ভালবাসা কারে কয়

ভালবাসাএকটি মিলিত শব্দ; ‘ভালবাসাএই শব্দ দুটির মিলনে এর সৃষ্টি বাসাবা বাস্ধাতুর একটি অর্থ সুগন্ধ কাউকে ভালবাসলে তার বুকে আতরের সুবাস হয়, তখন আলাদা সুগন্ধির প্রয়োজন হয় না

বর্তমানে ভালবাসাশব্দটি ইংরেজি লাভ­এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিন্তু দুশো বছর আগে বাংলা ভাষায়, ‘লাভ’, এই বিশিষ্ট অর্থে ভালবাসাব্যবহৃত হতো না, এমনটি জানিয়েছেন বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী শ্রীসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তখন এর অর্থ ছিল, ‘ভাল বলে অনুভব করা, ভাল মনে করা ভাল-বাসাশব্দের বাসাবা বাস্ধাতু, ‘বোধ করাঅর্থে প্রযুক্ত হতো পুরাতন বাংলায় ভালবাসার পাশাপাশি মন্দ-বাসা’, ‘ভয়-বাসা’, ‘ঘৃণা-বাসা’, ‘লজ্জা-বাসা’, ‘দুঃখ-বাসাপ্রভৃতি শব্দ প্রচলিত ছিল

তখন সংস্কৃত শব্দ প্রীতির বাংলা সংস্করণ পিরীতিপিরীতশব্দ দুটি প্রেম-প্রনয় অর্থে বেশ জনপ্রিয় ছিল এখন প্রেম বা প্রনয় বা ভালবাসাঅর্থে ভদ্র-সমাজে পিরীতশব্দের ব্যবহার অশিষ্ট বলে বিবেচিত হয় আজ পিরীতশব্দটি আগের মর্যাদা হারিয়েছে একদিন হয়তো ভালবাসাশব্দটিও আজকের মর্যাদা হারাবে তখন হয়তো ভালবাসারজায়গা দখল করে নিবে ইংরেজি লাভ উল্লেখ্য, ইংরেজি লাভশব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত লোভাবা লোভথেকে সেই যুগে, ‘আই লাভ ইউমানে ছিল আমি তোমায় লোভ করি এখন অবশ্য লাভ’, ‘লোভঅর্থে ব্যবহৃত হয় না

এ তো গেল ভালবাসার শব্দগত অর্থের কথা প্রশ্ন হচ্ছে, ভালবাসার মর্মগত অর্থ কী, অর্থাৎ ভালবাসা কারে কয়? প্রশ্নটি করেছেন রবীন্দ্রনাথ, উত্তরও দিয়েছেন তিনি, তবে আরও কিছু প্রশ্ন দিয়ে, যেমন, সে কি কেবলই যাতনাময়? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস? অর্থাৎ, এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর তিনি দেননি, বা এড়িয়ে গেছেন এর কারণ সম্ভবত এই যে, ভালবাসা কারে কয় এই প্রশ্নের কোনও একক উত্তর নেই আসলে ভালবাসা সম্পূর্ণ সাবজেক্টিভ, অর্থাৎ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিষয় একজনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে আরেকজনের অভিজ্ঞতা মিলে না, তাই একজনের জানার সঙ্গে আরেকজনের জানা এক হয় না আর সে­কারণেই ভালবাসা কারে কয়’ — এই প্রশ্নের উত্তর হয় ভিন্ন ভিন্ন

ভালবাসা সম্পর্কে বিস্তর গ্রন্থ রচিত হয়েছে সে­সব গ্রন্থ পাঠ করে ভালবাসার মনস্তত্ত্ব শারীরতত্ত্ব স্নায়ুতত্ত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে বিশাল জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব কিন্তু তাতে কেবল ‘ভালবাসা সম্পর্কে’ জানা হবে, ‘ভালোবাসা কারে কয়’, অর্থাৎ ভালোবাসা কীতা জানা হবে না এই দুই জানার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য কাউকে জানা আর কারও সম্পর্কে জানা এক জিনিস নয় কাউকে জানামানে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে জানা আর কারও সম্পর্কেজানা মানে অন্যের থেকে শুনে বা পড়ে জানা  ভালবাসা কারে কয়তা জানার উত্তম উপায় হচ্ছে বই না পড়ে, প্রেমে পড়া। 


অসীম দে
গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা 

Popular posts from this blog

শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়

সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশ — সৃষ্টিতত্ত্বের মূলভাব

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

তেল মাহাত্ম্য

ঈশ্বর, প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

রাসলীলা মাহাত্ম্য

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

সূর্য উপাসনা

হৃদয়-দর্পনে দেখা