আলেকজান্ডার ও দিওগেনেস — জীবনের অন্তিম লক্ষ্য

প্রায় দুই হাজার বছর আগে গ্রিসদেশে দিওগেনেস নামে এক দার্শনিক ছিলেন অদ্ভুত ছিল তাঁর আচরণ; তিনি দিনের বেলায় আলো হাতে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন, বলতেন, একজন সৎ মানুষ খুঁজছেন জনগণ তাঁকে সাধু মনে করত একই সময়ে সেদেশে ছিলেন একজন প্রতিভাধর যোদ্ধা, যিনি মহান আলেকজান্ডারনামে সারা বিশ্বে পরিচিত তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল একদিকে বলকান থেকে হিমালয়, আরেক দিকে মিশর থেকে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত

alexander and diogenes

গ্রীষ্মের এক দুপুরে নদীর ধারে বৃক্ষের নিচে বিবস্ত্র হয়ে আরাম করছিলেন দিওগেনেস হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, কে যেন ঘোড়ায় চড়ে তাঁর দিকে আসছে কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারলেন, লোকটি আর কেউ নয় স্বয়ং আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট আর তিনি এও বুঝলেন যে, আলেকজান্ডার আবার নতুন কোনও দেশ দখল করতে যাচ্ছে কারণ প্রতিবারই নতুন কোনও দেশ আক্রমণ করতে যাওয়ার আগে আলেকজান্ডার আসেন দিওগেনেসের কাছে আশীর্বাদ নিতে আলেকজান্ডার অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন দিওগেনেসকে এমনটাও বলতেন যে, পরজন্মে সুযোগ পেলে আলেকজান্ডার নয়, দিওগেনেস হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে চান তিনি

কাছে এসে মাথা নত করে আলেকজান্ডার গুরুদেবকে অভিবাদন করলেন

দিওগেনেস মুখে হাসি এনে জিজ্ঞেস করলেন কী আলেকজান্ডার, এবার কোন দেশের উপর তোমার নজর পড়ল?

আলেকজান্ডার বিনীত কন্ঠে বললেন গুরুদেব, এবার যাচ্ছি ভারত উপমহাদেশ জয় করতে, আমাকে আশীর্বাদ করুন

দিওগেনেস স্মিত হেসে বললেন আশীর্বাদ তো করলাম এখন বলো, এরপর যাবে কোন দেশ বিজয়ে?

আলেকজান্ডার একটু চিন্তার ভান করে বললেন, ভাবছি এরপর যাব পূর্ব এশিয়ার দিকে

দিওগেনেস এবার জানতে চাইলেন, তারপর কোন দেশে যাবে বলে ভাবছ?

আলেকজান্ডার একটু ভেবে বললেন, গোটা পৃথিবীটাই জয় করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার, গুরুদেব

দিওগেনেস বুঝতে পারলেন দেশ জয় করাটা ওর নেশায় পরিণত হয়েছে, বললেন পৃথিবী তো মাত্র একটা, সেটা জয় করা হয়ে গেলে জয় করার মতো আর কিছুই যে থাকবে না তখন কী করবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য, হে মহান আলেকজান্ডার?

এবার আলেকজান্ডার চিন্তায় পড়ে গেলেন সত্যিই তো, কী করবেন তিনি, তখন তো আর কোনও দেশই জয় করার জন্য অবশিষ্ট থাকবে না! নিজেকে সামলে নিয়ে আলেকজান্ডার বললেন, গুরুদেব, এরপর আর যুদ্ধ নয়; এরপর শুধু রিল্যাক্স, শুধু বিশ্রাম আর আরাম!

তখন দিওগেনেস হেসে বললেন, রিল্যাক্স করাই যদি তোমার জীবনের অন্তিম লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে এক্ষণই কেন যোগ দিচ্ছ না আমার সঙ্গে! আমি তো সেটাই করছি জীবন ভর, অথচ সেজন্য একটি দেশও জয় করতে হয়নি আমাকে!  


ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বিশ্রাম নেবার মতো অবসর আর পাননি আলেকজান্ডার ভারত থেকে ফেরার কিছু দিন পরই, মাত্র বত্রিশ-তেত্রিশ বছর বয়সে, হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতায় তিনি মারা যান 

কতটুকু ধনসম্পত্তির প্রয়োজন একজন মানুষের জীবনে? বিষয়-আশয় কি পারে জীবনের শান্তিপূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করতে? 

অসীম দে
গুয়েল্ফ, অন্টারিও, কানাডা 

Popular posts from this blog

শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ চেনার উপায়

সীমার মাঝে অসীমের প্রকাশ — সৃষ্টিতত্ত্বের মূলভাব

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

তেল মাহাত্ম্য

ঈশ্বর, প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ

রাসলীলা মাহাত্ম্য

আঁধারের রূপ ও বিপন্ন অন্ধকার

আধ্যাত্মিকতা — পাশ্চাত্য ভাবধারার আলোকে

সূর্য উপাসনা

হৃদয়-দর্পনে দেখা