সত্যম শিবম সুন্দরম
ঈশ্বর নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ বাস্তব সত্তা। এই মূল সত্তা থেকেই জগৎসংসারের সৃষ্টি ও বিকাশ। কিন্তু কী বৈশিষ্ট্য এই বাস্তব সত্তার? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে
সংস্কৃত শব্দের ছন্দোবদ্ধ স্তবক ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ দিয়ে।
সত্যম অর্থ সত্য। এই সত্য এমন এক
‘পরম বাস্তবতা’ যা ভিন্নজনের কাছে আপাত ভিন্নরূপে দেখা দিলেও এই বাস্তবতার পশ্চাতে
রয়েছে একটি ‘পরম সত্তা’। যে সত্তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায় না, কেবল আনন্দ বেদনা দুঃখ প্রভৃতি
অনুভূতির মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়।
শিবম অর্থ শিব। শিব মানে শুভ — যা কিছু মঙ্গলময় ও কল্যাণময় এই বিশ্বে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় — ‘শিবং হচ্ছে মানবসমাজের মধ্যে সেই সামঞ্জস্য যা নিয়তই কল্যানের মধ্যে বিকাশ লাভ করছে’।
সুন্দরম হচ্ছে ‘সত্য’ থেকে বেরিয়ে আসা দীপ্তি যা সকল কিছুকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে। সূর্যের কিরণ যেমন চাঁদের গায়ে প্রতিফলিত হয়ে চাঁদকে সুন্দর করে। প্রকৃতপক্ষে, সৌন্দর্য মানেই প্রতিফলিত আলোর মহিমা। প্রকৃতিতে যা কিছু সুন্দর তা সেই পরম জ্যোতির্ময় — পরম ‘সুন্দরম’-এর প্রতিফলন মাত্র। তাই, সুন্দরের আরাধনা আর ‘সত্যম-সুন্দরম’-এর আরাধনা সমার্থক। অর্থাৎ, সুন্দরের আরাধনা করলেই ঈশ্বরের উপাসনা করা হয়। সে কারণেই হয়তো, নোবেলজয়ী মার্কিন স্ট্রিংতাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড গ্রস বলেছেন — ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না, তবে সুন্দরের পূজা করি।
সংস্কৃত পদ্য ‘সত্যং শিবং সুন্দরম’ তর্জমা করলে দাঁড়ায় — সত্য-ই ঈশ্বর, যিনি মঙ্গলময় ও সুন্দর। অর্থাৎ যা সত্য, তা শুভ ও সুন্দর। সত্যম-শিবম-সুন্দরম হচ্ছে এক আধ্যাত্মিক ত্রিতত্ত্ব — মানুষের চেতনা বিকাশের ত্রিগুণ সূত্র।
মানব চেতনার সবচেয়ে বিকশিত রূপটি হচ্ছে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ যা বীজ হিসাবে নিহিত থাকে মানুষের অন্তরে। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে বীজ থেকে জন্মায় তরু, তরু শাখায় ধরে ফুল। তখন ‘সত্য-শুভ-সুন্দর’ প্রকাশ পায় মানুষের সৃজনশীলতায়, ভালবাসায়, বন্ধুত্বে। ▣