মেঘ
আকাশের শোভা মেঘ। মেঘ আছে বলেই আকাশ সুন্দর। নির্মেঘ আকাশ বৈচিত্র্যহীন, নীরস। আকাশ-গাঙে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে মেঘের ক্যানভাসে আঁকা রঙিন আলোর চিত্রকলা — এই সব দৃশ্যে মানুষের সৌন্দর্যতৃষ্ণা তৃপ্ত হয়।
আকাশের কল্পনা
থেকে সৃষ্টি হয় আশ্চর্য সব মেঘদল। আবার মেঘেদের বিচিত্র আকৃতি মানুষের মনকে করে কল্পনাপ্রবণ। মেঘেদের নির্দিষ্ট কোনও আকৃতি নেই,
তবে সব আকৃতিই তাদের অধিকারে। আমরা মেঘেদের নিয়ে হাতি ঘোড়া মানুষ যা
কল্পনা করি মেঘেরা তাই হয়। বহুকাল আগে, শিশু-কিশোরদের
কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটতো আকাশের মেঘ দেখে; মেঘেদের মধ্যে জীবজন্তুর অবয়ব দেখে। আমাদের
ছেলেবেলায় সেটা ছিল এক মজার বিনোদন। আজ যান্ত্রিক বিনোদনের এত আয়োজন যে আকাশের
মেঘেদের নিয়ে কল্পনাবিলাস করার অবসর আর হয় না।
জলকণা দিয়ে তৈরি
হালকা মেঘ দলে দলে আকাশতলে ভেসে চলে। চলার পথে কোথাও ঝরায় বৃষ্টি, কোথাও বা তুষার। মেঘেদের চলা চিরকাল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে,
মানুষকে আনমনা করেছে। কৌতূহলী কবিমন আকাশের কাছে জানতে চেয়েছে — ‘মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন
দেশে, ও আকাশ বল আমারে’! কিন্তু আকাশ কি জানে মেঘেরা কোন দেশে যায়!
এমনিতে মেঘেদের কাছে কোনও পথের মানচিত্র থাকে না। কারণ
মেঘেদের চলা গন্তব্যবিহীন। গন্তব্য থাকলে পথ থাকে, পথের মানচিত্র
থাকে।
মেঘেদের সে সবের বালাই নেই। আসলে মেঘেদের নিজস্ব কোনও চলাও নেই। তারা
কেবলই হাওয়ার স্রোতে ভেসে বেড়ায়। এই ভেসে বেড়ানোতেই তাদের আনন্দ।
মেঘেরা আসলে নিরুদ্দেশের পথিক। বিশেষ কোনও পথ অনুসরণ করা তাদের স্বভাব নয়। পথ হারানোতেই তাদের আনন্দ। মেঘেদের চলার এই ধরণ মানুষকে প্রভাবিত করে। মানুষের মন বন্ধনক্লিষ্ট জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যেমন আছে: পথিক মেঘের দল জোটে ওই শ্রাবণগগন-অঙ্গনে।
কিসের বাধা ঘরের কোনের শাসনসীমা-লঙ্ঘনে॥