Posts

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

Image
কোথাও আলো জ্বালতে গেলে দেখা যায় অন্ধকার আগেই সেখানে গিয়ে বসে আছে । তবে কি অন্ধকারের গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি ? না , তা নয় । আলোর গতি আছে , কিন্তু অন্ধকারের গতি নেই । কারণ অন্ধকার সদা সর্বত্র বিদ্যমান । মহাকাশের শূন্য স্থান , যেখানে কিছুই দেখা যায় না , আসলে ‘ ডার্ক এনার্জি ’- তে ভরা । সে কারণেই , আলো জ্বালতে হয় , কিন্তু অন্ধকার জ্বালাতে হয় না । অন্ধকার শাশ্বত । বলা হয়ে থাকে , অন্ধকার অজ্ঞতার প্রতীক । কিন্তু বিজ্ঞতার প্রতীক , নিশাচর প্যাঁচাকে জিজ্ঞেস করলে বলবে — অন্ধকার জ্ঞান ও বিজ্ঞতার প্রতীক । প্রকৃতপক্ষে , অন্ধকার হতে পারে বিভিন্ন রকমের , যেমন ভীতিপ্রদ অন্ধকার , প্রশমনকারী অন্ধকার , বিশ্রামপ্রদ অন্ধকার , প্রণয়ী - প্রণয়িনীর অন্ধকার । তবে অন্ধকার সম্পূর্ণভাবে শুভ বা অশুভ , মঙ্গল বা অমঙ্গল , বিজ্ঞতা বা অজ্ঞতা নয় । যে যে - ভাবে অন্ধকারকে দেখতে চায় , তার চোখে অন্ধকার সে - ভাবেই প্রতিভাত হয় । শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চোখে অন্ধকার প্রতিভাত হয়েছিল সৌন্দর্যময় সত্তা হিসেবে । তিনি অন্ধকারের রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন — “ হঠাৎ চোখের উপরে যেন সৌন্দর্যের তরঙ্গ খেলিয়া গেল । মনে হইল

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

Image
আধ্যাত্মিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘স্পিরিচুয়ালিটি’। বর্তমান যুগে ‘স্পিরিচুয়ালিটি’ শব্দটি পাশ্চাত্য দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ ওয়ার্ক , স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ লাভ , স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ ডেথ , স্পিরিচুয়ালিটি অ ফ ন্যাচার , ইত্যাদি। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে — কী এই ‘স্পিরিচুয়ালিটি’ ? ‘ স্পিরিচুয়ালিটি ’ শব্দটির অর্থ চিরদিন একরকম থাকেনি , কালে কালে বিবর্তিত হয়ে নতুন নতুন অর্থ পরিগ্রহ করেছে । একসময় স্পিরিচুয়ালিটি বলতে বোঝানো হতো কেবলই ‘ ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক ’, বর্তমানে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ অন্তরতর সত্তার সঙ্গে সম্পর্ক ’ । সপ্তদশ শতাব্দীর ফ্রান্সে নতুন এক আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটে , যা বিশেষভাবে অন্তরের গভীরতম অনুভূতিগুলোকে ‘ স্পিরিচুয়ালিটি ’ র সঙ্গে যুক্ত করে । বলা হয় , ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার বিষয় । সেই সময় এ ধরণের কথা ছিল গির্জার অনুশাসনের বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রতিবাদ । তবে তা ছিল অসাম্প্রদায়িক , নিও-লিবারেল বা নব্য - উদারপন্থী রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । পরবর্তীতে , এই আধ্যাত্মিক চেতনা আরও বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয় , এবং বিংশ শতাব

অগ্রহায়ণ — নববর্ষ থেকে নবান্ন

Image
‘ ও মা , অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি , আমার সোনার বাংলা । ’ রবীন্দ্রনাথ যে সোনার বাংলার কথা বলেছেন তা মূলত অঘ্রানের বাংলা । কারণ অঘ্রান মাসে বাংলার উর্বর জমিতে সোনা ফলে । বাংলার মাঠ ছেয়ে যায় সোনালি ধানে । পরনে সোনালি পরিধান , মুখে মধুর হাসি — মায়ের এই অপরূপ রূপ দেখে বাঙালির আনন্দের সীমা থাকে না । অগ্রহায়ণ বাঙালির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস ।   মুকুন্দরাম চক্রবর্তী (১৫৪০-১৬০০) বলেছেন  — ‘ ধন্য অগ্রহায়ণ মাস ,  ধন্য অগ্রহায়ণ মাস ।   বিফল জনম তার ,  নাই যার চাষ । ’   এই মাসে কৃষক ঘরে তুলে বছরের প্রধান শস্য আমন ধান ।   ঘরে ঘরে ধুম পড়ে আনন্দ উৎসবের ।   নতুন ধানের নতুন চালে তৈরি হয় নবান্ন ,  মিষ্টান্ন ।   বাংলার কৃষক মেতে উঠে উৎসবের আনন্দে । একদিন অগ্রহায়ণ ছিল বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস । নামেও তা স্পষ্ট । ‘ অগ্র ’ মানে প্রথম , ‘ হায়ন ’ মানে বছর । অর্থাৎ ‘ হায়ন ’ বা বছরের প্রারম্ভে থাকে যে মাস তার নাম অগ্রহায়ণ । অতীতে আমাদের নববর্ষের দিন ছিল পহেলা অগ্রহায়ণ । বৈশাখ কবে থেকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে গণ্য হল , সে বিষয়ে সামান্য মতানৈক্য রয়েছে । তবে অনেক ঐতিহাসি

কৃতজ্ঞতাবোধের চর্চা

হেমন্ত — হেম বরণ অর্থাৎ সোনালি রঙের ঋতু ; পাকা ধানের রঙে ধন্য । হেমন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ঋতুও বটে । আমরা বসন্ত ও গ্রীষ্মে যা বপন করি , হেমন্তে তার ফসল ঘরে তুলি । সেজন্য ধরিত্রী মাতাকে কৃতজ্ঞতা জানাই — নবান্ন করি , থ্যাঙ্কসগিভিং করি । তাই কৃতজ্ঞতার রং সোনালি । বলা হয়ে থাকে , কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের হৃদয়কে সমৃদ্ধ করে । শুধু তা - ই নয় , কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের সুস্থ জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলেও মনে করেন বিজ্ঞানীরা । সম্প্রতি , ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ( বার্কলে ) ও ইউসি ( ডেভিস )- এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে , যারা প্রতিনিয়ত কৃতজ্ঞতাবোধের চর্চা করেন , তারা অনেক রকমের উপকার পেয়ে থাকেন । যেমন :  শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমস এবং নিম্ন রক্তচাপ  উচ্চ স্তরের ইতিবাচক আবেগ  অধিক আনন্দ , আশাবাদ , ও সুখবোধ  অধিক ঔদার্য ও সমবেদনা  অপেক্ষাকৃত কম একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতাবোধ প্রত্যেক মানুষের জীবনে সাফল্য ও ভাল থাকার পিছনে থাকে অন্য কিছু মানুষের অবদান । সর্বোপরি থাকেন জগদীশ্বর । তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা যেতে পারে । প্রকৃতির রূপ , রস , সৌন্দর্য

নার্সিসাস — রূপান্তরিত ফুলের রূপকথা

Image
গ্রিক পুরাণের গল্পে নার্সিসাস নামে এক রূপবান যুবক ছিল । সে দিঘির জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজের রূপে মুগ্ধ হয় , এবং নিজের প্রেমে পড়ে । সে - প্রেম এমন তীব্র ও গভীর ছিল যে , সে নিজের সঙ্গে রতিমিলনের জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠে । কিন্তু মানবদেহের গড়ন আত্মরতির উপযোগী না হওয়ায় তার মনোবাসনা পূরণ হয় না । কেবল আকাঙ্ক্ষার আগুনে পুড়ে ছাই হয় তার দেহ । মেটামরফোসিস অ ব নার্সিসাস/দালি শ্রীমদ্ভগবদগীতায় আছে — ‘যে যে - ভাবে আবিষ্ট হয়ে শরীর ত্যাগ করে , সে সেই রকম শরীর প্রাপ্ত হয়’ । এমনটিই ঘটেছে নার্সিসাসের বেলায় । নার্সিসাস আত্মরতির আকাঙ্ক্ষায় আবিষ্ট হয়ে দেহ ত্যাগ করে । পরিণামে সে এমন একটি দেহ প্রাপ্ত হয় যা আত্মরতির জন্য উপযুক্ত । সেই দেহ হয় এক উদ্ভিদের দেহ । পরবর্তী জীবনে নার্সিসাস উদ্ভিদ হয়ে জন্ম নেয় ; যে উদ্ভিদের একই ফুলে পুংকেশর ও গর্ভকেশর বিদ্যমান ।  উভলিঙ্গ গাছ পরাগমিলনের মাধ্যমে আত্মরতি সম্পন্ন করে থাকে । যুবক নার্সিসাসের নাম অনুসারে এই উদ্ভিদের নাম হয় ‘ নার্সিসাস ’, অতি সুগন্ধ ও বর্ণময় ফুলবিশিষ্ট গাছ । গ্রিক পুরাণের এই গল্পটি অতি সুন্দরভাবে চিত্রিত করেছেন স্পেনের চিত্রকর স