Posts

অমৃতের অন্বেষা ও আধ্যাত্মিক অমরতা

মানুষ চিরকাল অমর হতে চেয়েছে । কিন্তু সেই অমৃতের সন্ধান মিলল কই যা পান করে মানুষ অমর হতে পারল ! মানুষ অমর হতে চেয়েছে , অথচ এই পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকারই কথা ছিল না । মানুষ পৃথিবীতে আসে এক অপরিণত অসহায় শিশু হয়ে । পিতা - মাতার ভালবাসার সুরক্ষা না পেলে মানুষ জন্মের পরই শিকারজীবী প্রাণীর খাদ্যে পরিণত হতো । বৈরী আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তার না ছিল শামুক কচ্ছপের মতো শক্ত বহিরাবরণ , না ছিল পাখির মতো পালক , পশুর মতো পশম , কিংবা মাছের মতো আঁশ । একজন পূর্ণপরিণত মানুষ বাঘ বা সিংহের চেয়ে দ্রুতবেগে দৌড়াতে পারে না । মানুষের দাঁত , হাত - পায়ের নখ যথেষ্ট প্রতিরক্ষা দিতে পারে না । তাই মানুষের অমর হওয়ার আকাংখা কোনও দিনই তেমন অর্থপূর্ণ ছিল না । পৃথিবীতে মানুষ টিকে গেছে শুধুই তার বুধিমত্তার কারণে । আর এই বুদ্ধির জোরেই সে চিরকাল অমর হতে চেয়েছে । কিন্তু আশাভঙ্গ ঘটায় ফিলাডেলফিয়া ’ র এক তরুণ বিজ্ঞানী লেওনার্দ হেইফ্লিক । তিনি ল্যাবরেটরিতে মানুষের ভ্রুণ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন , একটি কোষ প্রায় পঞ্চাশ বার বিভাজিত হওয়ার পর মারা যায় । কোনও ভাবেই এর বেশি বিভাজিত হয় না ।

যুক্তিহীনতা — মননে ও সৃজনে

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন — ‘ মানুষ যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী । ’ তিনি যে অর্থেই কথাটা বলে থাকুন না কেন , প্রত্যেক মানুষ যে নিজেকে যুক্তিবাদী মনে করে তা বোধহয় ঠিক । নিজের সমস্ত আচরণই নিজের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় । প্রকৃতপক্ষে , যুক্তি আলাদিনের চেরাগের মতো — যখন যার অধীন তার অভীষ্ট সিদ্ধ করে । মানুষ যখন যা করে তার পিছনে নিজস্ব যুক্তি থাকে । কোনও না কোনও যুক্তির সমর্থন ছাড়া মানুষ চলতে পারে না । একজন আস্তিক কিংবা নাস্তিক , একজন ধার্মিক কিংবা সন্ত্রাসী , একজন সাধু কিংবা ঠগ — প্রত্যেকেরই নিজের বিশ্বাস ও আচরণের পিছনে নিজস্ব যুক্তি থাকে । নিজস্ব যুক্তি থেকে আসে দ্বৈত - যৌক্তিকতা ; অর্থাৎ কোন আচরণটি যৌক্তিক তা ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন হয় । অনেক সময় , নিজের সুবিধার জন্য দুটি বিপরীত যুক্তিকেই গ্রহণ করা হয় । বলা বাহুল্য , এসব যুক্তি মানুষের তৈরি ; নিজেদের আচরণকে অন্তত নিজের কাছে যৌক্তিক করে তোলার উপায় মাত্র । প্রকৃতি মানুষের তৈরি যুক্তির ধার ধারে না । তাই প্রকৃতিকে বুঝতে হলে মানুষের তৈরি যুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে হয় । পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ মানু

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

Image
কোথাও আলো জ্বালতে গেলে দেখা যায় অন্ধকার আগেই সেখানে গিয়ে বসে আছে । তবে কি অন্ধকারের গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি ? না , তা নয় । আলোর গতি আছে , কিন্তু অন্ধকারের গতি নেই । কারণ অন্ধকার সদা সর্বত্র বিদ্যমান । মহাকাশের শূন্য স্থান , যেখানে কিছুই দেখা যায় না , আসলে ‘ ডার্ক এনার্জি ’- তে ভরা । সে কারণেই , আলো জ্বালতে হয় , কিন্তু অন্ধকার জ্বালাতে হয় না । অন্ধকার শাশ্বত । বলা হয়ে থাকে , অন্ধকার অজ্ঞতার প্রতীক । কিন্তু বিজ্ঞতার প্রতীক , নিশাচর প্যাঁচাকে জিজ্ঞেস করলে বলবে — অন্ধকার জ্ঞান ও বিজ্ঞতার প্রতীক । প্রকৃতপক্ষে , অন্ধকার হতে পারে বিভিন্ন রকমের , যেমন ভীতিপ্রদ অন্ধকার , প্রশমনকারী অন্ধকার , বিশ্রামপ্রদ অন্ধকার , প্রণয়ী - প্রণয়িনীর অন্ধকার । তবে অন্ধকার সম্পূর্ণভাবে শুভ বা অশুভ , মঙ্গল বা অমঙ্গল , বিজ্ঞতা বা অজ্ঞতা নয় । যে যে - ভাবে অন্ধকারকে দেখতে চায় , তার চোখে অন্ধকার সে - ভাবেই প্রতিভাত হয় । শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চোখে অন্ধকার প্রতিভাত হয়েছিল সৌন্দর্যময় সত্তা হিসেবে । তিনি অন্ধকারের রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন — “ হঠাৎ চোখের উপরে যেন সৌন্দর্যের তরঙ্গ খেলিয়া গেল । মনে হইল

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

Image
আধ্যাত্মিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘স্পিরিচুয়ালিটি’। বর্তমান যুগে ‘স্পিরিচুয়ালিটি’ শব্দটি পাশ্চাত্য দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ ওয়ার্ক , স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ লাভ , স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ ডেথ , স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ ন্যাচার , ইত্যাদি। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে — কী এই ‘স্পিরিচুয়ালিটি’ ? ‘ স্পিরিচুয়ালিটি ’ শব্দটির অর্থ চিরদিন একরকম থাকেনি , কালে কালে বিবর্তিত হয়ে নতুন নতুন অর্থ পরিগ্রহ করেছে । একসময় স্পিরিচুয়ালিটি বলতে বোঝানো হতো কেবলই ‘ ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক ’, বর্তমানে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ অন্তরতর সত্তার সঙ্গে সম্পর্ক ’ । সপ্তদশ শতাব্দীর ফ্রান্সে নতুন এক আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটে , যা বিশেষভাবে অন্তরের গভীরতম অনুভূতিগুলোকে ‘ স্পিরিচুয়ালিটি ’ র সঙ্গে যুক্ত করে । বলা হয় , ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার বিষয় । সেই সময় এ ধরণের কথা ছিল গির্জার অনুশাসনের বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রতিবাদ । তবে তা ছিল অসাম্প্রদায়িক , নিও-লিবারেল বা নব্য - উদারপন্থী রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । পরবর্তীতে , এই আধ্যাত্মিক চেতনা আরও বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয় , এবং বিংশ শতাব