বাহিরের আকাশ হৃদয়ের আকাশ
ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে বায়ুমন্ডল ও মহাশূন্য সমেত সব জায়গাই আকাশ। আকাশ পৃথিবীকে বেষ্টন করে রাখে। কবিগুরুর ভাষায়, ‘আকাশ ধরারে বাহুতে বেড়িয়া রাখে, তবুও আপনি অসীম সুদূরে থাকে’। পৃথিবীর সব দিকে আকাশ অসীম সুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।
আকাশ অনন্ত অসীম। আকাশের কোনও
সীমানা নেই, কিনারা নেই। আকাশের তাই
কোনও দিকও নেই। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, ‘আকাশে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে কোনও প্রভেদ নেই;
মানুষ মনের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করে এবং তা বিশ্বাস করে’।
আকাশে অবস্থান করে চন্দ্র সূর্য গ্রহ
নক্ষত্র। আকাশেই তাদের
জন্ম। পৃথিবীরও জন্ম আকাশে, এবং আকাশেই তার অবস্থান। আকাশেই সবার জন্ম এবং আকাশের অভিমুখেই
সবার যাত্রা। আমাদের এক আকাশ,
এক পরিণতি। তাই আমরা আকাশকে উপাসনা করব। আকাশের দিকে তাকিয়ে মঙ্গল প্রার্থনা করব।
মানুষের দেহে পদ্ম আকৃতির একটি
ক্ষুদ্র গৃহ আছে যাকে আমরা বলি হৃদয়পদ্ম, বা শুধুই হৃদয়। ফরাসি সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো (১৮০২-১৮৮৫) বলেছেন, ‘একটি দৃশ্য আছে যা
সাগরের চেয়ে বড়, তা হচ্ছে আকাশ; একটি দৃশ্য আছে যা আকাশের চেয়ে বড়, তা হচ্ছে
হৃদয়ের অভ্যন্তর’। এই হৃদয়ের অভ্যন্তরকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, হৃদয়াকাশ — ‘দোলে প্রেমের
দোলন-চাঁপা হৃদয়-আকাশে’।
আকাশের আর এক নাম অন্তরীক্ষ। অন্তরীক্ষ শব্দটি তৈরি হয়েছে অন্তর্ ও ঈক্ষ্ সমন্বয়ে। ঈক্ষ্ মানে দেখা। অর্থাৎ অন্তর
দেখা আর আকাশ দেখার মধ্যে সাযুজ্য রয়েছে। এখান থেকে অন্তর-আকাশের
অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হৃদয়াকাশের উল্লেখ আছে ছান্দোগ্য
উপনিষদে। বলা হয়েছে, ‘বাহিরের
আকাশ যত বড় হৃদয়ের অভ্যন্তরস্থ আকাশও তত বড়। এরই মধ্যে
নিহিত স্বর্গ ও পৃথিবী, অগ্নি ও বায়ু, সূর্য ও চন্দ্র, বিদ্যুৎ ও নক্ষত্র, এবং
দেহবান আত্মার ইহলোকে যা আছে ও যা নেই, সেই সমস্ত। এবং দেহের জরায় অন্তরস্থ আকাশ জীর্ণ হয় না; দেহ নষ্ট হলেও তা বিনষ্ট
হয় না’।
অর্থাৎ, যা আছে বাইরের আকাশে তা আছে
হৃদয়াকাশে। সুতরাং প্রেম-ভক্তি, সুখ-আনন্দ, যা কিছু চাওয়ার তা আমরা অন্বেষণ করব
আপন হৃদয়ের মধ্যে। হৃদয়াকাশে মানুষ যা চায় ও যা যা কামনা করে, সংকল্প মাত্র তা তার নিকট
উপস্থিত হয়।
কোনও আত্মীয় বা প্রিয়জন ইহলোক থেকে
চলে গেলে মানুষ আর তাকে দেখতে পায় না। যারা জীবিত অথচ
বহু দূরে আছে তাদেরও দেখা যায় না। কিন্তু আপন হৃদয়াকাশে গিয়ে তাদের দেখা পাওয়া যায়।