারণ করার
আকাঙ্ক্ষা। সেই আকাঙ্ক্ষা পরিতুষ্ট হলে মানুষ জানবে, পরমসত্তার মধ্যে সে আছে এবং তার মধ্যে পরমসত্তা
রয়েছে। তখন অন্যের দিকে তাকিয়ে
দেখতে পাবে সেও পরমসত্তার মধ্যে রয়েছে এবং পরমসত্তা তার মধ্যে রয়েছে। তখন পরস্পরের প্রতি ক্ষমা, প্রীতি, সহিষ্ণুতা মানুষের জন্য সহজ হবে। এই সত্যের নাম আত্মতত্ত্ব বা আত্মদর্শন। এই সত্যকে নিজের অন্তরে যথার্থ
উপলব্ধি করার পথে বিকশিত হতে পারে মানুষের অন্তরচেতনা।
বাংলার মরমী কবি লালন সাঁই বলেছেন — ‘আত্মতত্ত্ব যেই জেনেছে, দিব্যজ্ঞানী সেই হয়েছে’। কিন্তু এখনকার মানুষের চেতনায় মনস্তত্ত্বই প্রধান, আত্মতত্ত্বের চর্চা প্রায় অনুপস্থিত। আত্মতত্ত্ব অনুধাবন ও অনুশীলনের মাধ্যমে আজকের মনস্তত্ত্বিক মানুষ থেকে উদ্ভূত হতে পারে বিকশিত চেতনাসম্পন্ন দিব্যজ্ঞানী নতুন আধ্যাত্মিক মানুষ।
অন্তরচেতনা বিকাশের সেই আকাঙ্ক্ষা ভ্যান গগ ব্যক্ত করেছেন আকাশস্পর্শী গাছ এঁকে, আর রবীন্দ্রনাথ ব্যক্ত করেছেন তাঁর প্রার্থনায় — ‘অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে’।