Posts

বৃক্ষরোপণ

Image
১৯১৩-এর দিকে ফ্রান্সের প্রভেন্স অঞ্চলে এক পর্বতের পার্শ্বদেশে বাস করতেন এক মেষপালক । একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পর তিনি সমতল ভূমির কৃষিজীবন ছেড়ে এই নির্জন পরিত্যক্ত এলাকায় এসে বাস করতে শুরু করেন । এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের মূল পেশা ছিল কাঠকয়লা বিক্রি করা । কাঠকয়লা মানে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি কয়লা । সে জন্য বন থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হত । কালক্রমে এলাকাটি বৃক্ষহীন হয়ে পড়ে । ফলে সেখানকার মাটি হয় অনুর্বর ঊষর আর নিসর্গচিত্র হয় বর্ণহীন । মেষপালক বুঝতে পারলেন, মাটি মরে যাচ্ছে গাছের অভাবে । তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বৃক্ষরোপণ করবেন । প্রতিদিন তিনি ওক গাছের একশোটি বীজ বপন করতে লাগলেন । লোহার স্টিক দিয়ে মাটিতে ছিদ্র করে তাতে বীজ পুঁতে রাখতেন । এই ভাবে তিন বছরে তিনি একা একশো হাজার গাছ লাগান । কালক্রমে তার স্বপ্ন ফলপ্রসূ হয় । সবুজ বনানীতে ছেয়ে যায় গোটা এলাকা, নবজীবন ফিরে পায় ঊষর মাটি । এই অসাধারণ গল্পটি লিখে রেখে গেছেন ফরাসি লেখক জন জিওনো ( Jean Giono ) তাঁর ‘দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ’ বইতে । দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ এই গল্পের সারমর্ম হচ্ছে — বৃক্ষহীনতায় জমি পরিণত হয় বালু

মাটির দারিদ্র

Image
মাটি প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং সমস্ত পার্থিব প্রাণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ । মাটি ছাড়া প্রাণ হয় না, প্রাণ ছাড়া মাটি হয় না । মাটি ও প্রাণ একই সঙ্গে উদ্ভুত হয়েছে । পৃথিবীতে প্রায় সকল প্রাণের অস্তিত্ব নির্ভর করে মূলত মাটির উপর । আর মাটির প্রাণ-প্রতিপালন ক্ষমতা নির্ভর করে মাটির সুস্বাস্থ্যের উপর । সুস্থ মাটি নির্ধারণ করে গাছপালার স্বাস্থ্য, গাছপালার স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে জীবজন্তুর স্বাস্থ্য, যা নির্ধারণ করে মানুষ তথা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য । প্রকৃতপক্ষে, ভূত্বকের উপরাংশের উর্বর মাটির পাতলা স্তর দ্বারাই পৃথিবীতে প্রতিপালিত হয় জীবন । কিন্তু অবিবেচক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করায় ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে মাটির উর্বরতা । ২০১৭ সালে রাষ্ট্রসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নিবিড় চাষাবাদের কারণে প্রতি বছর ২৪ বিলিয়ন টন উর্বর মাটি হারিয়ে যাচ্ছে । যদি উর্বরতা হ্রাসের এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে ৬০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত উপরিস্তরের মাটি (টপ সয়েল) অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়বে । মাটির উর্বরতা হ্রাসের বড় কারণ মাটিতে জৈবপদার্থের পরিমান হ্রাস পাওয়া । আর জৈ

একটি খড়ে বিপ্লব ও প্রাকৃতিক কৃষি

Image
একদিন না-চষা জমিতে শুধু বীজ ছিটিয়ে ফসল ফলানোর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল আজকের কৃষি । তার পর অতিক্রান্ত হয়েছে প্রায় বারো হাজার বছর । ইতিমধ্যে জনসংখ্যা বেড়েছে জ্যামিতিক হারে । আনুপাতিক হারে বেড়েছে খাদ্যের চাহিদা । সে দিনের সেই কৃষিপদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না । তাই কৃষিপদ্ধতির ঘটেছে আমূল পরিবর্তন । আজ মানুষ ব্যবহার করছে উচ্চফলনশীল জাতের বীজ । গভীর চাষ দিয়ে ভাঙছে মাটি । উচ্চমাত্রায় প্রয়োগ করছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিষ । ফলে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের বিবর্তনের ধারায় প্রতিষ্ঠিত দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী শস্যের জাত । বিনষ্ট হচ্ছে মাটির তেজ — উর্বরাশক্তি । কলুষিত হচ্ছে পরিবেশ । আধুনিক বিজ্ঞানের অবদান সর্বনাশা এই কৃষিপদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাপানি দার্শনিক ও কৃষিবিদ মাসানবু ফুকুওকা । তিনি ঘোষণা করলেন, প্রকৃতিকে জয় করে বা ধ্বংস করে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহযোগিতা করেই আমাদেরকে টিকে থাকার কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে । তাই তিনি শোনালেন প্রাকৃতিক কৃষির কথা । মাসানবুর প্রাকৃতিক কৃষিব্যবস্থা চারটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । প্রথমত, জমি চাষ না

বাড়ি বদল

Image
গভীর রাতে এক চোর গৃহস্থের বাড়িতে সিঁধ কেটে প্রবেশ করল । গৃহকর্তা ঘুমোচ্ছিল । আসলে না , সে ঘুমের ভান করছিল । চোখ সামান্য খোলা রেখে দেখছিল , চোর কী করছে । অন্য কারও কাজে হস্তক্ষেপ করা তার স্বভাব নয় । তাছাড়া , চোর তো তার ঘুমে বাধা দিচ্ছে না , সে কেন চোরের কাজে বাধা দিবে! চোরকে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেওয়াই ভাল । গৃহকর্তাকে চোরের অদ্ভুত মনে হচ্ছিল । সব জিনিসপত্র ঘর থেকে বের করা হচ্ছে । মাঝে মাঝে কিছু জিনিস হাত থেকে পড়ে শব্দ হচ্ছে । তা সত্ত্বেও গৃহকর্তার ঘুম ভাঙছে না । একবার তার মনে হল , এ ধরণের ঘুম তো সম্ভব যখন কেউ জেগে ঘুমায় । কী অদ্ভুত মানুষ , কিছুই বলছে না! তার যা-কিছু ছিল ঘরে সবই বের করা হয়েছে । চোর সব জিনিসপত্র ঠেলা গাড়িতে তুলে বাড়ির দিকে চলছে । হঠাৎ মনে হল , কেউ তার পিছনে হাঁটছে । সে পিছন ফিরে দেখল , এই সেই মানুষ যে এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিল । সে তাকে বলল , ‘ তুমি কেন আমার পিছু নিয়েছ ?’ গৃহকর্তা বলল , ‘ না , আমি তো তোমার পিছু নেইনি , আমি বাড়িবদল করছি । তুমি আমার সব কিছু নিয়েছ , এখন ওই বাড়িতে আমি কী করব । তাই আমিও চলছি তোমার সঙ্গে । ’ চোর উদ্বিগ্ন হয়ে বলল , ‘ আমাকে ক্ষমা ক

নদী

Image
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণশক্তির টানে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ফিতাকারে নেমে আসা বিপুল জলরাশিকে নদী বলা হয় । নদীর থাকে উৎস, যেখান থেকে জলরাশি বইতে শুরু করে । পার্বতীয় বৃষ্টি বা বরফগলা জল হতে পারে নদীজলের উৎস । তা ছাড়া নদীর থাকে মোহনা, যেখানে নদী সাগরে মেশে । নদী এক বিস্ময়কর ব্যাপার । নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান লেখক হেরমান হেস তাঁর ‘সিদ্ধার্থ’ উপন্যাসে বলেছেন — নদী তার উৎসে, পর্বতশিখরে, জলপ্রপাতে, জলস্রোতে, মোহনায়, সর্বত্র একই সময় বর্তমান । নদী তাই ক্রিয়াকালহীন । তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ যুগপৎ ঘটমান ।    ব্লক ইউনিভার্স তত্ত্ব অনুসারে মানুষের জীবনও ক্রিয়াকালহীন । তার জীবনকালের সমস্ত ঘটনাবলী একই সময় সংঘটিত হয়ে একই সঙ্গে বিদ্যমান থাকে ব্লক-মহাবিশ্বের চতুর্মাত্রিক স্থানকালিক ধাত্রে । তা সত্ত্বেও, যে-জল নদীতে প্রবাহিত হয় তা কখনও এক জল নয় । নদীর জল সদা বহমান, সদা পরিবর্তনশীল; কখনওই স্থির নয় । সে কারণেই গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস বলেছিলেন, ‘কেউ একই নদীতে দুই বার নামতে পারে না । ’ কারণ তখন সে-নদী আর আগের নদী নয়, নতুন জলে নতুন নদী । নদীর জলের মূল উৎস সাগরে জল ।   সাগরে  জল সূর্যের স্পর্শে বাস্