Posts

বাক্-দেবী সরস্বতী

Image
মানুষই একমাত্র প্রাণী যে কথা বলতে পারে । পশু-পাখিরাও কথা বলে বটে , কিন্তু তাদের কথা অন্যরকম । তারা মানুষের মতো ধ্বনি এবং শব্দের স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারে না । তারা কয়েকটি ধ্বনি ( বর্ণ) দিয়ে শব্দ এবং কয়েকটি শব্দ দিয়ে অর্থজ্ঞাপক বাক্য তৈরি করতেও পারে না । মানুষ কথা বলতে সক্ষম হয়েছে তার বাগযন্ত্রের কারণে । মানুষের বাক্-যন্ত্র বিশেষ একটি প্রত্যঙ্গ নয় , অনেকগুলো প্রত্যঙ্গের সমাহার । এর মধ্যে রয়েছে ফুসফুস , স্বরতন্ত্রী (ভোকাল কর্ডস) , ধ্বনিদ্বার (ভোকাল ফোল্ডস) , মুখ , ঠোঁট , জিহ্বা , দাঁত , নাক । এতগুলো প্রত্যঙ্গ সাহায্য করে বলেই মানুষ কথা বলতে পারে । অতএব, কথা বলা মোটেও সহজ কাজ নয় — বহু প্রত্যঙ্গের সমন্বিত কর্মের ফল । উল্লেখ্য, মানুষকে কথা বলতে সাহায্য করাই এই সমস্ত প্রত্যঙ্গের এক মাত্র কাজ নয় , আরও বহুবিধ কাজ তাদের করতে হয় । প্রশ্ন এই — মানুষের এই বাক্-সক্ষমতা কি প্রকৃতির দান ? মানুষ কি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জন করেছে এই সক্ষমতা ? বিবর্তনবাদীরা বলবেন — হ্যাঁ । কিন্তু আর একদল বিজ্ঞানী আছেন যারা মনে করেন , শুধু প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এতো জটিল ও উন্নত সক্ষমতা অর্জন কর

হৃদয়-দর্পনে দেখা

Image
মানুষ নিজের মুখ নিজের চোখে দেখতে পারে না । আয়নায় মুখাবয়বের যে প্রতিকৃতি সে দেখে তা আসলে প্রতিবিম্ব । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘হোয়াট ইউ আর ইউ ডু নট সি, হোয়াট ইউ সি ইজ ইওর শ্যাডো’ (স্ট্রে বার্ডস) । অর্থাৎ, আমরা যা, তা আমরা দেখতে পারি না, যা দেখি তা আসলে ছায়া । আমরা কেউ-ই নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারি না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা অন্য কোথাও প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয় । তাই নিজের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিফলক । প্রতিফলক হতে পারে দর্পণ বা আয়না যা আলো প্রতিফলিত করে । কিন্তু দর্পণে আমরা কী দেখি? আসলে যা, তা, না কি যা হতে চাই, তা । আয়নায় নিজেকে দেখা কি ত্রুটিপূর্ণ নয়? ইকো অ্যান্ড নার্সিসাস (খন্ডিত)/জন ওয়াটারহাউস আয়না আবিস্কারের আগে মানুষ দিঘির শান্ত জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে বিস্মিত হত । চৈতন্যচরিতামৃতে আছে, পুস্করিণীর পরিস্কার জলে নিজেকে প্রতিফলিত দেখে কৃষ্ণ বিস্মিত হয়ে বলছেন — অপরিকলিতপূর্বঃ কশ্চমৎকারকারী …, আমি এতো সুন্দর! আমার এই আশ্চর্য মধুরতা আমি আগে তো কখনও দেখিনি । সত্যি বলতে কী, আমার মনে এখন এই মাধুর্য আস্বাদন করার লোভ হচ্ছে । কিন্তু প্রতিবিম্বকে তো আস্বাদন কর

রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা

Image
একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মানুষ অন্যান্য পশুর থেকে আলাদা । বিষয়টি হচ্ছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা যা সীমাহীন , এবং কখনও সম্পূর্ণরূপে পূরণ হয় না । এই আকাঙ্ক্ষা মানুষকে অস্থির করে রাখে সারা জীবন । মানুষের বহু রকমের আকাঙ্ক্ষা থাকে । তবে সব আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই । ইংরেজ চিন্তাবিদ, দার্শনিক এবং প্রবন্ধকার বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর নোবেল বক্তৃতায় (১৯৫০) চার রকমের আকাঙ্খার কথা বলেছেন যেগুলি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ । সেগুলি হচ্ছে — অর্জনলিপ্সা , প্রতিদ্বন্দ্বিতা , অহমিকা , ও ক্ষমতাপ্রীতি । অর্জনলিপ্সা হচ্ছে যত বেশি সম্ভব সম্পদের মালিক হওয়ার ইচ্ছা । জীবনধারণের পক্ষে অপরিহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহ দিয়ে এর শুরু হয় । একটা অর্জিত হলে আর একটা চাই । যত বেশি সম্পদই অর্জন করা হোক না কেন , মানুষ সব সময় চায় আরও অর্জন করতে । তৃপ্তি চিরকাল স্বপ্ন হয়ে মানুষকে ফাঁকি দেয় । তবে অর্জনলিপ্সা ততটা দোষের নয় , যতটা দোষের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আকাঙ্ক্ষা । বস্তুত, পৃথিবীটা এখনকার চেয়ে অনেক সুখের হতো যদি সব সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে অর্জনলিপ্সা শক্তিশালী হতো । কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে , বহু মানুষ আছেন যাঁরা স

স্বর্গ নরক

Image
মানুষের চিরকালের জিজ্ঞাসা — মৃত্যুর পরে আমার কী হবে ? জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার বলেছেন , ‘ মৃত্যুর পরে তুমি তা-ই হবে যা ছিলে তোমার জন্মের আগে ’ । জন্মের আগে যদি প্রকৃতির অংশ হয়ে থাকি তাহলে মৃত্যুর পরে তা-ই  হব । কারণ আমাদের দেহের সমস্ত নির্মাণ সামগ্রী আসে প্রকৃতি থেকে এবং মৃত্যুর পরে তা প্রকৃতিতে ফেরত যায় । আমাদের দেহ পৃথিবীর দান । তাই পৃথিবীতে ফেরত যায় । কিন্তু আমাদের চৈতন্য বা আত্মা স্বর্গলোকের ধন । সুতরাং মৃত্যুর পরে সকল আত্মা স্বর্গে ফেরত যাবে সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী শুধু পুণ্যবান আত্মাই স্বর্গে যাবে, যে-কোনও আত্মা নয় । যে-মুহূর্তে তুমি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে এবং তোমার আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে যাবে , তোমার শরীর মরে যাবে । আর তোমার আত্মা কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ কিংবা নরকে যাবে । এমনটাই ধর্মশাস্ত্রের  বিধান । লক্ষণীয়, বলা হচ্ছে — বিচার হবে কৃতকর্মের নিরিখে, ধর্মবিশ্বাসের নিরিখে নয় । স্বর্গ ও নরক আমার আত্মা কত দিন স্বর্গে কিংবা নরকে থাকবে ? বলা হয় , অনন্তকাল । অনন্তকাল স্বর্গবাস সম্ভব হতে পারে নিজেকে দেবতায় রুপান্তরিত করতে পারলে । অন্য

গাছের পাতা ও অনিঃশেষ জীবন

Image
গাছের শাখা-প্রশাখা থেকে উদগত সবুজ পাতা গাছের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পাতা গাছের জৈবজীবনে শক্তি যোগায় । গাছের সৌন্দর্য, ছায়াময় স্নিগ্ধতা পাতার অবদান । গাছ পাতাকে জন্ম দেয়, আর পাতা গাছকে দেয় পূর্ণতা । গাছ ও পাতা এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে বাঁধা । এমনকী পাতা ঝরে গেলেও সে-সম্পর্ক বজায় থাকে । পাতার প্রধান কাজ গাছের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা । গাছের পাতায় থাকে সবুজ রঞ্জক পদার্থ ক্লোরফিল বা পত্রহরিৎ যা সূর্যের আলো শোষণ করে । শোষিত আলোকশক্তি ব্যবহার করে জল ও বাতাসের সংশ্লেষে খাদ্য উৎপাদিত হয় । খাদ্য উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও গাছের পাতা স্বল্পায়ু । পরিবেশে বৈরী হলে পাতাকে ঝরে পড়তে হয় । শীতঋতুতে দিন ছোট হয়ে আসে । স্বল্প আলোয় খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না । ফলে পাতার কাজ ফুরিয়ে যায় । তখন গাছ পাতায় সঞ্চিত সবুজ রং সরিয়ে নেয় । আর অমনি, এতদিন সবুজের আড়ালে থাকা অন্যান্য রং নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ পায় । দেখে মনে হয় যেন বড় বড় গাছের পাতায় রঙের উৎসব শুরু হয়েছে । কোনও গাছে লাল , কোনও গাছে হলদে , কোনও গাছে কমলা রঙের মেলা । তবে পত্ররাজির এই বর্ণাঢ্য

বৃক্ষরোপণ

Image
১৯১৩-এর দিকে ফ্রান্সের প্রভেন্স অঞ্চলে এক পর্বতের পার্শ্বদেশে বাস করতেন এক মেষপালক । একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পর তিনি সমতল ভূমির কৃষিজীবন ছেড়ে এই নির্জন পরিত্যক্ত এলাকায় এসে বাস করতে শুরু করেন । এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের মূল পেশা ছিল কাঠকয়লা বিক্রি করা । কাঠকয়লা মানে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি কয়লা । সে জন্য বন থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হত । কালক্রমে এলাকাটি বৃক্ষহীন হয়ে পড়ে । ফলে সেখানকার মাটি হয় অনুর্বর ঊষর আর নিসর্গচিত্র হয় বর্ণহীন । মেষপালক বুঝতে পারলেন, মাটি মরে যাচ্ছে গাছের অভাবে । তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বৃক্ষরোপণ করবেন । প্রতিদিন তিনি ওক গাছের একশোটি বীজ বপন করতে লাগলেন । লোহার স্টিক দিয়ে মাটিতে ছিদ্র করে তাতে বীজ পুঁতে রাখতেন । এই ভাবে তিন বছরে তিনি একা একশো হাজার গাছ লাগান । কালক্রমে তার স্বপ্ন ফলপ্রসূ হয় । সবুজ বনানীতে ছেয়ে যায় গোটা এলাকা, নবজীবন ফিরে পায় ঊষর মাটি । এই অসাধারণ গল্পটি লিখে রেখে গেছেন ফরাসি লেখক জন জিওনো ( Jean Giono ) তাঁর ‘দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ’ বইতে । দ্য ম্যান হু প্লান্টেড ট্রিজ এই গল্পের সারমর্ম হচ্ছে — বৃক্ষহীনতায় জমি পরিণত হয় বালু

মাটির দারিদ্র

Image
মাটি প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং সমস্ত পার্থিব প্রাণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ । মাটি ছাড়া প্রাণ হয় না, প্রাণ ছাড়া মাটি হয় না । মাটি ও প্রাণ একই সঙ্গে উদ্ভুত হয়েছে । পৃথিবীতে প্রায় সকল প্রাণের অস্তিত্ব নির্ভর করে মূলত মাটির উপর । আর মাটির প্রাণ-প্রতিপালন ক্ষমতা নির্ভর করে মাটির সুস্বাস্থ্যের উপর । সুস্থ মাটি নির্ধারণ করে গাছপালার স্বাস্থ্য, গাছপালার স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে জীবজন্তুর স্বাস্থ্য, যা নির্ধারণ করে মানুষ তথা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য । প্রকৃতপক্ষে, ভূত্বকের উপরাংশের উর্বর মাটির পাতলা স্তর দ্বারাই পৃথিবীতে প্রতিপালিত হয় জীবন । কিন্তু অবিবেচক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করায় ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে মাটির উর্বরতা । ২০১৭ সালে রাষ্ট্রসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নিবিড় চাষাবাদের কারণে প্রতি বছর ২৪ বিলিয়ন টন উর্বর মাটি হারিয়ে যাচ্ছে । যদি উর্বরতা হ্রাসের এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে ৬০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত উপরিস্তরের মাটি (টপ সয়েল) অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়বে । মাটির উর্বরতা হ্রাসের বড় কারণ মাটিতে জৈবপদার্থের পরিমান হ্রাস পাওয়া । আর জৈ