Posts

ব্লক ইউনিভার্স — এক ক্রিয়াকালহীন মহাবিশ্বের নাম

Image
কবি বলেছেন — ‘ কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন । ’ কাল বা সময় যেন এক নদী যার স্রোত নিরন্তর বয়ে চলে ভবিষ্যৎ থেকে বর্তমান হয়ে অতীতের দিকে । সময়ের এই গতিময়তা আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও অধিকাংশ পদার্থবিজ্ঞানী তেমনটা মনে করেন না । সময় গতিশীল — এই ধারণায় একটি যৌক্তিক সমস্যা আছে । প্রশ্ন হচ্ছে , তাহলে সময়ের গতিবেগ কত ? সময় যদি গতিশীল হয় , তবে তা নিশ্চয়ই অন্য কোনও ‘ টাইম রেফারেন্স ’ বা ‘ প্রসঙ্গ সময় ’- এর সাপেক্ষে । নদী যেমন গতিশীল দুই তীরের সাপেক্ষে । কিন্তু সময় - নদীর তো কোনও তীর নেই । তবে কি সময় নিজের সাপেক্ষে প্রবাহিত হচ্ছে ? সেক্ষেত্রে সময়ের গতিবেগ দাঁড়াবে — সেকেন্ড / সেকেন্ড , অর্থাৎ সময় প্রতি সেকেন্ডে এক সেকেন্ড পথ অতিক্রম করছে । এ কথার কোনও অর্থ হয় না । সময়ের গতিবেগ নির্ণয় করতে হলে চাই এক্সটার্নাল বা বহিঃস্থ কোনও ‘ টাইম রেফারেন্স ’ । কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে এমন কোনও ঘড়ি নেই যার সাপেক্ষে সময়ের গতিময়তা নির্ণয় করা যায় । অতএব , সময়ের গতিময়তা যৌক্তিকভাবেই অসম্ভব । সময় নদীর জলের মতো প্রবাহিত হয় না । কোনও বস্তুকে গতিশীল বলা হয় যখন সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে প

অমৃতের অন্বেষা ও আধ্যাত্মিক অমরতা

মানুষ চিরকাল অমর হতে চেয়েছে । কিন্তু সেই অমৃতের সন্ধান মিলল কই যা পান করে মানুষ অমর হতে পারল ! মানুষ অমর হতে চেয়েছে , অথচ এই পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকারই কথা ছিল না । মানুষ পৃথিবীতে আসে এক অপরিণত অসহায় শিশু হয়ে । পিতা - মাতার ভালবাসার সুরক্ষা না পেলে মানুষ জন্মের পরই শিকারজীবী প্রাণীর খাদ্যে পরিণত হতো । বৈরী আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তার না ছিল শামুক কচ্ছপের মতো শক্ত বহিরাবরণ , না ছিল পাখির মতো পালক , পশুর মতো পশম , কিংবা মাছের মতো আঁশ । একজন পূর্ণপরিণত মানুষ বাঘ বা সিংহের চেয়ে দ্রুতবেগে দৌড়াতে পারে না । মানুষের দাঁত , হাত - পায়ের নখ যথেষ্ট প্রতিরক্ষা দিতে পারে না । তাই মানুষের অমর হওয়ার আকাংখা কোনও দিনই তেমন অর্থপূর্ণ ছিল না । পৃথিবীতে মানুষ টিকে গেছে শুধুই তার বুধিমত্তার কারণে । আর এই বুদ্ধির জোরেই সে চিরকাল অমর হতে চেয়েছে । কিন্তু আশাভঙ্গ ঘটায় ফিলাডেলফিয়া ’ র এক তরুণ বিজ্ঞানী লেওনার্দ হেইফ্লিক । তিনি ল্যাবরেটরিতে মানুষের ভ্রুণ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন , একটি কোষ প্রায় পঞ্চাশ বার বিভাজিত হওয়ার পর মারা যায় । কোনও ভাবেই এর বেশি বিভাজিত হয় না ।

যুক্তিহীনতা — মননে ও সৃজনে

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন — ‘ মানুষ যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী । ’ তিনি যে অর্থেই কথাটা বলে থাকুন না কেন , প্রত্যেক মানুষ যে নিজেকে যুক্তিবাদী মনে করে তা বোধহয় ঠিক । নিজের সমস্ত আচরণই নিজের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় । প্রকৃতপক্ষে , যুক্তি আলাদিনের চেরাগের মতো — যখন যার অধীন তার অভীষ্ট সিদ্ধ করে । মানুষ যখন যা করে তার পিছনে নিজস্ব যুক্তি থাকে । কোনও না কোনও যুক্তির সমর্থন ছাড়া মানুষ চলতে পারে না । একজন আস্তিক কিংবা নাস্তিক , একজন ধার্মিক কিংবা সন্ত্রাসী , একজন সাধু কিংবা ঠগ — প্রত্যেকেরই নিজের বিশ্বাস ও আচরণের পিছনে নিজস্ব যুক্তি থাকে । নিজস্ব যুক্তি থেকে আসে দ্বৈত - যৌক্তিকতা ; অর্থাৎ কোন আচরণটি যৌক্তিক তা ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন হয় । অনেক সময় , নিজের সুবিধার জন্য দুটি বিপরীত যুক্তিকেই গ্রহণ করা হয় । বলা বাহুল্য , এসব যুক্তি মানুষের তৈরি ; নিজেদের আচরণকে অন্তত নিজের কাছে যৌক্তিক করে তোলার উপায় মাত্র । প্রকৃতি মানুষের তৈরি যুক্তির ধার ধারে না । তাই প্রকৃতিকে বুঝতে হলে মানুষের তৈরি যুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে হয় । পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ মানু

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

Image
কোথাও আলো জ্বালতে গেলে দেখা যায় অন্ধকার আগেই সেখানে গিয়ে বসে আছে । তবে কি অন্ধকারের গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি ? না , তা নয় । আলোর গতি আছে , কিন্তু অন্ধকারের গতি নেই । কারণ অন্ধকার সদা সর্বত্র বিদ্যমান । মহাকাশের শূন্য স্থান , যেখানে কিছুই দেখা যায় না , আসলে ‘ ডার্ক এনার্জি ’- তে ভরা । সে কারণেই , আলো জ্বালতে হয় , কিন্তু অন্ধকার জ্বালাতে হয় না । অন্ধকার শাশ্বত । বলা হয়ে থাকে , অন্ধকার অজ্ঞতার প্রতীক । কিন্তু বিজ্ঞতার প্রতীক , নিশাচর প্যাঁচাকে জিজ্ঞেস করলে বলবে — অন্ধকার জ্ঞান ও বিজ্ঞতার প্রতীক । প্রকৃতপক্ষে , অন্ধকার হতে পারে বিভিন্ন রকমের , যেমন ভীতিপ্রদ অন্ধকার , প্রশমনকারী অন্ধকার , বিশ্রামপ্রদ অন্ধকার , প্রণয়ী - প্রণয়িনীর অন্ধকার । তবে অন্ধকার সম্পূর্ণভাবে শুভ বা অশুভ , মঙ্গল বা অমঙ্গল , বিজ্ঞতা বা অজ্ঞতা নয় । যে যে - ভাবে অন্ধকারকে দেখতে চায় , তার চোখে অন্ধকার সে - ভাবেই প্রতিভাত হয় । শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চোখে অন্ধকার প্রতিভাত হয়েছিল সৌন্দর্যময় সত্তা হিসেবে । তিনি অন্ধকারের রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন — “ হঠাৎ চোখের উপরে যেন সৌন্দর্যের তরঙ্গ খেলিয়া গেল । মনে হইল