কোন আলোয় দেখবো তারে

মানুষের চোখ শুধু আলোকিত বস্তুই দেখতে সক্ষম আলোকরশ্মি কোনও বস্তুর উপর প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লেই সেই বস্তু আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয় কিন্তু সব আলোতেই চোখ দেখতে সক্ষম নয় যে আলোয় মানুষ দেখতে সক্ষম তার নাম দৃশ্যমান আলো, আর তা সমগ্র আলোর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র

সব ধরনের ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন’ অর্থাৎ তড়িৎচুম্বক বিকিরণকেই আলো বলা হয় সমগ্র আলোর খুব ছোট একটা অংশ দৃশ্যমান আলো দৃশ্যমান আলো যখন স্বচ্ছ প্রিজমের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন তা লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, আশমানি ও বেগুনি এই সাতটি রঙের বর্ণালীরূপে বিচ্ছুরিত হয়প্রত্যেকটি রঙের রয়েছে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য; এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেগুনি রঙের (৪০০ নানোমিটার), আর সবচেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল রঙের (৭০০ নানোমিটার)

visual spectrum
দৃশ্যমান বর্ণালী

মানুষের ‘দৃশ্যমান আলো’র সীমানা বেগুনি থেকে লাল, অর্থাৎ ৪০০ নানোমিটার থেকে ৭০০ নানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে আবদ্ধ বেগুনি রঙের আলোর চেয়ে ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং লাল রঙের আলোর চেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ্মির আলোয় মানুষের চোখ দেখতে পারে না আর এটাই হল মানুষের দৃষ্টিশক্তির সীমাবদ্ধতা ‘দৃশ্যমান আলো’র সীমানার বাইরে তড়িৎচুম্বক বিকিরণে রয়েছে আরও অনেক আলো, কিন্তু সে সব আলোয় মানুষ অন্ধ

প্রাণিজগতে এমন অনেক কীটপতঙ্গ, পাখি, জন্তু রয়েছে যারা সূর্যের অতিবেগুনি আলোয় দেখতে সক্ষম যেমন, প্রজাপতি দেখতে পায় অতিবেগুনি আলোয় ধারণা করা হয়, প্রজাপতির দৃশ্যমান আলোর পরিসীমা মানুষের পরিসীমার চেয়ে অনেক বেশী প্রশস্ত ফুলের পাপড়িতে থাকে নানা বর্ণের কারুকার্য যা শুধু অতিবেগুনি আলোতেই দেখা সম্ভব ফুলের সেই বর্ণিল কারুকার্য শুধু প্রজাপতির চোখেই ধরা পড়ে, মানুষের চোখে নয় কারণ মানুষের চোখ অতিবেগুনি আলোয় অন্ধ

দৃষ্টিশক্তির এ হেন সীমাবদ্ধতা নিয়ে মানুষের পক্ষে কি দেখা সম্ভব সেই পরম জ্যোতির্ময়কে যিনি বিশ্বের সকল আলোকের উৎস!

মানুষের দৃষ্টিশক্তি ‘দৃশ্যমান আলো’র সীমাবদ্ধ বর্ণালীতে বাঁধা তাই যিনি পরম জ্যোতির্ময়, বিশ্বের সকল জ্যোতির আধার, তাঁকে চোখের আলোয় দেখা যায় না, তিনি থাকেন মানুষের দর্শনসাধ্যের বাইরে কিন্তু অন্তরের আলো তো আর ‘দৃশ্যমান আলো’র মতো সীমাবদ্ধ বর্ণালীতে বাঁধা নয় তাই কেবল ভক্ত হৃদয়ের নির্মল আলোতেই দেখা সম্ভব সেই পরম জ্যোতির্ময়কে। 

অসীম দে
গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা 

Popular posts from this blog

শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়

সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশ — সৃষ্টিতত্ত্বের মূলভাব

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

তেল মাহাত্ম্য

ঈশ্বর, প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

রাসলীলা মাহাত্ম্য

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

সূর্য উপাসনা

হৃদয়-দর্পনে দেখা