সরস্বতী ভাবনা
নদীকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছে প্রাচীন সভ্যতা। এমনই এক নদীর নাম সরস্বতী। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয়-চতুর্থ সহস্রাব্দে উত্তরপশ্চিম ভারতে বহমান ছিল বিশাল এই নদী। এর তীরে গড়ে উঠেছিল বৈদিক সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র লতাকুঞ্জে ঘেরা তপোবন। সেখানে ঋষিরা বেদ রচনা, অধ্যায়ন তথা জ্ঞানসাধনায় নিমগ্ন থাকতেন। রচনা করতেন মহাজাগতিক ভাবরসে পুষ্ট মন্ত্রগাথা। কালক্রমে এই নদী হয়ে ওঠে বিদ্যার দেবী সরস্বতী।
সরস্বতী অর্থ ‘সতত রসে সমৃদ্ধা’। সরস্বতী মূলত জলের দেবী।
নদীর নামে তাঁর নাম। নদীরূপা সরস্বতী স্বর্গ থেকে অবতীর্ণা
দেবী নন। তিনি
দেবীত্ব প্রাপ্ত নদী, একান্তভাবেই এই পৃথিবীর দেবী। তাই একসময় নদী সরস্বতী
মরুপথে হারিয়ে গেলেও দেবী সরস্বতী আজও বিরাজমান পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে।
পরবর্তীতে
তিনি বাগদেবী অর্থাৎ ভাষার দেবীরূপে অধিষ্ঠিত হন। বেদে তাঁকে
জলদাত্রী, অন্নদাত্রী, জ্ঞানদাত্রী প্রভৃতি রূপেও স্তুতি
করা হয়েছে। কালক্রমে তাঁর ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়। তিনি বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, ভাষা, সাহিত্য, এবং
সৌন্দর্যের দেবীরূপে বন্দিতা হয়েছেন।
দেবী
সরস্বতী শুভ্রবর্ণা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শুভ্র হংসবাহনা, শ্বেতপুস্পে শোভিতা,
শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা, শ্বেতচন্দনচর্চিতা। শুভ্র বা শ্বেত বর্ণ মানে সাদা রং।
সাদা নির্মলতার প্রতীক। পবিত্রতার প্রতীক। তিনি বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে।
তাঁর একহাতে বীণা ও অন্য হাতে পুস্তক।