Posts

জিশু খ্রিস্টের আত্মবলিদান

Image
‘ গুড ফ্রাইডে ’ বা ‘ পবিত্র শুক্রবার ’ জিশু খ্রিস্টের মৃত্যুদিন । ৩৩ খ্রিস্টাব্দে , সম্ভবত ৩ এপ্রিল, শুক্রবার জিশু মৃত্যুবরণ করেন । এর আগের দিন , বৃহস্পতিবার ছিল ইহুদিদের বার্ষিক ‘ পাসওভার ’ বা ‘ নিস্তার-পার্বণ ’ । পাপ থেকে নিস্তার পাওয়ার আশায় এই দিন প্রাণ বলি দেওয়া হত । ঈশ্বরের নির্দেশ ছিল, তাঁর অবাধ্য হয়ে আদম যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্তের জন্য নিস্পাপ প্রাণ বলি দিতে হবে । ‘নিস্তার-পার্বণ’ উদযাপন করতে জিশু বারোজন শিষ্যের সঙ্গে এক সান্ধ্যভোজে মিলিত হয়েছিলেন । সেখানে ভোজনের জন্য ছিল রুটি ও মদ । একটি রুটি তিনি প্রত্যেক শিষ্যকে একটু একটু করে দিলেন । এবং মদও একটু একটু করে দিলেন । বললেন , এই যে রুটি দিলাম , এই রুটি হচ্ছে আমার শরীরের মাংস । এটা যদি খাও , আমার মাংস খাওয়া হবে । আর এই যে মদ দিলাম , এটা হচ্ছে আমার শরীরের রক্ত । মদটা যদি খাও , আমার রক্ত খাওয়া হবে । এখানে জিশু রুটি ও মদের প্রতীকে আত্মবলিদানের ইঙ্গিত দিলেন কি ? প্রাচীন ইজরায়েলের ইহুদিদের মধ্যে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য নরবলি প্রথার প্রচলন ছিল । এমনকী নিজের প্রিয় সন্তানকেও বলি দেওয়া হত । ঈশ্বর একবার অব্রাহামের বিশ্বাস পরী

অকারণ সুখ

Image
সুখ মনের এমন এক অবস্থা যা সবাই পেতে চায় । সুখের সঙ্গে সুস্থতা , স্বাচ্ছন্দ্য , আনন্দ , ভালবাসা , তৃপ্তি , এবং অন্যান্য ইতিবাচক অনুভূতি সম্পর্কিত । তা ছাড়া, বিভিন্ন ইতিবাচক অভিজ্ঞতা, যেমন লক্ষ্য-অর্জন, ইচ্ছা-পূরণ, সু-সংবাদ পাওয়া, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ সুখী হতে পারে । তৎসত্ত্বেও, একেবারে কোনও কারণ ছাড়াও মানুষ সুখের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে । এই ধরণের সুখকে বলা হয় অকারণ-সুখ । সুখ সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা — আমি সুখী হব যদি যা চাই তা পাই , এবং যা চাই না তা না পাই । এই ধরণের সুখের পিছনে শর্ত থাকে, কারণ থাকে । তাই এটাকে বলা যায় সকারণ-সুখ । এই সুখ এক ধরণের মরীচিকা । কারণ , চাওয়ার শেষ নেই । একটি চাওয়া পূরণ হওয়া মাত্র আর একটি চাওয়া সামনে এসে দাঁড়ায় । সুখের দেখা আর মেলে না , বা সুখ স্থায়ী হয় না । পক্ষান্তরে , অকারণ সুখ নিঃশর্ত, স্বতঃস্ফূর্ত । তাই সদাই পরিপূর্ণ । প্রাত্যহিক জীবনে পরিচিতজনের সঙ্গে সামাজিক কুশল বিনিময়ের সময় আমরা জিজ্ঞেস করি — কেমন আছেন? উত্তর যদি হয় ‘ ভাল ’, আমরা কিন্তু আর জানতে চাই না — কেন ভাল আছেন? একই ভাবে কেউ যদি বলে , আমি সুস্থ আ

ডারউইন ও ময়ূরপুচ্ছ

Image
জীবজগতে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রাণী বোধ হয় ময়ূর । ময়ূর যখন তার বিচিত্রবর্ণের পাখা মেলে ধরে তখন রুদ্ধশ্বাস বিস্ময়ে না তাকিয়ে পারা যায় না । ময়ূরের সৌন্দর্যের মূল রহস্য তার জমকালো বহুবর্ণা লেজ বা পুচ্ছ । তবে ময়ূরপুচ্ছ সুন্দর হলেও তার দেহের তুলনায় অত্যন্ত ভারী । সম্ভবত গুরুভার লেজের কারণেই ময়ূর পাখি হলেও উড়তে পারে না । লঘুভার টুনটুনি পাখি ময়ূর সম্পর্কে কী বলে তা দেখে নেওয়া যাক রবীন্দ্রনাথের এই কবিতায় — টুনটুনি কহিলেন , ‘ রে ময়ূর , তোকে দেখে করুণায় মোর জল আসে চোখে । ’ ময়ূর কহিল , ‘ বটে! কেন , কহ শুনি , ওগো মহাশয় পক্ষী , ওগো টুনটুনি । ’ টুনটুনি কহে , ‘ এ যে দেখিতে বেআড়া , দেহ তব যত বড়ো পুচ্ছ তারো বাড়া । আমি দেখো লঘুভারে ফিরি দিনরাত , তোমার পশ্চাতে পুচ্ছ বিষম উৎপাত । ’ ময়ূর কহিল , ‘ শোক করিয়ো না মিছে — জেনো ভাই , ভার থাকে গৌরবের পিছে । ’ (ভার < কণিকা) টুনটুনি পাখির মতে, গুরুভার পুচ্ছ ময়ূরের জন্য বিষম উৎপাত বিশেষ । শুধু টুনটুনি পাখি নয়, ময়ূরের পুচ্ছ ভীষণ অপছন্দ করতেন বিবর্তন তত্ত্বের প্রবক্তা চার্লস ডারউইন । তিনি ময়ূরপুচ্ছ এতটাই অপছন্দ করতেন যে, এক বন্ধুকে লেখা চি

বাক্-দেবী সরস্বতী

Image
মানুষই একমাত্র প্রাণী যে কথা বলতে পারে । পশু-পাখিরাও কথা বলে বটে , কিন্তু তাদের কথা অন্যরকম । তারা মানুষের মতো ধ্বনি এবং শব্দের স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারে না । তারা কয়েকটি ধ্বনি ( বর্ণ) দিয়ে শব্দ এবং কয়েকটি শব্দ দিয়ে অর্থজ্ঞাপক বাক্য তৈরি করতেও পারে না । মানুষ কথা বলতে সক্ষম হয়েছে তার বাগযন্ত্রের কারণে । মানুষের বাক্-যন্ত্র বিশেষ একটি প্রত্যঙ্গ নয় , অনেকগুলো প্রত্যঙ্গের সমাহার । এর মধ্যে রয়েছে ফুসফুস , স্বরতন্ত্রী (ভোকাল কর্ডস) , ধ্বনিদ্বার (ভোকাল ফোল্ডস) , মুখ , ঠোঁট , জিহ্বা , দাঁত , নাক । এতগুলো প্রত্যঙ্গ সাহায্য করে বলেই মানুষ কথা বলতে পারে । অতএব, কথা বলা মোটেও সহজ কাজ নয় — বহু প্রত্যঙ্গের সমন্বিত কর্মের ফল । উল্লেখ্য, মানুষকে কথা বলতে সাহায্য করাই এই সমস্ত প্রত্যঙ্গের এক মাত্র কাজ নয় , আরও বহুবিধ কাজ তাদের করতে হয় । প্রশ্ন এই — মানুষের এই বাক্-সক্ষমতা কি প্রকৃতির দান ? মানুষ কি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জন করেছে এই সক্ষমতা ? বিবর্তনবাদীরা বলবেন — হ্যাঁ । কিন্তু আর একদল বিজ্ঞানী আছেন যারা মনে করেন , শুধু প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এতো জটিল ও উন্নত সক্ষমতা অর্জন কর

হৃদয়-দর্পনে দেখা

Image
মানুষ নিজের মুখ নিজের চোখে দেখতে পারে না । আয়নায় মুখাবয়বের যে প্রতিকৃতি সে দেখে তা আসলে প্রতিবিম্ব । রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘হোয়াট ইউ আর ইউ ডু নট সি, হোয়াট ইউ সি ইজ ইওর শ্যাডো’ (স্ট্রে বার্ডস) । অর্থাৎ, আমরা যা, তা আমরা দেখতে পারি না, যা দেখি তা আসলে ছায়া । আমরা কেউ-ই নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারি না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা অন্য কোথাও প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয় । তাই নিজের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিফলক । প্রতিফলক হতে পারে দর্পণ বা আয়না যা আলো প্রতিফলিত করে । কিন্তু দর্পণে আমরা কী দেখি? আসলে যা, তা, না কি যা হতে চাই, তা । আয়নায় নিজেকে দেখা কি ত্রুটিপূর্ণ নয়? ইকো অ্যান্ড নার্সিসাস (খন্ডিত)/জন ওয়াটারহাউস আয়না আবিস্কারের আগে মানুষ দিঘির শান্ত জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে বিস্মিত হত । চৈতন্যচরিতামৃতে আছে, পুস্করিণীর পরিস্কার জলে নিজেকে প্রতিফলিত দেখে কৃষ্ণ বিস্মিত হয়ে বলছেন — অপরিকলিতপূর্বঃ কশ্চমৎকারকারী …, আমি এতো সুন্দর! আমার এই আশ্চর্য মধুরতা আমি আগে তো কখনও দেখিনি । সত্যি বলতে কী, আমার মনে এখন এই মাধুর্য আস্বাদন করার লোভ হচ্ছে । কিন্তু প্রতিবিম্বকে তো আস্বাদন কর

রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা

Image
একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মানুষ অন্যান্য পশুর থেকে আলাদা । বিষয়টি হচ্ছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা যা সীমাহীন , এবং কখনও সম্পূর্ণরূপে পূরণ হয় না । এই আকাঙ্ক্ষা মানুষকে অস্থির করে রাখে সারা জীবন । মানুষের বহু রকমের আকাঙ্ক্ষা থাকে । তবে সব আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই । ইংরেজ চিন্তাবিদ, দার্শনিক এবং প্রবন্ধকার বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর নোবেল বক্তৃতায় (১৯৫০) চার রকমের আকাঙ্খার কথা বলেছেন যেগুলি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ । সেগুলি হচ্ছে — অর্জনলিপ্সা , প্রতিদ্বন্দ্বিতা , অহমিকা , ও ক্ষমতাপ্রীতি । অর্জনলিপ্সা হচ্ছে যত বেশি সম্ভব সম্পদের মালিক হওয়ার ইচ্ছা । জীবনধারণের পক্ষে অপরিহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহ দিয়ে এর শুরু হয় । একটা অর্জিত হলে আর একটা চাই । যত বেশি সম্পদই অর্জন করা হোক না কেন , মানুষ সব সময় চায় আরও অর্জন করতে । তৃপ্তি চিরকাল স্বপ্ন হয়ে মানুষকে ফাঁকি দেয় । তবে অর্জনলিপ্সা ততটা দোষের নয় , যতটা দোষের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আকাঙ্ক্ষা । বস্তুত, পৃথিবীটা এখনকার চেয়ে অনেক সুখের হতো যদি সব সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে অর্জনলিপ্সা শক্তিশালী হতো । কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে , বহু মানুষ আছেন যাঁরা স

স্বর্গ নরক

Image
মানুষের চিরকালের জিজ্ঞাসা — মৃত্যুর পরে আমার কী হবে ? জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার বলেছেন , ‘ মৃত্যুর পরে তুমি তা-ই হবে যা ছিলে তোমার জন্মের আগে ’ । জন্মের আগে যদি প্রকৃতির অংশ হয়ে থাকি তাহলে মৃত্যুর পরে তা-ই  হব । কারণ আমাদের দেহের সমস্ত নির্মাণ সামগ্রী আসে প্রকৃতি থেকে এবং মৃত্যুর পরে তা প্রকৃতিতে ফেরত যায় । আমাদের দেহ পৃথিবীর দান । তাই পৃথিবীতে ফেরত যায় । কিন্তু আমাদের চৈতন্য বা আত্মা স্বর্গলোকের ধন । সুতরাং মৃত্যুর পরে সকল আত্মা স্বর্গে ফেরত যাবে সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী শুধু পুণ্যবান আত্মাই স্বর্গে যাবে, যে-কোনও আত্মা নয় । যে-মুহূর্তে তুমি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে এবং তোমার আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে যাবে , তোমার শরীর মরে যাবে । আর তোমার আত্মা কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ কিংবা নরকে যাবে । এমনটাই ধর্মশাস্ত্রের  বিধান । লক্ষণীয়, বলা হচ্ছে — বিচার হবে কৃতকর্মের নিরিখে, ধর্মবিশ্বাসের নিরিখে নয় । স্বর্গ ও নরক আমার আত্মা কত দিন স্বর্গে কিংবা নরকে থাকবে ? বলা হয় , অনন্তকাল । অনন্তকাল স্বর্গবাস সম্ভব হতে পারে নিজেকে দেবতায় রুপান্তরিত করতে পারলে । অন্য