বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা

যে ঋতুতে বর্ষণ হয় তার নাম বর্ষা বর্ষার আছে বৃষ্টি গ্রীষ্মের পর বর্ষা সবুজ সুধার ধারায় প্রাণ এনে দেয় তপ্ত ধরায় বৃষ্টি ছাড়াও বর্ষার আছে বজ্রবিদ্যুৎধরণীকে বৃষ্টি যোগায় জল, আর বিদ্যুৎ যোগায় পুষ্টি কীভাবে, সে বিষয়ে সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে

আমাদের শরীরে প্রয়োজন প্রোটিন প্রোটিন তৈরি হয় নাইট্রোজেন দিয়ে আমরা যে বাতাসে শ্বাস নেই তার ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন আর ২০ শতাংশ অক্সিজেন বাতাসে এতো নাইট্রোজেন থাকা সত্বেও কোনও প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ তা সরাসরি গ্রহণ করতে পারে নাকারণ বাতাসে যে নাইট্রোজেন থাকে তার অণুতে দুটি পরমাণু (N2) খুব শক্ত করে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে থাকেপ্রাণী ও উদ্ভিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে নাইট্রোজেন পরমাণুর এই বন্ধন ভাঙা প্রয়োজন আর সে কাজটিই করে থাকে আষাঢ়ের বজ্রবিদ্যুৎ

thunder lightning

নাইট্রোজেন-এর অণু ভাঙ্গতে পারে এমন শক্তি মানুষ কিংবা অন্য কোনও প্রাণীর শরীরে নেই কিন্তু বজ্রপাতের রয়েছে সেই শক্তিবজ্রপাতের সময় মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন বিদ্যুৎশক্তি বিদীর্ণ করতে পারে শিলা, ভাঙ্গতে পারে নাইট্রোজেন অণুবজ্রাঘাতে একটি নাইট্রোজেন অণু ভেঙে মুক্ত হয় দুটি নাইট্রোজেন পরমাণু। মুক্ত হওয়া নাইট্রোজেন পরমাণু বৃষ্টির জলের সঙ্গে নেমে আসে মাটিতে, এবং মাটির মিনেরাল-এর সঙ্গে মিশে তৈরি করে নাইট্রেট, যা সার হিসেবে উদ্ভিদ গ্রহণ করে তারপর উদ্ভিদ থেকে সেই নাইট্রোজেন আসে পশু ও মানুষের শরীরে

বজ্রপাত শুধু বর্ষার কালো মেঘের গলায় বিদ্যুতের মালা পরায় না, উর্বর করে ধরণীর মৃত্তিকাকেআর তাই রবীন্দ্রনাথ বর্ষাবন্দনা করেছেন এই ভাষায়:

বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা, আষাঢ় তোমার মালা
শ্যামল শোভার বুকে বিদ্যুতেরই জ্বালা
তোমার মন্ত্রবলে পাষাণ গলে, ফসল ফলে
মরু বহে আনে তোমার পায়ে ফুলের ডালা॥  

✍অসীম দে
গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা

Popular posts from this blog

শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়

সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশ — সৃষ্টিতত্ত্বের মূলভাব

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

তেল মাহাত্ম্য

ঈশ্বর, প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

রাসলীলা মাহাত্ম্য

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

সূর্য উপাসনা

হৃদয়-দর্পনে দেখা