Posts

অবজারভার ইফেক্ট ও রবীন্দ্রনাথ

Image
আমরা যখন আকাশে চাঁদের দিকে তাকাই তখন চাঁদ দেখতে পাই । কিন্তু যখন তাকাই না তখনও কি চাঁদ সেখানে থাকে ? প্রশ্নটি করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন । কারণ , সেই সময় ‘ অবজারভার ইফেক্ট ’ (পর্যবেক্ষক প্রভাব) নামে একটি তত্ত্বের কথা বলা হচ্ছিল পদার্থবিজ্ঞানের নতুন শাখা কোয়ান্টাম মেকানিক্স – এ । এই তত্ত্ব অনুসারে বস্তুর বিদ্যমানতা বা দশা নির্ভর করে একজন সচেতন পর্যবেক্ষকের উপর । পর্যবেক্ষক শুধু দেখার মাধ্যমে নিরীক্ষিত বাস্তবতাকে প্রভাবিত করতে পারে । সে-কারণেই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন , ‘ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো রহস্য — দেখবার বস্তুটি নয়, যে দেখে সেই মানুষটি ’ । সম্ভাবনা পর্যায়ের চাঁদ প্রশ্ন উঠেছিল — যখন আমরা চাঁদের দিকে তাকাই না তখনও কি চাঁদ সেথানে থাকে? ‘ অবজারভার ইফেক্ট ’ তত্ত্ব অনুসারে এই প্রশ্নের উত্তর — চাঁদ আমাদের দৃষ্টির আড়াল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে ।  ‘ প্রায় অস্তিত্বহীন ’ বলা হচ্ছে এই কারণে যে ,  “without a conscious observer, ‘matter’ exists in an undetermined state of probability”, অর্থাৎ , একজন সচেতন পর্যবেক্ষকের অবর্তমানে ‘ বস্তু ’ অস্তিমান থাকে এক অন

আসব যাব চিরদিনের সেই আমি

Image
১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ । সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুশয্যায় । জীবনের শেষ কয়েকটি মুহূর্ত । চলছে অবিরাম মন্ত্রোচ্চারণ — শান্তং শিবং অদ্বৈতম্ । কবি নিমীলিত নেত্রে ধ্যানমগ্ন । একজন শুভার্থী রবীন্দ্রনাথকে পরামর্শ দিলেন — ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন , এটাই যেন হয় আপনার শেষ জীবন , আর যেন ফিরে আসতে না হয় এই দুর্দশাগ্রস্ত পৃথিবীতে । রবীন্দ্রনাথ চোখ খুললেন । রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন , চুপ করুন , আমি প্রার্থনা করছি — হে ঈশ্বর , যে - জীবন তুমি আমাকে দিয়েছ তা এত সুন্দর যে , এই দান তুমি আমাকে বারবার দাও । আমি আবার দেখতে চাই সূর্যোদয় , সূর্যাস্ত , তারকাশোভিত রাত , ফুল , ডানামেলা পাখি , গাছ , নদী , পর্বত , মানুষ , ... । আমি ফিরে আসতে চাই বারবার , আরও বহুবার । এই পৃথিবী এত বিশাল , এত অফুরান প্রাচুর্যে পূর্ণ যে , আমার কাছে তা কোনও  দিনও  দীনহীন মনে হয়নি , পুরাতন মনে হয়নি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রয়াত হয়েছেন প্রায় আশি বছর হয়ে এল । ইতিমধ্যে তিনি অন্য কোনও পরিচয়ে ফিরে এসেছেন কি না তা কেউ জানে না । তবে কবির ফিরে আসার সেই আকাঙ্ক্ষা আজও ব্যক্ত হয় তাঁর গানে: আবার যদি ইচ্ছা ক

রবিরাগ অনুরাগ — প্রেক্ষিত সূর্যোদয় সূর্যাস্ত

Image
প্রতিদিন প্রভাতে সূর্য পূব আকাশে উদিত হয়ে যাত্রা শুরু করে। তারপর সারাদিন মাথার উপরের আকাশটা পরিভ্রমণ করে দিনশেষে পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়। পরদিন আবার পূব আকাশে উদিত হয়। এতে এমন একটি ধারণার সৃষ্টি হয় যে, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত ছিল ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত, যখন পূর্বতন প্রাশিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস বললেন, সূর্য পৃথিবীকে পরিক্রমণ করে না, বরং পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করে। তাই সূর্যের উদয় কিংবা অস্ত বলে কিছু থাকতে পারে না। সূর্যের উদয় কিংবা অস্ত মানুষের দৃষ্টিভ্রম মাত্র — প্রকৃত সত্য নয়, প্রতীয়মান সত্য মাত্র। এই বৈজ্ঞানিক তথ্যটি জানা সত্ত্বেও, আজও আমরা ‘সূর্যোদয়’ ও ‘সূর্যাস্ত’ শব্দ দু’টি নিঃসংকোচে ব্যবহার করে চলেছি। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর কথা বলা হয়েছে ২৭০০ বছর আগে রচিত ছান্দোগ্য উপনিষদে — ‘সূর্য কখনও অস্ত যায় না, উদিতও হয় না। লোকে যখন মনে করে যে সূর্য অস্ত যাচ্ছে, তখন তা কেবল দিনের শেষে পৌঁছে পথবদল করে, আর তখন তার নীচে হয় রাত্রি, আর অন্যদিকে দিন। তারপর যখন লোকে মনে করে যে সূর্য প্রাতে উঠছে, তখন তা কেবল রাত্রি

হাসির মর্যাদা

পৃথিবীতে মানুষই সম্ভবত একমাত্র প্রাণী যে হাসতে পারে । বিজ্ঞানীরা মনে করেন , কথা বলতে শেখার লক্ষ লক্ষ বছর আগে মানুষ হাসতে শিখেছে । আমাদের আদিম পূর্বপুরুষরা সম্ভবত হাসির মাধ্যমেই মনের অনেক ভাব আদানপ্রদান করত । হাসি মানুষের ইনস্টিংক্ট বা সহজাত প্রবৃত্তি , মানবশিশু জন্মের প্রায় পর - পরই হাসতে পারে । এমনকি যেসব শিশু জন্ম থেকেই অন্ধ ও বধির যারা কোনও দিন কাউকে হাসতে দেখেনি বা শুনেনি তারাও হাসতে পারে । মানুষ সাধারণত মনের ভাল লাগার অনুভূতি প্রকাশ করে হাসির মাধ্যমে । এই হাসি স্বত : স্ফূর্ত — অনায়াস ; সচেতন মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় । মানুষ অবশ্য স্বেচ্ছায় , স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও হাসতে পারে ; যেমন কপট হাসি । উভয় ক্ষেত্রেই মনে ভাল লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয় । কারণ উভয় ক্ষেত্রেই দেহে এন্ডরফিন নামের এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয় যার প্রভাবে দেহ-মনে ভাল লাগার অনুভূতি সঞ্চারিত হয় । অনেকে মনে করেন হাসি স্বাস্থ্যপ্রদ । বলা হয়ে থাকে , ‘প্রতিদিন হাসলে ডাক্তার দূরে থাকে’ , ‘হাসি শ্রেষ্ঠ ওষুধ’ , ইত্যাদি । মানুষের মন প্রফুল্ল থাকলে তার শারীরিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু আমেরিকার মে

ভালবাসা কারে কয়

‘ ভালবাসা ’ একটি মিলিত শব্দ ; ‘ ভাল ’ ও ‘ বাসা ’ এই শব্দ দুটির মিলনে এর সৃষ্টি । ‘ বাসা ’ বা ‘ বাস্ ’ ধাতুর একটি অর্থ ‘ সুগন্ধ ’ । কাউকে ভালবাসলে তার বুকে আতরের সুবাস হয় , তখন আলাদা সুগন্ধির প্রয়োজন হয় না । বর্তমানে ‘ ভালবাসা ’ শব্দটি ইংরেজি ‘ লাভ ’ ­ এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । কিন্তু দুশো বছর আগে বাংলা ভাষায় , ‘ লাভ ’, এই বিশিষ্ট অর্থে ‘ ভালবাসা ’ ব্যবহৃত হতো না , এমনটি জানিয়েছেন বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী শ্রীসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় । তখন এর অর্থ ছিল , ‘ ভাল বলে অনুভব করা , ভাল মনে করা ’ । ‘ ভাল - বাসা ’ শব্দের ‘ বাসা ’ বা ‘ বাস্ ’ ধাতু , ‘ বোধ করা ’ অর্থে প্রযুক্ত হতো । পুরাতন বাংলায় ‘ ভালবাসা ’ র পাশাপাশি ‘ মন্দ - বাসা ’, ‘ ভয় - বাসা ’, ‘ ঘৃণা - বাসা ’, ‘ লজ্জা - বাসা ’, ‘ দুঃখ - বাসা ’ প্রভৃতি শব্দ প্রচলিত ছিল । তখন সংস্কৃত শব্দ ‘ প্রীতি ’ র বাংলা সংস্করণ ‘ পিরীতি ’ ও ‘ পিরীত ’ শব্দ দুটি প্রেম - প্রনয় অর্থে বেশ জনপ্রিয় ছিল । এখন ‘ প্রেম বা প্রনয় বা ভালবাসা ’ অর্থে ভদ্র - সমাজে ‘ পিরীত ’ শব্দের ব্যবহার অশিষ্ট ব ’ লে বিবেচিত হয় । আজ ‘ পিরীত ’ শব্দটি আগের মর্যাদা হারি