সত্যম শিবম সুন্দরম: একটি আধ্যাত্মিক ত্রিতত্ত্ব
ঈশ্বর হলেন
নিখিল বিশ্বের সর্বোচ্চ বাস্তব সত্তা। এই মূল সত্তা থেকেই জগৎসংসারের সৃষ্টি ও
বিকাশ ঘটে। কিন্তু এই বাস্তব সত্তার বৈশিষ্ট্য কী? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় সংস্কৃত শব্দমালার
ছন্দোবদ্ধ স্তবক ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’-এ।
সত্যম: পরম
বাস্তবতা
‘সত্যম্’ অর্থ সত্য। এই সত্য এমন এক ‘পরম বাস্তবতা’, যা আপাতদৃষ্টিতে
বিভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্নরূপে প্রকাশ পেলেও এর মূল সত্তায় রয়েছে একটি অভিন্ন পরম
সত্য। এই সত্তা সরাসরি অনুভব করা যায় না; কেবল আনন্দ, বেদনা, দুঃখ প্রভৃতি অনুভূতির মাধ্যমে উপলব্ধি করা
সম্ভব। এটি হল সেই অনির্বচনীয় সত্তা, যা আমাদের অস্তিত্বের মূল।
শিবম: শুভ ও
মঙ্গলময়
‘শিবম্’ অর্থ শিব, যা শুভ এবং মঙ্গলময়। শিব এমন এক সর্বজনীন
কল্যাণের প্রতীক, যা মানবসমাজে সামঞ্জস্য বজায় রাখে এবং কল্যাণের
মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, শিবম্ হল সেই শক্তি, যা মানবসমাজের
কল্যাণে ক্রমাগত বিকশিত হয়। এটি জীবনের সেই ইতিবাচক গুণাবলী, যা সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও
ঐক্যের ভিত্তি গড়ে তোলে।
সুন্দরম:
সৌন্দর্যের দীপ্তি
‘সুন্দরম্’ হল সেই দীপ্তি, যা সত্য থেকে উৎসারিত হয়ে সকল কিছুকে
সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। এটি সৌন্দর্যের প্রতিফলিত রূপ, যেমন সূর্যের আলো চাঁদের গায়ে প্রতিফলিত হয়ে
চাঁদকে সুন্দর করে তোলে। প্রকৃত সৌন্দর্য হল সেই পরম জ্যোতির্ময়, যা সর্বত্র
বিরাজমান। প্রকৃতপক্ষে, সৌন্দর্য হল সেই মহিমা, যা সত্যম এবং
শিবমের মাধ্যমে বিকশিত হয়।
সুন্দরের আরাধনা, তাই, ঈশ্বরের আরাধনার
সমার্থক। এ কারণেই নোবেলজয়ী মার্কিন স্ট্রিং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড গ্রস
বলেছেন, ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস
করি না, তবে সুন্দরের
পূজা করি।’
সত্যম শিবম
সুন্দরম: এক আধ্যাত্মিক ত্রিতত্ত্ব
সংস্কৃত পদ্য
‘সত্যং শিবং সুন্দরম্’-এর সহজার্থ হল: সত্যই ঈশ্বর, যিনি মঙ্গলময় এবং সুন্দর। অর্থাৎ, যা সত্য, তা শুভ এবং
সুন্দর। ‘সত্যম-শিবম-সুন্দরম’ হল এক আধ্যাত্মিক ত্রিতত্ত্ব, যা মানুষের
চেতনা বিকাশের ত্রিগুণ সূত্র।
মানব চেতনার
বিকাশ
মানব চেতনার সবচেয়ে বিকশিত রূপ হল ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, যা বীজ হিসেবে নিহিত থাকে প্রতিটি মানুষের অন্তরে। সঠিক পরিচর্যা পেলে এই বীজ থেকে জন্ম নেয় এক সুদৃঢ় বৃক্ষ, যার শাখায় শোভা পায় ফুল। তখন ‘সত্য-শুভ-সুন্দর’ প্রকাশ পায় মানুষের সৃজনশীলতায়, ভালবাসায় এবং বন্ধুত্বে। ▣