Posts

ঈশ্বর, প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

ঈশ্বরের অবস্থান নিয়ে দু ’ টি ভুল ধারণা রয়েছে । প্রথমত , ঈশ্বর ‘সুদূর আকাশে’ অবস্থান করেন — একটি বড় ভুল । দ্বিতীয়ত , তিনি ‘আমার মধ্যে’ বিরাজমান — যদিও ছোট ভুল , তবুও বিভ্রান্তিকর । ঈশ্বর আকাশে অবস্থান করেন এই ধারণা প্রধানত একেশ্বরবাদী ধর্মে প্রচলিত । সেখানে ঈশ্বরকে ব্যক্তি রূপে কল্পনা করা হয় , যেমন শাসক , বিচারক বা প্রতিনিধি প্রেরণকর্তা । এই ব্যক্তি-ঈশ্বর মানুষের বিবাদে পক্ষপাতপূর্ণ হন বলে দাবি করা হয় , এবং তাঁকে পক্ষে দেখিয়ে নিজেদের অবস্থানকে ন্যায্যতা দেওয়া হয় । এভাবে ন্যায়হীন কাজও বৈধতা পায় । ঈশ্বর আকাশে থাকেন , ধারণাটির অন্তর্নিহিত অর্থ হল ঈশ্বর ও মানুষ আলাদা এবং পৃথক সত্তা । এটি এক গভীর ভুল ধারণা , যা আধ্যাত্মিকতার প্রকৃত বোধকে ক্ষুণ্ণ করে । বাস্তবতা হল , সৃষ্টিজগতের সবকিছুই ঈশ্বরের অংশ । তন্ত্র মতে , ‘যাহা আছে দেহভান্ডে , তাহাই আছে ব্রহ্মান্ডে’ — অর্থাত্‍ মানুষ এবং মহাজগত্‍ একই উপাদানে নির্মিত । তাই ঈশ্বর কোনও দূরবর্তী সত্তা নন ; সমগ্র সৃষ্টিতে তিনি অন্তর্ভুক্ত । ঈশ্বর আমার মধ্যে আছেন এ ধারণা আংশিক সঠিক। মানুষ ঈশ্বরের অংশ বলেই নিজেকে আত্মস্থ করার মধ্যে ঈশ্ব

শূন্য করিয়া রাখ তোর বাঁশি

Image
‘আমার এ যে বাঁশের বাঁশি, মাঠের সুরে আমার সাধন’—বাঁশি সাধারণত বাঁশেরই হয়, কাঠের হয় না । ।   বাঁশি হতে হলে ভিতরটা ফাঁকা থাকতে হয় । বাঁশিতে আরও থাকতে হয় ছিদ্র যেখান দিয়ে সুর বেরিয়ে আসে । ছিদ্রবিহীন বাঁশি, বাঁশি নয় । বাঁশি ফুঁ দিয়ে বাজাবার যন্ত্রবিশেষ । বাঁশিতে থাকে ছয়টি ছিদ্র যা মানুষের দুই চোখ, দুই কান, এবং দুই নাকের প্রতিরূপ । এইসব ছিদ্রের ওপর খেলা করে নমনীয় আঙুল । আর থাকে একটি বড় ছিদ্র যা মুখের প্রতিরূপ । এই ছিদ্র স্পন্দিত হয় কম্পমান ঠোটের স্পর্শে । বাঁশিকে মনে করা হয় মানুষের প্রতীক । ইংরেজি ‘ গীতাঞ্জলি ’- তে রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয় এই কল্পনা দিয়ে যে , ঈশ্বর হলেন একজন বাঁশিবাদক , আর কবি নিজে তাঁর হাতের বাঁশি। এই বাঁশিবাদকের উদ্দেশে কবি র  অঞ্জলি   — You have made me endless, such is Your pleasure. This frail vessel You empty again and again, and fill it ever with fresh life. This little flute of a reed You have carried over hills and dales and have breathed through it melodies eternally new. আমারে তুমি অশেষ করেছ , এমনি লীলা তব – ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব

রঙে রঙে বোনা

Image
দৃষ্টিক্ষম মানুষের জন্য ঈশ্বরের সুন্দরতম উপহার হচ্ছে রং । জলে, স্থলে, আকাশে সর্বত্র রঙের প্রাচুর্য । চারপাশে যা-কিছু আমাদের চোখে পড়ে তা আসলে বিভিন্ন রঙের পোঁচ  মাত্র । রং সব কিছুকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে । রংবিহীন সৌন্দর্য যেন আমাদের নয়, অন্য কোনও জগতের । সেই আদিম কাল থেকেই মানুষ প্রকৃতির রঙের পরিবেষ্টনে প্রতিপালিত হয়ে আসছে । তাই মানুষের জীবনে রঙের প্রভাব অপরিসীম । রং এক ধরণের শক্তি যা মানুষের শরীর , মন , আবেগকে নানাভাবে প্রভাবিত করে । যেমন , লাল রং দেহে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে , হৃদস্পন্দন দ্রুততর করে । নীল রং লালের বিপরীত — দেহে প্রশান্তি আনে , মনে প্রেরণা সঞ্চার করে । পাশ্চাত্যের বহু দেশে ‘কালার থেরাপি’ ব্যবহার করা হয় দেহ-মনের রোগ নিরাময়ে । রঙের মাধ্যমে মানুষ তার মনোভাব প্রকাশ করতে পারে । অনেক সময়, যে-কথা বাক্য দিয়ে প্রকাশ করা যায় না, তা রং দিয়ে প্রকাশ করা যায় । চিত্রশিল্পীরা যেমনটা করে থাকেন তাঁদের চিত্রকর্মে । রং এক গভীর রহস্যজনক ভাষার নাম । রং মানুষের ‘নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন’ - এর ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে । এই ভাষায় কথা বলতে হলে রঙের অর্থ জানতে হয় । বলাবাহুল্য , র

সরস্বতী ভাবনা

Image
নদীকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছে প্রাচীন সভ্যতা । এমনই এক নদীর নাম সরস্বতী । খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয়-চতুর্থ সহস্রাব্দে উত্তরপশ্চিম ভারতে বহমান ছিল বিশাল এই নদী । এর তীরে গড়ে উঠেছিল বৈদিক সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র লতাকুঞ্জে ঘেরা তপোবন । সেখানে ঋষিরা বেদ রচনা , অধ্যায়ন তথা জ্ঞানসাধনায় নিমগ্ন থাকতেন। রচনা করতেন মহাজাগতিক ভাবরসে পুষ্ট মন্ত্রগাথা । কালক্রমে এই নদী হয়ে ওঠে বিদ্যার দেবী সরস্বতী । সরস্বতী­ অর্থ ‘ সতত রসে সমৃদ্ধা ’ । সরস্বতী মূলত জলের দেবী । নদীর নামে তাঁর নাম । নদীরূপা সরস্বতী স্বর্গ থেকে অবতীর্ণা দেবী নন । তিনি দেবীত্ব প্রাপ্ত নদী, একান্তভাবেই এই পৃথিবীর দেবী । তাই একসময় নদী সরস্বতী মরুপথে হারিয়ে গেলেও দেবী সরস্বতী আজও বিরাজমান পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে ।   পরবর্তীতে তিনি বাগদেবী অর্থাৎ ভাষার দেবীরূপে অধিষ্ঠিত হন । বেদে তাঁকে জলদাত্রী , অন্নদাত্রী , জ্ঞানদাত্রী প্রভৃতি রূপেও স্তুতি করা হয়েছে । কালক্রমে তাঁর ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয় । তিনি বিদ্যা , বুদ্ধি , জ্ঞান , সংগীত , শিল্পকলা , ভাষা , সাহিত্য , এবং সৌন্দর্যের দেবীরূপে বন্দিতা হয়েছেন । দেবী সরস্বতী শুভ্রবর্ণা, শ্বেতপদ্মে আস