Posts

একটি খড়ে বিপ্লব ও প্রাকৃতিক কৃষি

Image
একদিন না-চষা জমিতে শুধু বীজ ছিটিয়ে ফসল ফলানোর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল আজকের কৃষি । তার পর অতিক্রান্ত হয়েছে প্রায় বারো হাজার বছর । ইতিমধ্যে জনসংখ্যা বেড়েছে জ্যামিতিক হারে । আনুপাতিক হারে বেড়েছে খাদ্যের চাহিদা । সে দিনের সেই কৃষিপদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না । তাই কৃষিপদ্ধতির ঘটেছে আমূল পরিবর্তন । আজ মানুষ ব্যবহার করছে উচ্চফলনশীল জাতের বীজ । গভীর চাষ দিয়ে ভাঙছে মাটি । উচ্চমাত্রায় প্রয়োগ করছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিষ । ফলে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের বিবর্তনের ধারায় প্রতিষ্ঠিত দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী শস্যের জাত । বিনষ্ট হচ্ছে মাটির তেজ — উর্বরাশক্তি । কলুষিত হচ্ছে পরিবেশ । আধুনিক বিজ্ঞানের অবদান সর্বনাশা এই কৃষিপদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাপানি দার্শনিক ও কৃষিবিদ মাসানবু ফুকুওকা । তিনি ঘোষণা করলেন, প্রকৃতিকে জয় করে বা ধ্বংস করে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহযোগিতা করেই আমাদেরকে টিকে থাকার কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে । তাই তিনি শোনালেন প্রাকৃতিক কৃষির কথা । মাসানবুর প্রাকৃতিক কৃষিব্যবস্থা চারটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । প্রথমত, জমি চাষ না

বাড়ি বদল

Image
গভীর রাতে এক চোর গৃহস্থের বাড়িতে সিঁধ কেটে প্রবেশ করল । গৃহকর্তা ঘুমোচ্ছিল । আসলে না , সে ঘুমের ভান করছিল । চোখ সামান্য খোলা রেখে দেখছিল , চোর কী করছে । অন্য কারও কাজে হস্তক্ষেপ করা তার স্বভাব নয় । তাছাড়া , চোর তো তার ঘুমে বাধা দিচ্ছে না , সে কেন চোরের কাজে বাধা দিবে! চোরকে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেওয়াই ভাল । গৃহকর্তাকে চোরের অদ্ভুত মনে হচ্ছিল । সব জিনিসপত্র ঘর থেকে বের করা হচ্ছে । মাঝে মাঝে কিছু জিনিস হাত থেকে পড়ে শব্দ হচ্ছে । তা সত্ত্বেও গৃহকর্তার ঘুম ভাঙছে না । একবার তার মনে হল , এ ধরণের ঘুম তো সম্ভব যখন কেউ জেগে ঘুমায় । কী অদ্ভুত মানুষ , কিছুই বলছে না! তার যা-কিছু ছিল ঘরে সবই বের করা হয়েছে । চোর সব জিনিসপত্র ঠেলা গাড়িতে তুলে বাড়ির দিকে চলছে । হঠাৎ মনে হল , কেউ তার পিছনে হাঁটছে । সে পিছন ফিরে দেখল , এই সেই মানুষ যে এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিল । সে তাকে বলল , ‘ তুমি কেন আমার পিছু নিয়েছ ?’ গৃহকর্তা বলল , ‘ না , আমি তো তোমার পিছু নেইনি , আমি বাড়িবদল করছি । তুমি আমার সব কিছু নিয়েছ , এখন ওই বাড়িতে আমি কী করব । তাই আমিও চলছি তোমার সঙ্গে । ’ চোর উদ্বিগ্ন হয়ে বলল , ‘ আমাকে ক্ষমা ক

নদী

Image
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণশক্তির টানে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ফিতাকারে নেমে আসা বিপুল জলরাশিকে নদী বলা হয় । নদীর থাকে উৎস, যেখান থেকে জলরাশি বইতে শুরু করে । পার্বতীয় বৃষ্টি বা বরফগলা জল হতে পারে নদীজলের উৎস । তা ছাড়া নদীর থাকে মোহনা, যেখানে নদী সাগরে মেশে । নদী এক বিস্ময়কর ব্যাপার । নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান লেখক হেরমান হেস তাঁর ‘সিদ্ধার্থ’ উপন্যাসে বলেছেন — নদী তার উৎসে, পর্বতশিখরে, জলপ্রপাতে, জলস্রোতে, মোহনায়, সর্বত্র একই সময় বর্তমান । নদী তাই ক্রিয়াকালহীন । তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ যুগপৎ ঘটমান ।    ব্লক ইউনিভার্স তত্ত্ব অনুসারে মানুষের জীবনও ক্রিয়াকালহীন । তার জীবনকালের সমস্ত ঘটনাবলী একই সময় সংঘটিত হয়ে একই সঙ্গে বিদ্যমান থাকে ব্লক-মহাবিশ্বের চতুর্মাত্রিক স্থানকালিক ধাত্রে । তা সত্ত্বেও, যে-জল নদীতে প্রবাহিত হয় তা কখনও এক জল নয় । নদীর জল সদা বহমান, সদা পরিবর্তনশীল; কখনওই স্থির নয় । সে কারণেই গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস বলেছিলেন, ‘কেউ একই নদীতে দুই বার নামতে পারে না । ’ কারণ তখন সে-নদী আর আগের নদী নয়, নতুন জলে নতুন নদী । নদীর জলের মূল উৎস সাগরে জল ।   সাগরে  জল সূর্যের স্পর্শে বাস্

বাহিরের আকাশ হৃদয়ের আকাশ

Image
ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে বায়ুমন্ডল ও মহাশূন্য সমেত সব জায়গাই আকাশ । আকাশ পৃথিবীকে বেষ্টন করে রাখে । কবিগুরুর ভাষায়, ‘আকাশ ধরারে বাহুতে বেড়িয়া রাখে, তবুও আপনি অসীম সুদূরে থাকে’ । পৃথিবীর সব দিকে আকাশ অসীম সুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ।   আকাশ অনন্ত অসীম । আকাশের কোনও সীমানা নেই, কিনারা নেই । আকাশের তাই কোনও দিকও নেই । গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, ‘আকাশে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে কোনও প্রভেদ নেই; মানুষ মনের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করে এবং তা বিশ্বাস করে’ । আকাশ যেন এক বিশাল প্রেক্ষাপট । সেখানে নিশিদিন চলে মেঘ রবি শশী তারাদের মনোরম চলচ্চিত্র । সেই সব চিত্রাবলী এতই বৈচিত্র্যময় যে কোনও দিনও পুরাতন মনে হয় না; বরং তা সতত মানুষের মনে আনন্দ যোগায়, মানুষকে সুখী করে । কবি বলেছেন, ‘জানিস কি রে কত যে সুখ, আকাশ-পানে চাহিলে পরে, আকাশ পানে তুলিলে মুখ’ । আকাশে অবস্থান করে চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র । আকাশেই তাদের জন্ম । পৃথিবীরও জন্ম আকাশে, এবং আকাশেই তার অবস্থান । আকাশেই সবার জন্ম এবং আকাশের অভিমুখেই সবার যাত্রা । আমাদের এক আকাশ, এক পরিণতি । তাই আমরা আকাশকে উপাসনা করব । আকাশের দিকে তাকিয়ে মঙ্গল প্রার্থনা করব ।  

মেঘ

Image
আকাশের শোভা মেঘ । মেঘ আছে বলেই আকাশ সুন্দর । নির্মেঘ আকাশ বৈচিত্র্যহীন, নীরস । আকাশ-গাঙে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে মেঘের ক্যানভাসে আঁকা রঙিন আলোর চিত্রকলা — এই সব দৃশ্যে মানুষের সৌন্দর্যতৃষ্ণা তৃপ্ত হয় । আকাশের কল্পনা থেকে সৃষ্টি হয় আশ্চর্য সব মেঘদল। আবার মেঘেদের বিচিত্র আকৃতি মানুষের মনকে করে কল্পনাপ্রবণ । মেঘেদের নির্দিষ্ট কোনও আকৃতি নেই, তবে সব আকৃতিই তাদের অধিকারে । আমরা মেঘেদের নিয়ে হাতি ঘোড়া মানুষ যা কল্পনা করি মেঘেরা তাই হয়। বহুকাল আগে , শিশু-কিশোরদের কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটতো আকাশের মেঘ দেখে; মেঘেদের মধ্যে জীবজন্তুর অবয়ব দেখে। আমাদের ছেলেবেলায় সেটা ছিল এক মজার বিনোদন। আজ যান্ত্রিক বিনোদনের এত আয়োজন যে আকাশের মেঘেদের নিয়ে কল্পনাবিলাস করার অবসর আর হয় না। জলকণা দিয়ে তৈরি হালকা মেঘ দলে দলে আকাশতলে ভেসে চলে । চলার পথে কোথাও ঝরায় বৃষ্টি , কোথাও বা তুষার । মেঘেদের চলা চিরকাল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, মানুষকে আনমনা করেছে । কৌতূহলী কবিমন আকাশের কাছে জানতে চেয়েছে — ‘মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন দেশে, ও আকাশ বল আমারে’! কিন্তু আকাশ কি জানে মেঘেরা কোন দেশে যায়!

উপনিষদ প্রসঙ্গ

প্রাচীন মানুষের মনে জেগে ওঠে অন্তহীন প্রশ্ন — এই সৃষ্টি কোথা থেকে এল ? কোন শক্তি আছে এর পিছনে ? যে শক্তিসমূহ দেখা যায় , তার উ ৎ স কোথায় ? এই সব জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে পেতে সে দিনের ঋষিরা মুক্তবুদ্ধি ও স্বজ্ঞা দিয়ে অনুসন্ধান করে যে সত্যে উপনীত হলেন তার উপর ভিত্তি করে রচিত হল অতি উন্নত মানের এক অসাধারণ দর্শন-সাহিত্য , যার নাম উপনিষদ । উপনিষদ সম্বন্ধে প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার (১৭৮৮-১৮৬০) বলেছেন , ‘ উপনিষদের প্রত্যেক বাক্য হতে গভীর , মৌলিক এবং উন্নত চিন্তা লাভ করা যায় , আর গ্রন্থগুলিকে উচ্চ , পবিত্র ও আন্তরিকভাবে পরিব্যাপ্ত বলে মনে হয় । ... জগতে উপনিষদের মত এমন আর কোনও গ্রন্থ নেই যা পাঠ করে এত কল্যাণ , এত উৎকর্ষ লাভ করা যেতে পারে । ... এগুলি সর্বোচ্চ জ্ঞানের ফল । ... এই সমস্ত একদিন না একদিন মানবের ধর্মবিশ্বাসে দাঁড়াবেই দাঁড়াবে । ’ উপনিষদ রচিত হয় সংস্কৃত ভাষায় । উপনিষদের ঋষিরা ছিলেন চিন্তাবিদ ও কবি । তাঁদের রচিত উপনিষদ আসলে দর্শন-কাব্য । সবচেয়ে প্রাচীন উপনিষদগুলির রচনা সম্পন্ন হয় খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম ও তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে । এর পরেও উপনিষদ রচনা চলতে থাকে । ধরা হ

বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা

Image
যে ঋতুতে বর্ষণ হয় তার নাম বর্ষা । বর্ষার আছে বৃষ্টি । গ্রীষ্মের পর বর্ষা সবুজ সুধার ধারায় প্রাণ এনে দেয় তপ্ত ধরায় । বৃষ্টি ছাড়াও বর্ষার আছে বজ্রবিদ্যুৎ । ধরণীকে বৃষ্টি যোগায় জল , আর বিদ্যুৎ যোগায় পুষ্টি ।   কীভাবে, সে বিষয়ে সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে । আমাদের শরীরে প্রয়োজন প্রোটিন । প্রোটিন তৈরি হয় নাইট্রোজেন দিয়ে । আমরা যে বাতাসে শ্বাস নেই তার ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন আর ২০ শতাংশ অক্সিজেন । বাতাসে এতো নাইট্রোজেন থাকা সত্বেও কোনও প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ তা সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না । কারণ বাতাসে যে নাইট্রোজেন থাকে তার অণুতে দুটি পরমাণু ( N 2 ) খুব শক্ত করে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে থাকে । প্রাণী ও উদ্ভিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে নাইট্রোজেন পরমাণুর এই বন্ধন ভাঙা প্রয়োজন । আর সে কাজটিই করে থাকে আষাঢ়ের বজ্রবিদ্যুৎ । নাইট্রোজেন-এর অণু ভাঙ্গতে পারে এমন শক্তি মানুষ কিংবা অন্য কোনও প্রাণীর শরীরে নেই । কিন্তু বজ্রপাতের রয়েছে সেই শক্তি । বজ্রপাতের সময় মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন বিদ্যুৎশক্তি বিদীর্ণ করতে পারে শিলা , ভাঙ্গতে পারে নাইট্রোজেন অণু । বজ্রাঘাতে  একটি নাইট্রোজেন অণু ভেঙে মুক্ত হয় দুট