Posts

সূর্য উপাসনা

Image
মানবসভ্যতার প্রারম্ভে মানুষ সূর্যের উপাসনা করত। এটি পৃথিবীর প্রায় সব আদিম ও প্রাচীন সভ্যতায় প্রচলিত ছিল। সে যুগে সূর্য উপাসনা ছিল জ্ঞান ও সত্যে পরিপূর্ণ এক উন্নত মানসিকতার প্রতীক। সূর্য সমগ্র জীবনের উৎস। সূর্যের কারণেই উদ্ভিদ টিকে আছে , আর উদ্ভিদের কারণেই প্রাণিজগৎ। সূর্যের আলো ও তাপে শস্য পরিপুষ্ট হয় , এবং সেই শস্য থেকে আমরা জীবনের শক্তি সংগ্রহ করি। সূর্য সমস্ত শক্তির মূল। সূর্য নিভে গেলে পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এই কারণেই প্রাচীন মানুষ সূর্যকে ঐশ্বরিক ক্ষমতাসম্পন্ন মনে করত এবং ভক্তিভরে তার কাছে প্রণত হত। সূর্য আমাদের সৌরমণ্ডলের কেন্দ্রবিন্দু এবং আমাদের জীবনের প্রধান আশীর্বাদ। সূর্য আমাদের দেবতা। তিনিই একমাত্র দেবতা যাকে আমরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারি। এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। আমরা দেখি , জীবনের জন্য যা প্রয়োজন , সূর্য তার সবকিছুই আমাদের প্রদান করে — উত্তাপ , আলো , খাদ্য , ফুল এবং এমনকী ঝিলের জলে মোহন প্রতিবিম্ব। তাই মানুষের পক্ষে সূর্যের প্রতি ভক্তি , ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা স্বাভাবিক। সূর্যের উপাসনা মানুষের সহজাত প্রতিক্রিয়া। ...

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা — চন্দ্রসূর্যের মিলন ও বিরহ তিথি

Image
অমাবস্যা হল কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি , যখন চাঁদ সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। মনে হতে পারে , চাঁদ যেন হারিয়ে গেছে , কিন্তু আসলে সে সূর্যের তীব্র আলোয় আড়াল হয়ে থাকে। সূর্যের আলোর বিপুলতা চাঁদের উপস্থিতিকে মুছে দেয় , ফলে আমরা তাকে দেখতে পাই না । অমাবস্যার দিনে সূর্য ও চাঁদ একইসঙ্গে উদিত হয় এবং অস্ত যায়। তারা সারাদিন পাশাপাশি থেকে আকাশে পরিভ্রমণ করলেও সূর্যের উজ্জ্বল দীপ্তিতে চাঁদ অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে। রাতেও তাদের অবস্থান কাছাকাছি থাকে , তবে তখনও চাঁদের গায়ে সূর্যের আলো পড়লেও তা আমাদের চোখে ধরা দেয় না , কারণ তখন তারা দুজনেই দিগন্তের ওপারে অস্ত যায় । এই দিনে সূর্য , চাঁদ ও পৃথিবী একই সরল রেখায় অবস্থান করে , যেখানে চাঁদ সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চলে আসে। এটি এক মহাজাগতিক সংযোগ , যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সিজিজি’ ( syzygy) বা ‘ কক্ষপথের যুগল ’ নামে পরিচিত। এসময় চাঁদ ও সূর্য যেন পরস্পরের সান্নিধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকে , এক অদ্ভুত মহাজাগতিক সামঞ্জস্যে । এটি এক মহাজাগতিক প্রেমের রূপক , যেখানে সূর্য তার কিরণ চাঁদের ওপর বর্ষণ করে , আর চাঁদ সেই আলো প্রতিফলিত করে সূর্যের প্রতি তার নিবেদন জানায়। বাংলা ভাষায় অ...

অন্ধকার ও ইন্দ্রিয় অনুভূতি

মানুষ তার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে জানতে পারে কিছু নির্দিষ্ট দেহযন্ত্রের মাধ্যমে , যেগুলোর নাম ইন্দ্রিয়। মানুষের শরীরে পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে: চক্ষু (দর্শনেন্দ্রিয়) , ত্বক (স্পর্শেন্দ্রিয়) , কর্ণ (শ্রবণেন্দ্রিয়) , জিহ্বা (রসনেন্দ্রিয়) ও নাসা (ঘ্রাণেন্দ্রিয়)। এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রধান কাজ আমাদের দেহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা । পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে দর্শনেন্দ্রিয় সবচেয়ে শক্তিশালী , আর সবচেয়ে দুর্বল সম্ভবত ঘ্রাণেন্দ্রিয়। তবে , ইন্দ্রিয়গুলো একে অপরের পরিপূরক। যখন একটি ইন্দ্রিয় দুর্বল হয়ে পড়ে , তখন অন্য ইন্দ্রিয়গুলো আরও তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। এজন্যই দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষের অন্যান্য ইন্দ্রিয় তুলনামূলকভাবে অধিক সংবেদনশীল হয়ে ওঠে । রাতের অন্ধকারে যখন আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় নিষ্ক্রিয় বা সীমিত হয়ে পড়ে , তখন অন্যান্য ইন্দ্রিয় , বিশেষত শ্রবণ , স্পর্শ ও ঘ্রাণেন্দ্রিয় আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। নৈঃশব্দ্যের মধ্যে ছোট ছোট শব্দ আরও স্পষ্টভাবে শোনা যায় , ফলে রাতের বেলায় প্রকৃতির শব্দময়তা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে । রাত্রিকালীন পরিবেশ আমাদের রসনেন্দ্রিয় ও ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের সংবেদনশীলতা ...

তারার আলো ও হৃদয়ের আবেগ

মহাবিশ্বের দুটি অনন্য সৌন্দর্য — তারায় ভরা রাতের আকাশ ও ভালবাসায় ভরা মানুষের হৃদয়। আকাশের সঙ্গে মানুষের এই বন্ধন আদিমকাল থেকেই অটুট। সেই মুহূর্ত থেকে , যখন মানুষ প্রথমবার আকাশের দিকে তাকিয়েছিল , নক্ষত্রেরা তাকে মুগ্ধ করেছে , স্বপ্ন দেখিয়েছে । একসময় , বৈদ্যুতিক আলো কিংবা বিনোদনের আধুনিক মাধ্যমের আগে , মানুষের প্রধান রাত্রিকালীন আনন্দ ছিল আকাশ দেখা। তারা মৃত্তিকায় শুয়ে বিস্মিত নয়নে উপভোগ করত অসীম নক্ষত্ররাজির সৌন্দর্য। রাতের আকাশ ছিল এক রহস্য , যা মানুষকে ভাবতে শেখাত , কল্পনায় ভাসাত। নক্ষত্রের নীরব ভাষা হৃদয়কে সম্মোহিত করত , প্রশান্তি এনে দিত অন্তরে । কিন্তু আজ সেই সম্পর্ক ক্ষীণ হয়ে এসেছে। সভ্যতার কৃত্রিম আলো নক্ষত্রের শুদ্ধ দীপ্তিকে ম্লান করে দিয়েছে। রাতের আকাশ এখনও প্রতীক্ষায় থাকে , কিন্তু মানুষের দৃষ্টি আটকে থাকে নগরীর আলোর জালে । তবু , যদি কোনও এক রাতে কেউ তারাদের আহ্বান শোনে , বিস্মিত চোখে আকাশের দিকে তাকায় , তবে অনুভব করবে এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য। তারার আলো ধীরে ধীরে হৃদয়কে ভরিয়ে দেবে প্রশান্তিতে , সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় আবিষ্ট করবে মন। তখন , গভীরভাবে কোনও এক নক্ষত্রের দিকে...

সত্যম শিবম সুন্দরম: একটি আধ্যাত্মিক ত্রিতত্ত্ব

Image
ঈশ্বর হলেন নিখিল বিশ্বের সর্বোচ্চ বাস্তব সত্তা। এই মূল সত্তা থেকেই জগৎসংসারের সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটে। কিন্তু এই বাস্তব সত্তার বৈশিষ্ট্য কী ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় সংস্কৃত শব্দমালার ছন্দোবদ্ধ স্তবক ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’-এ । সত্যম: পরম বাস্তবতা ‘ সত্যম্’ অর্থ সত্য। এই সত্য এমন এক ‘পরম বাস্তবতা’ , যা আপাতদৃষ্টিতে বিভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্নরূপে প্রকাশ পেলেও এর মূল সত্তায় রয়েছে একটি অভিন্ন পরম সত্য। এই সত্তা সরাসরি অনুভব করা যায় না ; কেবল আনন্দ , বেদনা , দুঃখ প্রভৃতি অনুভূতির মাধ্যমে উপলব্ধি করা সম্ভব। এটি হল সেই অনির্বচনীয় সত্তা , যা আমাদের অস্তিত্বের মূল । শিবম: শুভ ও মঙ্গলময় ‘ শিবম্’ অর্থ শিব , যা শুভ এবং মঙ্গলময়। শিব এমন এক সর্বজনীন কল্যাণের প্রতীক , যা মানবসমাজে সামঞ্জস্য বজায় রাখে এবং কল্যাণের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় , শিবম্ হল সেই শক্তি , যা মানবসমাজের কল্যাণে ক্রমাগত বিকশিত হয়। এটি জীবনের সেই ইতিবাচক গুণাবলী , যা সৌহার্দ্য , সহমর্মিতা ও ঐক্যের ভিত্তি গড়ে তোলে । সুন্দরম: সৌন্দর্যের দীপ্তি ‘ সুন্দরম্’ হল সেই দীপ্তি , যা সত্য থেকে উৎসারিত হয়ে সকল ...

তেলের সামাজিক মাহাত্ম্য

তেল শব্দটি এসেছে তিল থেকে। তিল থেকে উৎপন্ন হওয়ায় এর নাম হয়েছে তৈল বা তেল। প্রাচীনকালে , বাংলাদেশে রান্নার তেল হিসেবে প্রধানত তিলের তেল ব্যবহৃত হত। পরবর্তীকালে , সরিষা , নারকেল প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন তেল রান্নার উপকরণ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে , তেলের ব্যবহার শুধু রান্নার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় ; এর প্রয়োগ অনেক বিস্তৃত । বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১) বলেন — ' তৈল নহিলে জগতের কোন কাজ সিদ্ধ হয় না। তৈল নহিলে কল চলে না , প্রদীপ জ্বলে না , ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয় না , চেহারা খোলে না। ' তেল কেবল ব্যবহারিক অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ নয় , এর রূপক অর্থও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরও বলেন — ' এক তেলে চাকা ঘোরে , আর-তেলে মন ফেরে। ' অর্থাৎ , পারস্পরিক সম্পর্ক মসৃণ রাখতে মানুষ ‘তেল’ ব্যবহার করে , যা এক ধরনের সামাজিক কৌশল বা ‘সামাজিক তেল’ বলে বিবেচিত হতে পারে । সংস্কৃত সাহিত্যে তেলের আরেক নাম ‘স্নেহ’। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেন — ‘ বাস্তবিকই স্নেহ ও তৈল একই পদার্থ। আমি তোমায় স্নেহ করি , তুমি আমায় স্নেহ কর , অর্থাৎ , আমরা পরস্পরকে তৈল দিয়া থাকি। স্নেহ ...

সমাপতন: রহস্যময় যোগসূত্র নাকি নিছক কাকতালীয়?

প্রতিদিন আমাদের চারপাশে অসংখ্য ঘটনা ঘটে। কিছু ঘটনা কার্যকারণ সূত্রে বাঁধা — একটি ঘটনার ফলস্বরূপ আরেকটি ঘটে। যেমন , বাতাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ সঞ্চিত হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের জল বাষ্পে পরিণত হয়। তবে কিছু ঘটনা এমনও ঘটে , যেগুলোর মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই , বরং তারা নিছক একসঙ্গে সংঘটিত হয়। এ ধরনের ঘটনাকে বলা হয় সমাপতন বা কাকতালীয় ঘটনা । আমাদের জীবনে প্রায়শই ঘটে যায় বিস্ময়কর কাকতালীয় ঘটনা। হয়তো কোনও ব্যক্তির কথা গভীরভাবে ভাবছেন , ঠিক তখনই পার্কে বা শপিং মলে তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল! এটি কি শুধুই কাকতালীয় , নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনও ব্যাখ্যা ? আবার ধরুন , হঠাৎ হাত থেকে পড়ে গেল কাচের গ্লাস , আর ঠিক সেই মুহূর্তে দূরে থাকা সন্তান বিপদে পড়ল। দুটি ঘটনা কি নিছকই সমাপতন , নাকি এর মধ্যে রয়েছে এক অদৃশ্য যোগসূত্র ? জুং-এর ‘সিনক্রোনিসিটি’ তত্ত্ব সুইস মনোবিদ ও মনঃসমীক্ষক কার্ল গুস্তাভ জুং (১৮৭৫–১৯৬১) মনে করতেন , আমাদের জীবনে এমন অনেক সমাপতন ঘটে , যার ব্যাখ্যা আমরা করতে পারি না। তবে এগুলো শুধুই আকস্মিক নয় , বরং এক ধরনের গভীর অর্থবহ সংযোগ রয়েছে। এ ধারণাকে তিনি ‘ সিনক্রোনিসিটি’ বা ‘ অর্থবহ সমাপতন’ ...

মেঘ বৃষ্টি তুষার

Image
জলকণা দিয়ে তৈরি হয় মেঘ । মেঘেরা দলে দলে আকাশতলে ভেসে চলে । চলার পথে কোথাও ঝরায় বৃষ্টি , কোথাও বা তুষার । ঈশ্বর যখন ধরিত্রীকে ‘ কলুষমুক্ত ’ করতে চান , শান্তিবারি দিয়ে আশীর্বাদ করতে চান , তখন মেঘ থেকে বর্ষিত হয় বৃষ্টি কিংবা তুষার । বৃষ্টিপাতের সময় মেঘ - নিংড়ানো জল নেমে আসে — ফোঁটায় ফোঁটায় । তুষারপাতের সময় মেঘ নিজেই নেমে আসে — ছোট ছোট টুকরোয় বিভক্ত হয়ে । ঝরে - পড়া মেঘের টুকরোকে বলা হয় স্নোফ্ল্যাক্স বা তুষারফলক — পাখির পালকের মতো হালকা , ষড়ভুজাকার তুষারকণা । বৃষ্টি পড়ে সশব্দে , ঝমঝমিয়ে । জলকলরবে মুখর বৃষ্টিপাত । তুষার নামে নিঃশব্দে , ধীরগতিতে । মৌনতায় মুখর তুষারপাত । তুষারপাতের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে ।   তুষার নিজে সুন্দর ,  যাকে আবৃত করে তাকেও সুন্দর করে ।   তুষারপাতের দৃশ্য অবলোকন মানুষকে নৈঃশব্দ্যের ভাষা অনুধাবনে অনুপ্রাণিত করে । নৈঃশব্দ্যের ভাষা বুঝতে না পারলে মানুষের মুক্তি হয় না । পারস্যের সুফি সাধক মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি বলেছেন — ‘Silence is the language of god, all else is poor translation.’ নৈঃশব্দ্য এমন একটি ভাষা , যে ভাষায় ঈশ্বর কথা বলেন , আর অন্য ...

রাসলীলা মাহাত্ম্য

Image
‘ আয় তবে সহচরী , হাতে হাতে ধরি ধরি , নাচিবি ঘিরি ঘিরি , গাহিবি গান ’ — এমনই এক আহ্বান ধ্বনিত হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুরে কোনও এক কার্তিকী পূর্ণিমায় , সহস্র বর্ষ আগে । মোহন বাঁশির ডাকে সারা দিয়ে গোপনারীরা ছুটে গিয়েছিলেন বৃন্দাবনের অরণ্যে । সেদিন বৃন্দাবনের সেই শারদ রাত , সেই মায়াবী চাঁদ , সেই জ্যোৎস্নাপ্লাবিত অরণ্য — সে সব কিছুই ছিল এক অলৌকিক মায়ায় আচ্ছন্ন , এক দিব্য আলোয় স্নাত । এমন পরিবেশে গোপী - পরিবেষ্টিত শ্রীকৃ ষ্ণ  শারদ-পূর্ণিমা - রাত্রির  স ম্মান রক্ষা করলেন । তিনি পূর্ণ চাঁদের অলৌকিক জ্যোৎস্নায় গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে প্রবৃত্ত হলেন । সেই সময় পীতাম্বর শ্রীকৃষ্ণ নিজের অনেকগুলো প্রতিরূপ সৃষ্টি করলেন । রাসমন্ডলে যতজন গোপী ছিলেন , শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে তত সংখ্যক করে , সেই গোপীদের প্রত্যেকের সঙ্গে নৃত্য করলে ন ।  কেউ ভাবতে পারলেন না, শ্রীকৃষ্ণ তার সঙ্গে নেই । রাসলীলায় এক কৃষ্ণ দেখা দিলেন বহু কৃষ্ণ রূপে । এই ব্যাপারটার একটা রূপক অর্থ আছে । আকাশে চাঁদ একটাই । কিন্তু বহু জলাশয়ে তা প্রতিবিম্বিত হতে পারে । তেমনই , ব্রহ্মান্ডে শ্রীকৃষ্ণ একজনই , কিন্তু তিনি প্রতিবিম্বিত...

কালী — কালের দেবী

Image
কার্তিক মাসের অমানিশি । অলৌকিক সুন্দর অন্ধকারে আচ্ছন্ন চরাচর । নৈঃশব্দ্যের সুরে বিভোর আকাশের নক্ষত্ররাজি । এমনি সময় অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত হয় জ্যোতির্ময়ী আলো । পৃথিবীর মানুষ ধ্যানমগ্ন হয় মুক্তকেশী ত্রিনয়নী দেবী কালীর সাধনায় । কিন্তু কে এই কালী? কী তাৎপর্য কালীসাধনার ? কালী এক রহস্যময়ী দেবী । তিনি অন্য দেবীদের নিরিখে একেবারেই স্বতন্ত্র । একদিকে খড়্গ, নরমুন্ড, রক্ত, অন্যদিকে বরাভয় । এইরকম বৈপরীত্যের সমাহার অন্য কোনও দেবীর বেলায় দেখা যায় না । কবিগুরুর একটি গানের কথায় কালী-রূপের এই বৈপরীত্য সুন্দরভাবে উঠে এসেছে — ‘ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ, দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ’ । কালী অনন্যা, অপরূপ রূপের অধিকারিণী । তাঁর মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি । তাঁকে দেখে দেখে আঁখি না ফিরে ।   কালী শব্দের উৎপত্তি ‘কাল’ থেকে । মহানির্বাণ তন্ত্রের চতুর্থ উল্লাসে আছে — যিনি কালকে কলন অর্থাৎ গ্রাস করেন তিনি কালী । কালী হচ্ছেন কালের অধিষ্ঠাত্রী দেবী । তিনি ‘ কাল ’ নিয়ন্ত্রণ করেন । সর্বজীবকে নিয়ন্ত্রণ করে যে কাল, সেই কালকে নিয়ন্ত্রণ করেন কালী । বস্ত...