রবিরাগ অনুরাগ — প্রেক্ষিত সূর্যোদয় সূর্যাস্ত
প্রতিদিন প্রভাতে সূর্য পূব আকাশে উদিত হয়ে যাত্রা শুরু করে। তারপর সারাদিন মাথার উপরের আকাশটা পরিভ্রমণ করে দিনশেষে পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়। পরদিন আবার পূব আকাশে উদিত হয়। এতে এমন একটি ধারণার সৃষ্টি হয় যে, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত ছিল ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত, যখন পূর্বতন প্রাশিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস বললেন, সূর্য পৃথিবীকে পরিক্রমণ করে না, বরং পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করে। তাই সূর্যের উদয় কিংবা অস্ত বলে কিছু থাকতে পারে না। সূর্যের উদয় কিংবা অস্ত মানুষের দৃষ্টিভ্রম মাত্র — প্রকৃত সত্য নয়, প্রতীয়মান সত্য মাত্র। এই বৈজ্ঞানিক তথ্যটি জানা সত্ত্বেও, আজও আমরা ‘সূর্যোদয়’ ও ‘সূর্যাস্ত’ শব্দ দু’টি নিঃসংকোচে ব্যবহার করে চলেছি।
সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর কথা বলা হয়েছে ২৭০০ বছর আগে রচিত ছান্দোগ্য উপনিষদে — ‘সূর্য কখনও অস্ত যায় না, উদিতও হয় না। লোকে যখন মনে করে যে সূর্য অস্ত যাচ্ছে, তখন তা কেবল দিনের শেষে পৌঁছে পথবদল করে, আর তখন তার নীচে হয় রাত্রি, আর অন্যদিকে দিন। তারপর যখন লোকে মনে করে যে সূর্য প্রাতে উঠছে, তখন তা কেবল রাত্রির শেষে পৌঁছে দিক পরিবর্তন করে, এবং নীচে দিন ও অপরদিকে রাত্রি হয়। বস্তুত সূর্য কখনই অস্ত যায় না।’
সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে না, বরং পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, এমন ধারণার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ৩৫০০ বছর আগে রচিত শাস্ত্রগ্রন্থ অথর্ববেদে — ‘আকাশ-ধরা রবিরে ঘেরি যেমন করি ফেরে, আমার মন ঘিরিবে ফিরি তোমার হৃদয়েরে।’ সূর্যমুখী পৃথিবী তার সকল নিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, আর আনন্দে আত্মকেন্দ্রিক-আবর্তনে মগ্ন থাকছে। ঘুর্ণমান পৃথিবী থেকে দেখা সূর্য যখন পূব দিগন্তে প্রথম দৃষ্টিগোচর হতে শুরু করে, তখন মনে হয় সূর্যোদয় হচ্ছে, আর যখন পশ্চিম দিগন্তে দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতে থাকে তখন মনে হয় সূর্যাস্ত হচ্ছে। বাস্তবে, সূর্য তখন সৌরজগতের কেন্দ্রে স্থির নিশ্চল থাকে।