Posts

শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়

Image
‘ শত জনমের অপূর্ণ সাধ লয়ে , আমি গগনে কাঁদি গো ভুবনের চাঁদ হয়ে ’ — এভাবেই চাঁদকে দেখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম । প্রসঙ্গত , চাঁদের ষোলো কলা পূর্ণ হয় পূর্ণিমায় । কিন্তু তাতে তার সাধ পূর্ণ হয় না । সাধের অপূর্ণতা চাঁদকে স্থির থাকতে দেয় না । তাই সে নিজেকে কেবলই ভাঙে আর গড়ে । নিরন্তর ভাঙা - গড়ার কারণে চাঁদকে একেক সময় একেক রকম দেখায় । কখনও থালার মতো গোলাকার , কখনও বা কাস্তের মতো বাঁকা । বাঁকা চাঁদ দেখা যায় কৃষ্ণপক্ষে — মাসের যে পক্ষে চাঁদের ক্ষয় হয় । বাঁকা চাঁদ দেখা যায় শুক্লপক্ষেও — যখন অমাবস্যার পর চাঁদ ভরাট হতে থাকে । কিন্তু আকাশে বাঁকা চাঁদ দেখে সবার পক্ষে সঠিক বলা সম্ভব হয় না — ওটা কি কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীয়মাণ চাঁদ নাকি শুক্লপক্ষের বর্ধমান চাঁদ । শুক্লপক্ষের ও কৃষ্ণপক্ষের বাঁকা চাঁদের পার্থক্য হচ্ছে তারা উল্টো দিকে মুখ করে থাকে । উত্তর গোলার্ধে শুক্লপক্ষের বাঁকা চাঁদের কনভেক্স বা উত্তল দিকটা সবসময় ডানদিকে থাকে । কৃষ্ণপক্ষে থাকে বাঁয়ে । এখন চাঁদ কোন দিকে মুখ করে আছে সেটা নিশ্চিত জানা যায় কী করে ? চাঁদকে নির্দিষ্ট অক্ষরের আকারের সঙ্গে যুক্ত করে তা জানার নিয়ম আছে বিভিন্ন দেশে ।

স্বপ্নলোকের চাবি

বিশ্ব হতে হারিয়ে গেছে স্বপ্নলোকের চাবি । পৃথিবীর মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই চাবি । কিন্তু কেউ কখনও খুঁজে কি পায় স্বপ্নলোকের চাবি ।  একটি গল্প মনে পড়ল । গল্পটি মধ্যযুগের জনপ্রিয় দার্শনিক মোল্লা নাসিরুদ্দিন সম্পর্কে । একদিন দেখা গেল মোল্লা তার বাড়ির সামনের আঙিনায় কী যেন খুঁজছে । এক প্রতিবেশী কাছে এসে জিজ্ঞেস করল , কী খুঁজছ , মোল্লা ? মোল্লার সংক্ষিপ্ত উত্তর , চাবি । তখন সেই প্রতিবেশীও মোল্লার সঙ্গে চাবি খুঁজতে শুরু করল । অনেক খোঁজাখুঁজির পরও যখন চাবিটি পাওয়া গেল না তখন প্রতিবেশী মোল্লাকে জিজ্ঞেস করল  —   আচ্ছা , ঠিক কোথায় চাবিটি হারিয়েছ বলো তো । ঘরের ভিতরে , বলল মোল্লা । তাহলে বাইরে চাবি খুঁজছ কেন ? অবাক হয়ে জানতে চাইল প্রতিবেশী । কারণ ঘরের মধ্যে আলো কম, বাইরে আলো বেশি , মোল্লার শান্ত জবাব । গল্পটি শুনে মনে হতে পারে, মোল্লা একজন নির্বোধ হাস্যকর মানুষ । তা ঠিক নয় । আসলে চাবিটি খুঁজে পাওয়া তার কাছে জরুরি নয়, খোঁজাটাই জরুরি, খোঁজাতেই তার আনন্দ । যেমন করে একজন বাউল সাধক সারা জীবন খুঁজে বেড়ায় তার মনের মানুষকে । বাউল খুঁজে বেড়ায় স্বভাবের কারণে, তার অভাবের কারণে নয় । আসলে স্বপ্নলো

নিশ্চন্দ্র জ্যোৎস্না ও শ্বেত রাত্রির রোম্যান্টিকতা

প্রতি জুন মাসের ২০ হতে ২২ তারিখের মধ্যে কোনও এক দিন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সর্বাধিক নিকটবর্তী হয় । এই দিনকে বলা হয় ‘ সামার সলস্টিস ’ বা উত্তর অয়নান্ত দিবস । উত্তর গোলার্ধে এটাই গ্রীষ্মের প্রথম দিন । উত্তরায়নান্তের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে কয়েক সপ্তাহ পর পর্যন্ত , বিষুবরেখার উত্তরে ৪৯ ০ আর ৬৫ . ৫ ০ অক্ষাংশের মাঝখানের অঞ্চলে এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে । সেখানে সূর্যাস্ত হয় অনেক দেরিতে , এবং সূর্যোদয় হয় অনেক আগে । এবং রাত কখনও পুরোপুরি অন্ধকার হয় না । সেখানে সূর্য তার দৈনিক আকাশ ভ্রমণের পথে দিগন্তের নিচে ডুব দেয় ঠিকই , কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য । সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরই ভোর হয় । অন্ধকার গাঢ় হতে পারে না । রাত্রি হয় পূর্ণিমার মতো আলোকোজ্জ্বল । একে বলা হয় ‘ শ্বেত রাত্রি ’ । আরও উত্তরে , ৬৫ . ৫ ০ থেকে ৬৭ . ৫ ০ অক্ষাংশ পর্যন্ত — উত্তরায়নান্তের দিনটিকে মাঝখানে রেখে বহুদিন ধরেই সূর্য ডোবে না । সূর্য তখন দিগন্তের নিচে ডুব না দিয়ে শুধু তাকে ছুঁয়ে যায় । সূর্যাস্তের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভোর হয় । দিনশেষে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের ঘটে মহামিলন । তখন একটানা থাকে দিনের আলো । একে বলা হয় ‘

ব্লক ইউনিভার্স — এক ক্রিয়াকালহীন মহাবিশ্বের নাম

Image
কবি বলেছেন — ‘ কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন । ’ কাল বা সময় যেন এক নদী যার স্রোত নিরন্তর বয়ে চলে ভবিষ্যৎ থেকে বর্তমান হয়ে অতীতের দিকে । সময়ের এই গতিময়তা আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও অধিকাংশ পদার্থবিজ্ঞানী তেমনটা মনে করেন না । সময় গতিশীল — এই ধারণায় একটি যৌক্তিক সমস্যা আছে । প্রশ্ন হচ্ছে , তাহলে সময়ের গতিবেগ কত ? সময় যদি গতিশীল হয় , তবে তা নিশ্চয়ই অন্য কোনও ‘ টাইম রেফারেন্স ’ বা ‘ প্রসঙ্গ সময় ’- এর সাপেক্ষে । নদী যেমন গতিশীল দুই তীরের সাপেক্ষে । কিন্তু সময় - নদীর তো কোনও তীর নেই । তবে কি সময় নিজের সাপেক্ষে প্রবাহিত হচ্ছে ? সেক্ষেত্রে সময়ের গতিবেগ দাঁড়াবে — সেকেন্ড / সেকেন্ড , অর্থাৎ সময় প্রতি সেকেন্ডে এক সেকেন্ড পথ অতিক্রম করছে । এ কথার কোনও অর্থ হয় না । সময়ের গতিবেগ নির্ণয় করতে হলে চাই এক্সটার্নাল বা বহিঃস্থ কোনও ‘ টাইম রেফারেন্স ’ । কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে এমন কোনও ঘড়ি নেই যার সাপেক্ষে সময়ের গতিময়তা নির্ণয় করা যায় । অতএব , সময়ের গতিময়তা যৌক্তিকভাবেই অসম্ভব । সময় নদীর জলের মতো প্রবাহিত হয় না । কোনও বস্তুকে গতিশীল বলা হয় যখন সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে প

অমৃতের অন্বেষা ও আধ্যাত্মিক অমরতা

মানুষ চিরকাল অমর হতে চেয়েছে । কিন্তু সেই অমৃতের সন্ধান মিলল কই যা পান করে মানুষ অমর হতে পারল ! মানুষ অমর হতে চেয়েছে , অথচ এই পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকারই কথা ছিল না । মানুষ পৃথিবীতে আসে এক অপরিণত অসহায় শিশু হয়ে । পিতা - মাতার ভালবাসার সুরক্ষা না পেলে মানুষ জন্মের পরই শিকারজীবী প্রাণীর খাদ্যে পরিণত হতো । বৈরী আবহাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তার না ছিল শামুক কচ্ছপের মতো শক্ত বহিরাবরণ , না ছিল পাখির মতো পালক , পশুর মতো পশম , কিংবা মাছের মতো আঁশ । একজন পূর্ণপরিণত মানুষ বাঘ বা সিংহের চেয়ে দ্রুতবেগে দৌড়াতে পারে না । মানুষের দাঁত , হাত - পায়ের নখ যথেষ্ট প্রতিরক্ষা দিতে পারে না । তাই মানুষের অমর হওয়ার আকাংখা কোনও দিনই তেমন অর্থপূর্ণ ছিল না । পৃথিবীতে মানুষ টিকে গেছে শুধুই তার বুধিমত্তার কারণে । আর এই বুদ্ধির জোরেই সে চিরকাল অমর হতে চেয়েছে । কিন্তু আশাভঙ্গ ঘটায় ফিলাডেলফিয়া ’ র এক তরুণ বিজ্ঞানী লেওনার্দ হেইফ্লিক । তিনি ল্যাবরেটরিতে মানুষের ভ্রুণ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন , একটি কোষ প্রায় পঞ্চাশ বার বিভাজিত হওয়ার পর মারা যায় । কোনও ভাবেই এর বেশি বিভাজিত হয় না ।