রঙে রঙে বোনা
দৃষ্টিক্ষম মানুষের জন্য ঈশ্বরের সুন্দরতম উপহার হচ্ছে রং। জলে, স্থলে, আকাশে সর্বত্র রঙের প্রাচুর্য। চারপাশে যা-কিছু আমাদের চোখে পড়ে তা আসলে বিভিন্ন রঙের পোঁচ মাত্র। রং সব কিছুকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে। রংবিহীন সৌন্দর্য যেন আমাদের নয়, অন্য কোনও জগতের।
সেই
আদিম কাল থেকেই মানুষ প্রকৃতির রঙের পরিবেষ্টনে প্রতিপালিত হয়ে আসছে। তাই মানুষের জীবনে রঙের প্রভাব
অপরিসীম। রং এক ধরণের শক্তি যা মানুষের শরীর, মন, আবেগকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন, লাল রং দেহে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে, হৃদস্পন্দন দ্রুততর করে। নীল রং লালের বিপরীত — দেহে প্রশান্তি আনে, মনে
প্রেরণা সঞ্চার করে।
পাশ্চাত্যের বহু দেশে ‘কালার থেরাপি’ ব্যবহার করা হয় দেহ-মনের রোগ নিরাময়ে।
রঙের
মাধ্যমে মানুষ তার মনোভাব প্রকাশ করতে পারে। অনেক সময়, যে-কথা বাক্য দিয়ে প্রকাশ করা যায় না,
তা রং দিয়ে প্রকাশ করা যায়। চিত্রশিল্পীরা যেমনটা করে থাকেন
তাঁদের চিত্রকর্মে। রং
এক গভীর রহস্যজনক ভাষার নাম।
রং
মানুষের ‘নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন’-এর
ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এই ভাষায় কথা বলতে হলে রঙের অর্থ জানতে হয়। বলাবাহুল্য, রঙের
নিজস্ব কোনও অর্থ নেই। রঙের সব অর্থই অরোপিত। একই রঙের অর্থ বিভিন্ন সংস্কৃতি ও পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
পাশ্চাত্য
সংস্কৃতির আলোকে কিছু রঙের অর্থ এখানে উল্লেখ করা হল। কমলা রং — প্রফুল্লতা, উদ্যম, আশাবাদ। হলদে রং — মনোরম, অভিভূত, সুখী। নীল রং
— প্রশান্তি, আস্থা, বিষাদ। লাল রং
— উষ্ণতা, প্রেম, আসক্তি, সংকল্প। সবুজ রং — প্রকৃতি, সতেজতা, ভারসাম্যতা। সাদা রং — শুদ্ধতা, সরলতা, শান্তি। কালো রং — এলিগেন্স বা সুরুচিসম্পন্নতা, সমর্পণ, আত্মনিবেদন, রাত্রি, মৃত্যু। পরিস্থিতি ভেদে এক বা একাধিক রঙের সমাহারে সৃষ্টি হতে পারে বার্তা।
রং
মানুষের মনে সৃষ্টি করে উৎসবের আবহ। বিভিন্ন
সংস্কৃতিতে রং-উৎসব উদযাপন করা হয়। বাংলায় উদযাপন
করা হয় বসন্ত ও দোল — উভয়ই রঙের উৎসব। বসন্তে ফুলেরা রাঙিয়ে দেয় মানুষের মন। আর দোলযাত্রায় মানুষ আবির দিয়ে রাঙিয়ে দেয় একে
অপরকে। তাই বসন্তোৎসব ও
দোলোৎসব প্রকৃতপক্ষে বাঙালির রং-উৎসব।
রঙে রঙে বোনা প্রকৃতি ও মানুষের জীবন। শুধু বসন্তে নয়, সব ঋতুতেই চলে রঙের খেলা, চলে রঙের পালাবদল। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রঙের প্রাধান্য। মানুষের জীবনেও চলে একই খেলা। সারা জীবন মানুষ যা-কিছু করে তা ক্রেয়নে আঁকা ছবি ছাড়া আর কী! জীবন মানেই তো রংবেরঙের দৃশ্যের জন্ম দেওয়া আর স্মৃতির ক্যানভাসে তার ছবি এঁকে রাখা। ▣