নক্ষত্র শোভিত আকাশ
মহাবিশ্বে সবচেয়ে
সুন্দর দুটি জিনিস হচ্ছে তারায়-ভরা রাতের আকাশ, আর ভালোবাসায় ভরা মানুষের হৃদয়। নক্ষত্রখচিত আকাশের সঙ্গে পৃথিবীর মানুষের সম্পর্ক ভালবাসার। এই ভালবাসার শুরু বহুদিন আগে। সেই যেদিন মানুষ চতুস্পদ জীবন ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েছে, সেদিন
থেকেই রাতের আকাশ মানুষকে মুগ্ধ করেছে, মানুষের সঙ্গে নক্ষত্রদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে।
বৈদ্যুতিক বাতি, রেডিও,
সিনেমা, টেলিভিশন উদ্ভাবনের বহু আগে এমন এক দিন ছিল, যখন আমাদের পূর্বপুরুষরা সন্ধ্যা হলে মৃত্তিকায় পিঠ রেখে চোখ রাখত তারায়
ভরা আকাশে। মুগ্ধ হয়ে দেখত আকাশের অপার মহিমা ও সৌন্দর্য। তখন এটাই ছিল মানুষের প্রধান রাত্রিকালীন বিনোদন।
তখন মানুষ
নিশ্চিতভাবে কিছুই জানত না। তবু, রহস্যময় রাতের আকাশ মানুষকে
আকর্ষণ করত, ভাবতে শেখাত। নক্ষত্রদের মৌনমন্ত্রভাষণ মানুষকে সম্মোহিত করত, স্বপ্ন দেখাত।
নক্ষত্র ও মানুষের
মধ্যকার সেই সখ্যতা আজ আর আগের অবস্থায় নেই। পৃথিবীর মানুষকে স্বপ্ন দেখাবে বলে আজও নক্ষত্ররা সারা রাত জেগে থাকে
প্রতীক্ষায়। কিন্তু মানুষের অবসর হয় না আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকাবার। নক্ষত্রের শুদ্ধ আলোর চেয়ে সভ্যতার কৃত্রিম আলো
মানুষকে আজ বেশি আকর্ষণ করে।
তবু যদি কোনও মায়াবিনী রাতে নক্ষত্ররা নীরবে ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে যায়, তাকাবে তাদের পানে বিস্ময়ভরা চোখে। হৃদয়ঙ্গম করবে আকাশের অপার সৌন্দর্য-মহিমা। কৃতজ্ঞতা জানাবে সেই সৌন্দর্যের স্রষ্টাকে। অনুভব করবে, আকাশের নির্মল প্রশান্তি ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হচ্ছে হৃদয় জুড়ে। তখন কোনও একটি নক্ষত্রের দিকে একাগ্রচিত্তে দৃষ্টিনিবদ্ধ রাখলে একসময় দেখবে, অন্ধকার আকাশে নক্ষত্রপুঞ্জের দৃশ্যমান আড়ম্বর ছাপিয়ে ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হচ্ছে স্রষ্টার অদৃশ্য দীপ্তি। নক্ষত্রের সেই পুণ্য আলোয় যখন আলোকিত হবে হৃদয়, তখন শুনতে পাবে, তাঁরই নামগান ধ্বনিত হচ্ছে সকল তারার মাঝে। আলোকিত হৃদয়ের কবি রবীন্দ্রনাথ যেমন শুনেছিলেন — ‘আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে, তোমারি নাম সকল তারার মাঝে’। ▣