Posts

Showing posts from 2018

অগ্রহায়ণ — নববর্ষ থেকে নবান্ন

Image
‘ ও মা , অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি , আমার সোনার বাংলা । ’ রবীন্দ্রনাথ যে সোনার বাংলার কথা বলেছেন তা মূলত অঘ্রানের বাংলা । কারণ অঘ্রান মাসে বাংলার উর্বর জমিতে সোনা ফলে । বাংলার মাঠ ছেয়ে যায় সোনালি ধানে । পরনে সোনালি পরিধান , মুখে মধুর হাসি — মায়ের এই অপরূপ রূপ দেখে বাঙালির আনন্দের সীমা থাকে না । অগ্রহায়ণ বাঙালির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস ।   মুকুন্দরাম চক্রবর্তী (১৫৪০-১৬০০) বলেছেন  — ‘ ধন্য অগ্রহায়ণ মাস ,  ধন্য অগ্রহায়ণ মাস ।   বিফল জনম তার ,  নাই যার চাষ । ’   এই মাসে কৃষক ঘরে তুলে বছরের প্রধান শস্য আমন ধান ।   ঘরে ঘরে ধুম পড়ে আনন্দ উৎসবের ।   নতুন ধানের নতুন চালে তৈরি হয় নবান্ন ,  মিষ্টান্ন ।   বাংলার কৃষক মেতে উঠে উৎসবের আনন্দে । একদিন অগ্রহায়ণ ছিল বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস । নামেও তা স্পষ্ট । ‘ অগ্র ’ মানে প্রথম , ‘ হায়ন ’ মানে বছর । অর্থাৎ ‘ হায়ন ’ বা বছরের প্রারম্ভে থাকে যে মাস তার নাম অগ্রহায়ণ । অতীতে আমাদের নববর্ষের দিন ছিল পহেলা অগ্রহায়ণ । বৈশাখ কবে থেকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে গণ্য হল , সে বিষয়ে সামান্য মতানৈক্য রয়েছে । তবে অনেক ঐতিহাসি

কৃতজ্ঞতাবোধের চর্চা

হেমন্ত — হেম বরণ অর্থাৎ সোনালি রঙের ঋতু ; পাকা ধানের রঙে ধন্য । হেমন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ঋতুও বটে । আমরা বসন্ত ও গ্রীষ্মে যা বপন করি , হেমন্তে তার ফসল ঘরে তুলি । সেজন্য ধরিত্রী মাতাকে কৃতজ্ঞতা জানাই — নবান্ন করি , থ্যাঙ্কসগিভিং করি । তাই কৃতজ্ঞতার রং সোনালি । বলা হয়ে থাকে , কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের হৃদয়কে সমৃদ্ধ করে । শুধু তা - ই নয় , কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের সুস্থ জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলেও মনে করেন বিজ্ঞানীরা । সম্প্রতি , ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ( বার্কলে ) ও ইউসি ( ডেভিস )- এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে , যারা প্রতিনিয়ত কৃতজ্ঞতাবোধের চর্চা করেন , তারা অনেক রকমের উপকার পেয়ে থাকেন । যেমন :  শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমস এবং নিম্ন রক্তচাপ  উচ্চ স্তরের ইতিবাচক আবেগ  অধিক আনন্দ , আশাবাদ , ও সুখবোধ  অধিক ঔদার্য ও সমবেদনা  অপেক্ষাকৃত কম একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতাবোধ প্রত্যেক মানুষের জীবনে সাফল্য ও ভাল থাকার পিছনে থাকে অন্য কিছু মানুষের অবদান । সর্বোপরি থাকেন জগদীশ্বর । তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা যেতে পারে । প্রকৃতির রূপ , রস , সৌন্দর্য

নার্সিসাস — রূপান্তরিত ফুলের রূপকথা

Image
গ্রিক পুরাণের গল্পে নার্সিসাস নামে এক রূপবান যুবক ছিল । সে দিঘির জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজের রূপে মুগ্ধ হয় , এবং নিজের প্রেমে পড়ে । সে - প্রেম এমন তীব্র ও গভীর ছিল যে , সে নিজের সঙ্গে রতিমিলনের জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠে । কিন্তু মানবদেহের গড়ন আত্মরতির উপযোগী না হওয়ায় তার মনোবাসনা পূরণ হয় না । কেবল আকাঙ্ক্ষার আগুনে পুড়ে ছাই হয় তার দেহ । মেটামরফোসিস অ ব নার্সিসাস/দালি শ্রীমদ্ভগবদগীতায় আছে — ‘যে যে - ভাবে আবিষ্ট হয়ে শরীর ত্যাগ করে , সে সেই রকম শরীর প্রাপ্ত হয়’ । এমনটিই ঘটেছে নার্সিসাসের বেলায় । নার্সিসাস আত্মরতির আকাঙ্ক্ষায় আবিষ্ট হয়ে দেহ ত্যাগ করে । পরিণামে সে এমন একটি দেহ প্রাপ্ত হয় যা আত্মরতির জন্য উপযুক্ত । সেই দেহ হয় এক উদ্ভিদের দেহ । পরবর্তী জীবনে নার্সিসাস উদ্ভিদ হয়ে জন্ম নেয় ; যে উদ্ভিদের একই ফুলে পুংকেশর ও গর্ভকেশর বিদ্যমান ।  উভলিঙ্গ গাছ পরাগমিলনের মাধ্যমে আত্মরতি সম্পন্ন করে থাকে । যুবক নার্সিসাসের নাম অনুসারে এই উদ্ভিদের নাম হয় ‘ নার্সিসাস ’, অতি সুগন্ধ ও বর্ণময় ফুলবিশিষ্ট গাছ । গ্রিক পুরাণের এই গল্পটি অতি সুন্দরভাবে চিত্রিত করেছেন স্পেনের চিত্রকর স

অবজারভার ইফেক্ট ও রবীন্দ্রনাথ

Image
আমরা যখন আকাশে চাঁদের দিকে তাকাই তখন চাঁদ দেখতে পাই । কিন্তু যখন তাকাই না তখনও কি চাঁদ সেখানে থাকে ? প্রশ্নটি করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন । কারণ , সেই সময় ‘ অবজারভার ইফেক্ট ’ (পর্যবেক্ষক প্রভাব) নামে একটি তত্ত্বের কথা বলা হচ্ছিল পদার্থবিজ্ঞানের নতুন শাখা কোয়ান্টাম মেকানিক্স – এ । এই তত্ত্ব অনুসারে বস্তুর বিদ্যমানতা বা দশা নির্ভর করে একজন সচেতন পর্যবেক্ষকের উপর । পর্যবেক্ষক শুধু দেখার মাধ্যমে নিরীক্ষিত বাস্তবতাকে প্রভাবিত করতে পারে । সে-কারণেই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন , ‘ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো রহস্য — দেখবার বস্তুটি নয়, যে দেখে সেই মানুষটি ’ । সম্ভাবনা পর্যায়ের চাঁদ প্রশ্ন উঠেছিল — যখন আমরা চাঁদের দিকে তাকাই না তখনও কি চাঁদ সেথানে থাকে? ‘ অবজারভার ইফেক্ট ’ তত্ত্ব অনুসারে এই প্রশ্নের উত্তর — চাঁদ আমাদের দৃষ্টির আড়াল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে ।  ‘ প্রায় অস্তিত্বহীন ’ বলা হচ্ছে এই কারণে যে ,  “without a conscious observer, ‘matter’ exists in an undetermined state of probability”, অর্থাৎ , একজন সচেতন পর্যবেক্ষকের অবর্তমানে ‘ বস্তু ’ অস্তিমান থাকে এক অন

আসব যাব চিরদিনের সেই আমি

Image
১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ । সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুশয্যায় । জীবনের শেষ কয়েকটি মুহূর্ত । চলছে অবিরাম মন্ত্রোচ্চারণ — শান্তং শিবং অদ্বৈতম্ । কবি নিমীলিত নেত্রে ধ্যানমগ্ন । একজন শুভার্থী রবীন্দ্রনাথকে পরামর্শ দিলেন — ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন , এটাই যেন হয় আপনার শেষ জীবন , আর যেন ফিরে আসতে না হয় এই দুর্দশাগ্রস্ত পৃথিবীতে । রবীন্দ্রনাথ চোখ খুললেন । রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন , চুপ করুন , আমি প্রার্থনা করছি — হে ঈশ্বর , যে - জীবন তুমি আমাকে দিয়েছ তা এত সুন্দর যে , এই দান তুমি আমাকে বারবার দাও । আমি আবার দেখতে চাই সূর্যোদয় , সূর্যাস্ত , তারকাশোভিত রাত , ফুল , ডানামেলা পাখি , গাছ , নদী , পর্বত , মানুষ , ... । আমি ফিরে আসতে চাই বারবার , আরও বহুবার । এই পৃথিবী এত বিশাল , এত অফুরান প্রাচুর্যে পূর্ণ যে , আমার কাছে তা কোনও  দিনও  দীনহীন মনে হয়নি , পুরাতন মনে হয়নি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রয়াত হয়েছেন প্রায় আশি বছর হয়ে এল । ইতিমধ্যে তিনি অন্য কোনও পরিচয়ে ফিরে এসেছেন কি না তা কেউ জানে না । তবে কবির ফিরে আসার সেই আকাঙ্ক্ষা আজও ব্যক্ত হয় তাঁর গানে: আবার যদি ইচ্ছা ক

রবিরাগ অনুরাগ — প্রেক্ষিত সূর্যোদয় সূর্যাস্ত

Image
প্রতিদিন প্রভাতে সূর্য পূব আকাশে উদিত হয়ে যাত্রা শুরু করে। তারপর সারাদিন মাথার উপরের আকাশটা পরিভ্রমণ করে দিনশেষে পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়। পরদিন আবার পূব আকাশে উদিত হয়। এতে এমন একটি ধারণার সৃষ্টি হয় যে, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত ছিল ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত, যখন পূর্বতন প্রাশিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস বললেন, সূর্য পৃথিবীকে পরিক্রমণ করে না, বরং পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করে। তাই সূর্যের উদয় কিংবা অস্ত বলে কিছু থাকতে পারে না। সূর্যের উদয় কিংবা অস্ত মানুষের দৃষ্টিভ্রম মাত্র — প্রকৃত সত্য নয়, প্রতীয়মান সত্য মাত্র। এই বৈজ্ঞানিক তথ্যটি জানা সত্ত্বেও, আজও আমরা ‘সূর্যোদয়’ ও ‘সূর্যাস্ত’ শব্দ দু’টি নিঃসংকোচে ব্যবহার করে চলেছি। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর কথা বলা হয়েছে ২৭০০ বছর আগে রচিত ছান্দোগ্য উপনিষদে — ‘সূর্য কখনও অস্ত যায় না, উদিতও হয় না। লোকে যখন মনে করে যে সূর্য অস্ত যাচ্ছে, তখন তা কেবল দিনের শেষে পৌঁছে পথবদল করে, আর তখন তার নীচে হয় রাত্রি, আর অন্যদিকে দিন। তারপর যখন লোকে মনে করে যে সূর্য প্রাতে উঠছে, তখন তা কেবল রাত্রি

হাসির মর্যাদা

পৃথিবীতে মানুষই সম্ভবত একমাত্র প্রাণী যে হাসতে পারে । বিজ্ঞানীরা মনে করেন , কথা বলতে শেখার লক্ষ লক্ষ বছর আগে মানুষ হাসতে শিখেছে । আমাদের আদিম পূর্বপুরুষরা সম্ভবত হাসির মাধ্যমেই মনের অনেক ভাব আদানপ্রদান করত । হাসি মানুষের ইনস্টিংক্ট বা সহজাত প্রবৃত্তি , মানবশিশু জন্মের প্রায় পর - পরই হাসতে পারে । এমনকি যেসব শিশু জন্ম থেকেই অন্ধ ও বধির যারা কোনও দিন কাউকে হাসতে দেখেনি বা শুনেনি তারাও হাসতে পারে । মানুষ সাধারণত মনের ভাল লাগার অনুভূতি প্রকাশ করে হাসির মাধ্যমে । এই হাসি স্বত : স্ফূর্ত — অনায়াস ; সচেতন মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় । মানুষ অবশ্য স্বেচ্ছায় , স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও হাসতে পারে ; যেমন কপট হাসি । উভয় ক্ষেত্রেই মনে ভাল লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয় । কারণ উভয় ক্ষেত্রেই দেহে এন্ডরফিন নামের এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয় যার প্রভাবে দেহ-মনে ভাল লাগার অনুভূতি সঞ্চারিত হয় । অনেকে মনে করেন হাসি স্বাস্থ্যপ্রদ । বলা হয়ে থাকে , ‘প্রতিদিন হাসলে ডাক্তার দূরে থাকে’ , ‘হাসি শ্রেষ্ঠ ওষুধ’ , ইত্যাদি । মানুষের মন প্রফুল্ল থাকলে তার শারীরিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু আমেরিকার মে