শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়
‘শত জনমের অপূর্ণ সাধ লয়ে, আমি
গগনে কাঁদি গো ভুবনের চাঁদ হয়ে’ — এভাবেই চাঁদকে দেখেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
চাঁদের ষোলো কলা পূর্ণ হয় পূর্ণিমার রাতে, কিন্তু তাতে তার
সাধ পূর্ণ হয় না। সাধের অপূর্ণতা চাঁদকে
স্থির থাকতে দেয় না। তাই সে নিজেকে
গড়ে, আবার ভাঙে — এই চক্রেই তার অস্তিত্ব।
চাঁদের এই নিরবচ্ছিন্ন রূপান্তরের কারণে তাকে এক-এক সময়ে এক-এক রকম দেখায়। কখনও থালার মতো সম্পূর্ণ গোল, আবার কখনও কাস্তের মতো বাঁকা। বাঁকা চাঁদ দেখা যায় দুটি অবস্থায় — একটি কৃষ্ণপক্ষে, যখন চাঁদ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, এবং অন্যটি শুক্লপক্ষে, যখন অমাবস্যার পর চাঁদ ক্রমশ পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। তবে আকাশে বাঁকা চাঁদ দেখে সহজেই বোঝা যায় না যে এটি কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ নাকি শুক্লপক্ষের চাঁদ।
![]() |
শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়
শুক্লপক্ষের ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ বিপরীত দিকে মুখ করে থাকে। উত্তর
গোলার্ধে শুক্লপক্ষের বাঁকা চাঁদের উত্তল (কনভেক্স) দিক থাকে ডানদিকে, আর কৃষ্ণপক্ষে তা থাকে বাঁদিকে। কিন্তু চাঁদ কোন দিকে
মুখ করে আছে সেটা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়? বিভিন্ন দেশে এটি
চেনার জন্য সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
বাংলা অক্ষরের সঙ্গে চাঁদের আকৃতির তুলনা করলে এটি বোঝা সহজ হয়।
শুক্লপক্ষের চাঁদ দেখতে অনেকটা ‘শু’-এর লেজের মতো বাঁকা, আর কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ কুঁজো ‘ক’-এর পিঠের মতো বাঁকা।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই বোঝা যায় কোনটি শুক্লপক্ষের চাঁদ এবং কোনটি
কৃষ্ণপক্ষের।
তবে এই নিয়ম কেবলমাত্র উত্তর গোলার্ধের জন্য প্রযোজ্য। দক্ষিণ
গোলার্ধে (যেমন, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে)
এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। বিষুবরেখার কাছাকাছি বাঁকা চাঁদ অনেকটা নৌকার মতো দেখায়,
যেন ‘চাঁদের তরণী’ আকাশগঙ্গায় ভাসছে।
চাঁদের উদয়কাল থেকে শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ চেনার উপায়
শুক্লপক্ষের চাঁদ সাধারণত সন্ধ্যার পর পশ্চিম আকাশে দেখা যায়, আর কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ভোরের দিকে পূর্ব আকাশে উদিত হয়।
সময় দেখে চাঁদ চেনার এ কৌশল সহজেই প্রয়োগ করা যায়।
চন্দ্রকলার বাস্তবতা
যদিও আমরা চাঁদের গঠনকে ক্রমাগত ভাঙা-গড়ার খেলা মনে করি, বাস্তবে তা কখনওই ঘটে না। চাঁদের প্রকৃত আকৃতি কখনও
পরিবর্তিত হয় না। আমরা যা দেখি, তা মূলত সূর্যের আলো ও
পৃথিবীর ছায়ার প্রভাবের কারণে ঘটে।