Posts

রবীন্দ্রনাথ — একদা পূর্ণিমায়

Image
এক নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায় পদ্মার বুকে নৌকোঘরের ভিতর প্রদীপের আলোয় একটি বই পড়ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বইটি ছিল সৌন্দর্যতত্ত্ব বিষয়ক । একজন বিদেশী লেখকের লেখা। সৌন্দর্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছিল বইটিতে। যেমন, সৌন্দর্যের স্বরূপ ও প্রকৃতি কী ? সৌন্দর্য কি বস্তুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য , না কি মনের মাধুরী মেশানো সুন্দর অনুভূতি মাত্র ? সৌন্দর্য কি পরিমাপ করা সম্ভব ? সৌন্দর্য কি অঙ্গসৌষ্ঠব অর্থাৎ অঙ্গের বিভিন্ন অংশের প্রতিসাম্য ও সমানুপাত দিয়ে নির্ধারণ করা সম্ভব ? প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কি মানুষের তৈরি সৌন্দর্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর ? সৌন্দর্য সম্বন্ধে পন্ডিতদের তত্ত্বকথা পড়তে পড়তে শ্রান্ত হল কবির মন । তাঁর মনে হল, সৌন্দর্য যেন শব্দবণিকের তৈরি কোনও জিনিস যা বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন অলীক কোনও ধারণা । জ্যোৎস্নাধারায় এসো হঠাৎ দমকা হাওয়ায় প্রদীপের শিখাটি কেঁপে কেঁপে নিভে গেল । আর অমনি তরল জোছনাধারায় সারা ঘর প্লাবিত হল । বিস্ময়াভিভূত রবীন্দ্রনাথ বলে উঠলেন — The spirit of Beauty, how could you, whose radiance overbrims the sky, stand hidden behind a candle’s tiny flame? How could a few vain words from a book rise

নমস্কার নমস্তে — অভিবাদনে আধ্যাত্মিকতা

Image
নমস্কার একটি অভিবাদনসূচক শব্দ । প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ পরস্পরকে অভিবাদন জানায় এই শব্দটি দিয়ে । বিষয়টি আধুনিক ‘ হাই - হ্যালো ’ র মতো মনে হলেও ‘ নমস্কার ’ বা ‘ নমস্তে ’ বলে অভিবাদন জ্ঞাপন করার মধ্যে অন্যরকম তাৎপর্য নিহিত থাকে । ‘ নমস্কার ’ ও ‘ নমস্তে ’ শব্দ দুটি এসেছে সংস্কৃত ‘ নমস্ ’ থেকে । নমস্ + কৃ ( করা ) = নমস্কার , অর্থাৎ নমস্ করা । নমস্ + তে ( তোমাকে ) = নমস্তে , অর্থাৎ তোমাকে নমস্ । এবার দেখা যাক , সংস্কৃত ' নমস্ ' শব্দটির অর্থ কি । জার্মানি থেকে প্রকাশিত একটি সংস্কৃত - ইংরেজি অভিধানে ‘ नमस् ’ ( নমস্ ) শব্দটির মানে করা হয়েছে ‘adoration’, যার বাংলা অর্থ উপাসনা , শ্রদ্ধা , বন্দনা , আরাধনা , ইত্যাদি । প্রাচীন পারস্যের ভাষায় ‘ নামাজ ’ নামে একটি শব্দ ছিল যার অর্থ উপাসনা । সেই সময় অগ্নি উপাসনা সংক্রান্ত আচার - অনুষ্ঠানকে নামাজ বলা হত । ভাষাতত্ত্ববিদরা মনে করেন , সংস্কৃত ‘ নমস্ ’ এবং ফারসি ‘ নামাজ ’ শব্দ দুটি সমার্থক ও সমগোত্রীয় । উল্লেখ্য , সংস্কৃত ও ফারসি উভয়ই একই প্রত্ন - ইন্দো - ইউরোপীয় ভাষা গোত্রের অধিভুক্ত । তাই এই দুই ভাষাতে একই ধরনের মৌলিক শব্দ র

অন্তর মম বিকশিত করো

Image
ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ গাছের ছবি আঁকতে ভালবাসতেন । তিনি গাছ আঁকতেন এত উঁচু করে যে , গাছ আকাশের নক্ষত্রদের ছাড়িয়ে যেত । তাঁর ‘দ্য স্টারি নাইট ’ — এমনই একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম। তবে সমালোচকরা বলতেন — যতসব ফালতু কল্পনা , গাছ কি কখনও অত উঁচু হতে পারে! ভ্যান গগ হাসতেন , বলতেন — আমি জানি , আর আমি এও জানি যে , ‘ The trees are the longings of the earth to transcend the stars. I am painting the longing, not the trees ’ । ভ্যান গগ আসলে গাছ আঁকতেন না , আঁকতেন ‘লংগিং’ বা ‘আকাঙ্ক্ষা’ —  আকাশের নক্ষত্রদের অতিক্রম করে মহাকাশের ঐশী সত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে উন্নত চেতনায় সমৃদ্ধ নতুন মানুষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। ‘দ্য স্টারি নাইট ’/ ভ্যান গগ পৃথিবীতে মানুষ সর্বাধিক বিবর্তিত প্রাণী । সেই হিসাবে মানুষ হতে পারত আরও  একটু দয়ালু, সহিষ্ণু, অহিংস — আরও একটু মানবিক । তবে সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি । মানুষ আজও পারে তার চেতনার বিবর্তন ঘটাতে । দেহের বিবর্তন থেমে গেলেও অন্তরচেতনার বিবর্তন আজও সম্ভব । কারণ মানুষের রয়েছে স্মৃতি ও কল্পনাশক্তি । চেতনার বিবর্তন জিন বা বংশাণুর উপর নির্ভর করে না

আকাশ–ভাঙা বান — একটি জাদুবাস্তব অভিজ্ঞতা

Image
বহুদূরের নীল আকাশ সহস্র প্রয়াসে নদী হয়ে নেমে এল পৃথিবীতে । প্লাবিত হল পথপ্রান্তর, দেশদেশান্তর । আকাশ-নীল জলের উচ্ছ্বাসে আচ্ছন্ন হল ধরাতল । শিল্পীর কল্পনায় সৃষ্টি হল এক মনোমোহন জাদুবাস্তব দৃশ্য — আকাশ-ভাঙা বান । এমনই এক দৃশ্যের ছবি এঁকেছেন কানাডা’র চিত্রশিল্পী রবার্ট গঞ্জালভেস । সাধারণ কোনও দৃশ্যে রং-তুলি-কল্পনার জাদুপরশ লাগিয়ে অসাধারণ জাদুবাস্তবতা সৃষ্টিতে তিনি পারদর্শী । মানুষ চিরকাল অসম্ভবকে বিশ্বাস করতে চেয়েছে, আর চেয়েছে নিজেকে উন্মুক্ত রাখতে সকল সম্ভাবনায় । মানব মনের সেই আকাংখা ব্যক্ত হয়েছে এই চিত্রটিতে । হিয়ার কামস্ দ্য ফ্লাড মানুষের মন চিরকাল তার দৈনন্দিন বাস্তবতা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে । আর সেই লক্ষ্যে জীবনের সর্বত্র, বিশেষ করে শিল্পে সাহিত্যে নৃত্যে সংগীতে জাদুবাস্তবতা সৃষ্টিতে প্রয়াসী হয়েছে । জাদুবাস্তবতা মানে জাদুর মাধ্যমে এক টুকরো পাথরকে ফুলে রূপান্তরিত করা নয়, বা একটি সাধারণ ঘটনাকে অলৌকিক ঘটনায় পরিনত করা নয় । জাদুবাস্তবতা হল স্বপ্ন ও বাস্তবের ফিউশন, বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসি’র সংমিশ্রণ । যখন কোনও সাধারণ ঘটনায় মিশ্রিত হয় ঐন্দ্রজালিক উপা

কোন আলোয় দেখবো তারে

Image
মানুষের চোখ শুধু আলোকিত বস্তুই দেখতে সক্ষম । আলোকরশ্মি কোনও বস্তুর উপর প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লেই সেই বস্তু আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয় । কিন্তু সব আলোতেই চোখ দেখতে সক্ষম নয় । যে আলোয় মানুষ দেখতে সক্ষম তার নাম ‘ দৃশ্যমান আলো ’ , আর তা সমগ্র আলোর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র । সব ধরনের ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন’ অর্থাৎ তড়িৎচুম্বক বিকিরণকেই আলো বলা হয় । সমগ্র আলোর খুব ছোট একটা অংশ — ‘ দৃশ্যমান আলো ’ । ‘ দৃশ্যমান আলো ’ যখন স্বচ্ছ প্রিজমের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন তা লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, আশমানি ও বেগুনি এই সাতটি রঙের বর্ণালীরূপে বিচ্ছুরিত হয় । প্রত্যেকটি রঙের রয়েছে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য ; এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেগুনি রঙের (৪০০ নানোমিটার), আর সবচেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল রঙের (৭০০ নানোমিটার ) । দৃশ্যমান বর্ণালী মানুষের ‘দৃশ্যমান আলো’র সীমানা বেগুনি থেকে লাল , অর্থাৎ ৪০০ নানোমিটার থেকে ৭০০ নানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে আবদ্ধ । বেগুনি রঙের আলোর চেয়ে ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং লাল রঙের আলোর চেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ